‘সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে বেনামি ঋণ নেই’

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম সাদিকুল ইসলাম। ছবি: স্টার

আর্থিক সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক অন্যতম। তবে শরিয়াহভিত্তিক এই ব্যাংকটি সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে কোনো বেনামি ঋণ নেই বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির নতুন চেয়ারম্যান এম সাদিকুল ইসলাম।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকসহ ১০টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক এম সাদিকুল ইসলামকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ও নতুন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি অধ্যাপক এম সাদিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সব ঋণের হদিস মিলেছে। ধুঁকতে থাকা অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় এই ব্যাংক একটু ভালো অবস্থায় আছে। তবে আর্থিক সংকটে ভুগছে ব্যাংকটি। কয়েকটি শাখা আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না।'

এর জন্য ঋণ অনিয়মকে দায়ী করে তিনি আরও বলেন, 'আমাদের প্রাথমিক কাজ তারল্য ঘাটতি মোকাবিলা করা। ব্যাংকের শাখাগুলো আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না, এটি অগ্রহণযোগ্য। ব্যাংকের ইনভেস্টমেন্ট টু ডিপোজিট রেশিও (আইডিআর) শতভাগ ছাড়িয়ে গেলেও তারল্য সংকট ধীরে ধীরে কাটছে।'

গত ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির মোট আমানত ছিল ৩২ হাজার ২৭২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। মোট বিনিয়োগ ছিল ৩৭ হাজার ৫৩৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

বোর্ড চেয়ারম্যানের ভাষ্য, ব্যাংকটির বেশিরভাগ শেয়ার এস আলম গ্রুপের হাতে থাকলেও অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় এই শিল্পগোষ্ঠীর কাছে সোশ্যাল ইসলামীর ঋণ ছয় হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এটি তুলনামূলকভাবে কম। সিকদার গ্রুপে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকা। তা আদায়ের চেষ্টা চলছে।

এস আলম গ্রুপের কারখানাগুলো চালু থাকায় তাদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন অধ্যাপক এম সাদিকুল ইসলাম। গত অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংকটি গ্রাহকদের কাছ থেকে এক হাজার ৭৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করেছে। আরও টাকা আদায়ের জন্য বড় ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে, এই ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের বিরুদ্ধে মামলার পরিকল্পনা নেই।

তিনি আরও বলেন, 'অনেক সময় বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রি করেও ঋণ আদায় করা যায় না। ব্যবসা সচল রেখে ঋণ আদায় করতে হবে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চললে কর্মসংস্থান হবে। আমরাও টাকা ফেরত পাব।'

পুনর্গঠিত বোর্ডের দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হলো ব্যাংকে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। গত মাসে ব্যাংকটি এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রিত পুরোনো পরিচালনা পর্ষদের নিয়োগ দেওয়া ৫৭৯ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করে।

'ব্যাংকটিতে অতিরিক্ত কর্মী ছিল। প্রয়োজনের প্রায় দ্বিগুণ। আগের বোর্ড কোনো মানদণ্ড না মেনেই অনেককে নিয়োগ দিয়েছিল। এগুলো অবৈধ।'

তিনি ব্যাংকের পরিচালন খরচ কমানোর পাশাপাশি এর আর্থিক অবস্থার উন্নতির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৪০ শাখা-উপশাখায় তারল্য সংকট মোকাবিলায় নভেম্বরের শুরুতে আমানত সংগ্রহের জন্য প্রচারণা শুরু করে। 'ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে,' বলে দাবি করেন এম সাদিকুল ইসলাম।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১৮০ শাখা, ২৩৬ উপশাখা, ৩৭৪ এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট ও ২২৪ এটিএম বুথ আছে। আমানত বাড়ানো ও ঋণ পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ জোরদার করতে ব্যাংকের 'বিল্ডিং অ্যা স্ট্রংগার টুমরো' প্রচারাভিযানটি গত ৩ নভেম্বর শুরু হয়ে আগামী ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।

বিগত পর্ষদের আমলে ঋণের অনিয়ম নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এম সাদিকুল ইসলাম একক ঋণগ্রহীতার ঋণের সীমা লঙ্ঘন ও ইনভেস্টমেন্ট-টু-ডিপোজিট রেশিও অতিক্রম করার মতো অসঙ্গতি তুলে ধরে। তিনি বলেন, 'এলসি সংক্রান্ত বিদেশি পাওনা আছে। এখনই তা পরিশোধ করতে হবে। আমরা যদি বকেয়া ফেরত না দিই তাহলে ব্যাংকটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সোশ্যাল ইসলামীর চলতি হিসাবের ঘাটতি তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকা ছিল। এটি ব্যাংকের আকারের তুলনায় বেশি। ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় ঋণ অনিয়ম ও অসঙ্গতি প্রকাশ পেয়েছে।

এম সাদিকুল ইসলাম মূল্যস্ফীতির চাপকে বড় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, 'নীতি হার বাড়ানো ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিকল্প নেই। সুদের হার বাড়লে অভ্যন্তরীণ ঋণের চাহিদা কমে যায়। এটাই বাস্তবতা।'

তার মতে, 'অর্থনীতির গতি ধীর হয়ে গেলেও মন্দা নেই। প্রচুর টাকা ঋণ দেওয়ায় তা দ্রুত আদায়ের সম্ভাবনা কম। অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হতে কমপক্ষে দুই বছর লাগবে।'

গত কয়েক বছরে ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম ও কেলেঙ্কারির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'এগুলোর জন্য রাজনৈতিক প্রভাব দায়ী। খেলাপির প্রকৃত পরিমাণ প্রকাশিত প্রতিবেদনের তুলনায় অনেক বেশি।'

Comments

The Daily Star  | English
COP29 protest

COP29 negotiations: The deadlock over cardinal issues

Developing countries require about $6-8 trillion a year for climate action but some analysts view this as sleight of hand accounting.

30m ago