২০২৬-২৭ অর্থবছর

১১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন

১১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা
বৈশ্বিক ও স্থানীয় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ১১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

আন্তর্জাতিক ও দেশি অর্থনীতিতে অব্যাহত চ্যালেঞ্জের কারণে ২০২৬-২৭ অর্থবছরের মধ্যে রপ্তানি থেকে ১১০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

গত দুই দশকে দেশের রপ্তানি গড়ে বার্ষিক ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে বেড়েছে। অর্থাৎ, যদি ২০২৭ অর্থবছরের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হয় তবে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আরও বাড়াতে হবে।

সরকার ২০২৪-২৭ সালের রপ্তানি নীতিতে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় ও বিশ্বব্যাপী ক্রেতারা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে থাকায় সরকারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রপ্তানিকারক ও অর্থনীতিবিদরা।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষের আয়-ব্যয়কে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৫ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলারের সেবা রপ্তানি হয়েছে। এর সমন্বিত প্রবৃদ্ধি তিন দশমিক ৪২ শতাংশ।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক এম এ রাজ্জাক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চায় তবে প্রবৃদ্ধির হার বর্তমানের তুলনায় অনেক বেশি হতে হবে। তবে বৈশ্বিক ও স্থানীয় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তা কঠিন।'

তিনি পণ্য বহুমুখীকরণের অভাবের কথাও উল্লেখ করেছেন।

বাংলাদেশ রপ্তানি আয়ের জন্য পোশাক শিল্পের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে এই খাত থেকে।

তার মতে, 'সীমিত আমদানিনীতি রপ্তানিতেও প্রভাব ফেলবে।'

ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমানোয় রপ্তানিকারকদের কিছুটা হলেও সুবিধা হতে পারে। গত দুই বছরে টাকার দাম কমেছে প্রায় ৩৫ শতাংশ।

যখন একটি দেশের মুদ্রার দাম কমানো হয়, তখন রপ্তানি উত্সাহ পায় এবং বিশ্ব বাজারে সেই দেশের পণ্যগুলো আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠে।

'তারপরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সহজ নয়,' বলে মনে করেন এম এ রাজ্জাক।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০২৬-২৭ অর্থবছরের মধ্যে রপ্তানি সর্বোচ্চ ৮০ বিলিয়ন ডলার হতে পারে।'

তিনি গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট ও ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন।

রপ্তানিনীতিতে রপ্তানি আয়ের ওপর নগদ ভর্তুকির বিকল্প হিসেবে আর্থিক সহায়তার কথা বলা হয়েছে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুসারে, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় আসার পর বর্তমান অর্থ সহায়তা অব্যাহত রাখতে পারবে না বলে সরকার সরাসরি ভর্তুকি বন্ধ করছে।

আর্থিক সহায়তার অংশ হিসেবে ইপিবির সঙ্গে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল গঠনের প্রস্তাব করেছে সরকার। এর মাধ্যমে রপ্তানিকারকরা কম সুদে ও সহজ শর্তে মূলধন আকারে ঋণ পেতে পারবেন।

পণ্য উন্নয়ন ও রপ্তানিযোগ্য পণ্য বহুমুখীকরণে সরকার পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তাও দেবে।

বিদেশে গুদামজাতকরণ ও বিক্রয়কেন্দ্র তৈরিতে সহায়তা, আন্তর্জাতিক বাজারে বিপণনের জন্য দক্ষতা উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনে স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সরকার বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস বিলের ওপর পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ ছাড় দেবে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবহারের জন্য যৌক্তিক খরচ নির্ধারণের পাশাপাশি ডিজেল ও ফার্নেস তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটি দেওয়া যায় কিনা তা খতিয়ে দেখবে।

এ ছাড়া, লাইসেন্সিং ফি মওকুফ, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক ছাড় পাবেন রপ্তানিকারকরা।

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, রপ্তানি আয়ের ওপর দুই শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা সেবা খাতেও বাড়ানো হবে। রপ্তানিমুখী পণ্য বহনকারী স্থানীয় শিপিং প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য দুই শতাংশ নগদ প্রণোদনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
G7 statement on Israel Iran war

Sirens sounded after missiles launched from Iran, says Israeli army

Trump to decide within two weeks on possible military involvement

12h ago