টানা চতুর্থ মাস রপ্তানি বেড়েছে

রপ্তানি আয়
চট্টগ্রাম বন্দর। রাজীব রায়হান/স্টার ফাইল ফটো

দীর্ঘদিন ধরে নানামুখী চাপে আছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। তবে স্বস্তির খবর হলো বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বাড়ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) বলছে, চলতি বছরের নভেম্বরে টানা চতুর্থ মাসের মতো বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে। এছাড়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতির কারণে কার্যাদেশ বেড়েছে। পাশাপাশি এখন বড়দিনের মৌসুম চলছে, যা রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।

গতকাল প্রকাশিত ইপিবির তথ্যে দেখা গেছে, নভেম্বরের রপ্তানি বার্ষিক প্রায় ১৬ শতাংশ বেড়ে চার দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি স্বস্তির খবর, কারণ সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন ডলার সংকটসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বাংলাদেশে অর্থনীতি।

বাংলাদেশের বার্ষিক রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। নভেম্বরে এই খাতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ শতাংশ।

ইপিবির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ওভেন পোশাক রপ্তানি ২০ শতাংশ এবং নিটওয়্যার রপ্তানি ১২ দশমিক আট শতাংশ বেড়েছে।

এছাড়া নভেম্বরে হিমায়িত ও সাধারণ মাছ, কৃষিপণ্য এবং পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে। তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে।

ফলে ২০২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মোট রপ্তানি ১৯ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'রাজনৈতিক ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে যেসব পণ্য পাঠানো সম্ভব হয়নি, সেগুলো এখন পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি বৃদ্ধির পেছনে এটি অন্যতম একটি কারণ।'

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে।

এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। কিন্তু বারবার শ্রমিক অসন্তোষের কারণে শিল্প উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে সাভার ও আশুলিয়ার মতো শিল্প অঞ্চলে।

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রপ্তানিকারকরা নতুন কিছু কার্যাদেশ পেয়েছে। কিন্তু ক্রেতারা কম দাম দিচ্ছে।

তার ভাষ্য, 'মনে হচ্ছে তারা শ্রমিক অসন্তোষ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা ভাবছে আমরা সমস্যায় আছি।'

'প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বিশ্বনেতারা বিশেষ করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং কারখানায় গ্যাস সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় আমরা ভালো অবস্থায় আছি। গ্যাস সরবরাহ আরও বাড়লে আমাদের রপ্তানি আরও বাড়বে,' বলেন তিনি।

মোট রপ্তানির মধ্যে নিটওয়্যারের অংশ ৪৫ শতাংশ এবং এই খাত থেকে রপ্তানি আয় এসেছে আট দশমিক নয় বিলিয়ন ডলার, এরপর ওভেন খাতের অংশ ৩৬ শতাংশ এবং এই খাত থেকে রপ্তানি আয় এসেছে সাত দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, রপ্তানিতে পণ্য ও বাজার বৈচিত্র্যের প্রভাব পড়েছে।

তিনি বলেন, 'আমরা আরও দামি পণ্য উৎপাদন করছি। তবে এর অর্থ এই নয় যে, আমরা বেশি মার্জিন পাচ্ছি। আমরা অতিরিক্ত ছাড় ও মেকিং চার্জ পাই না। বর্তমানে অনেক কারখানা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম বা সমান দামে অর্ডার নিচ্ছে।'

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, তাকে একটি কার্যাদেশ প্রত্যাখ্যান করতে হয়েছে, কারণ এই অর্ডার নিলে বড় ধরনের লস করতে হতো।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সহ-সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের পর শিল্প-কারখানায় স্বাভাবিক হওয়ায় রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফিরে এসেছে।

জেনিস সুজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির খান বলেন, চামড়া খাতের প্রধান রপ্তানি পণ্য চামড়া জুতা রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়নি।

'এটা স্থায়ী কিছু নয়। কারণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার লাইসেন্স ও সার্টিফিকেশনের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দিলে চামড়ার জুতা রপ্তানি বাড়বে,' বলেন তিনি।

মেঘনা গ্রুপ অব কোম্পানিজের পরিচালক (অপারেশন) মো. লুৎফুল বারী বলেন, ক্রেতারা নতুন অর্ডার না দেওয়ায় বাইসাইকেল রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেনি।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh sees window of opportunity in Trump’s trade war

US President-elect Donald Trump’s trade policies towards China and Mexico could ultimately benefit Bangladesh, according to local apparel exporters.

9h ago