বিশ্বব্যাংক-এডিবির বাজেট সহায়তা

ডিসেম্বরে আসতে পারে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ

বাজেট সহায়তা
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশের জন্য এক দশমিক এক বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তার প্রস্তাব বোর্ডে জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

দেশে সংস্কার দ্রুত করতে ও রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে ঋণের বিষয়ে আলোচনা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

এসব প্রস্তাবের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ও এডিবির কাছ থেকে ৬০০ মিলিয়ন ডলার আশা করছে বাংলাদেশ।

ডিসেম্বরে এসব ঋণ প্রস্তাব সংস্থা দুইটির নিজ নিজ বোর্ডে তোলা হতে পারে।

এডিবির এই ঋণ স্ট্রেংদেনিং ইকোনমিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স প্রোগ্রামের আওতায় আসতে পারে।

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় আসার প্রস্তুতির জন্য প্রাথমিকভাবে এডিবি এই ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।

তবে অন্তর্বর্তী সরকার উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় আসা আরও কয়েক বছর পিছিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে বলে কয়েকদিন আগে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

গত ১১ নভেম্বর সালেহউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে আরও সময় লাগতে পারে।

তাই সরকারের সংস্কার উদ্যোগে সহায়তার জন্য এখন নতুন কর্মসূচির আওতায় এ ঋণ দিচ্ছে এডিবি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এই ঋণের আওতায় সরকারকে বেশকিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। শর্তগুলোর বেশিরভাগই বাজেট ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব বাড়ানো নিয়ে।

এর মধ্যে আরও আছে—সরকারকে কর পরিপালন জোরদারের পাশাপাশি মূলত অটোমেশনের মাধ্যমে ভ্যাট পদ্ধতি সংস্কার করতে হবে।

কর-বহির্ভূত রাজস্ব বাড়াতে বেশকিছু উদ্যোগ নিতে হবে।

অন্যান্য শর্তের মধ্যে আছে—বিদ্যমান ই-টিডিএস (ইলেকট্রনিক ট্যাক্স ডিডাকটেড অ্যাট সোর্স) পদ্ধতিকে আরও কার্যকর করা, নিয়মিতভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সেবা উন্নত করা।

সেকেন্ড গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট ক্রেডিট প্রোগ্রামের আওতায় বাজেট সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।

এই ঋণ তিন কিস্তিতে দেওয়া হচ্ছে। প্রথম কিস্তি গত বছরের মার্চ মাসে দেওয়া হয়েছে।

এই কর্মসূচিতে জলবায়ুসম্পর্কিত বেশ কয়েকটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। এর অনেকগুলো ইতোমধ্যে পূরণ করা হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য সংস্থা বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করে।

জলবায়ুর ঝুঁকি কমাতে বিশ্বব্যাংক শর্ত দিয়েছে। যেমন, জলবায়ুসম্পর্কিত ঝুঁকি মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো।

বিশ্বব্যাংকের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের জলবায়ু সংক্রান্ত বাজেট বরাদ্দ মোট জাতীয় বরাদ্দের মাত্র সাড়ে সাত শতাংশ।

এই বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি ঋণের শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশকে টাকার যথাযথভাবে খরচ ও এর দেখভাল নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষয় মূলত দুর্বল পরিবেশ সুশাসনের ফল।

এসব সমস্যা সমাধানে বিশ্বব্যাংক কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব কমানোর শর্ত দিয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও রিজার্ভ কমে যাওয়ায় অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে এবং ডলারের রিজার্ভ বাড়াতে বহু ও দ্বিপক্ষীয় সংস্থার কাছ থেকে বাজেট সহায়তা চায়।

সাধারণত উন্নয়ন সহযোগীরা প্রকল্পভিত্তিক ঋণ দেয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে ঋণ কিস্তি আকারে দেওয়া হয়।

বিপরীতে, বাজেট সহায়তা ঋণ কর্মসূচি-ভিত্তিক এবং শর্তসাপেক্ষ। ঋণ অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে তা বিতরণ করা হয়। এটি রিজার্ভ বাড়াতে সহায়তা করে।

আইএমএফের এশিয়া-প্রশান্ত বিভাগের উপ-পরিচালক টমাস হেলব্লিংয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেট সহায়তা চাওয়া সঠিক কিনা এবং অর্থনীতিতে এর প্রভাব কতটা হতে পারে।

গত ১ নভেম্বর টোকিওতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছিলেন, অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও পরবর্তী সংকট আমদানি বিল পরিশোধে বাধা সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেছিলেন, 'বাজেট সহায়তা কিছুটা স্বস্তি দেবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কারের সময় দেবে।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাজেট সহায়তা চাওয়ার সরকারি উদ্যোগকে সংস্থাগুলো ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে।'

চলতি অর্থবছরের আগামী মাসগুলোয় কয়েকটি উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে আরও বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে বলে আশা করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh garment exports face US tariff hike

Can Bangladesh retain its foothold in US market?

As Bangladesh races against a July 9 deadline to secure a lower tariff regime with the United States, the stakes could not be higher.

15h ago