বিশ্বব্যাংকের দেড় বিলিয়ন ডলার ঋণে প্রকল্প পুনর্বিন্যাস
সরকার বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এক ডজন ধীরগতির প্রকল্প চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে দেড় বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা বা অন্যান্য নীতিগত সংস্কার কর্মসূচিতে ব্যবহার করা হবে।
গতকাল সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, কোন প্রকল্প থেকে কত টাকা পুনর্বিন্যাস করা হবে তা শিগগির চূড়ান্ত হবে।
তিনি আরও জানান, তারা আশাবাদী যে আগামী নভেম্বরের শেষের দিকে নতুন প্রকল্পের জন্য পুনর্বিন্যাস করা অর্থ পাওয়া যাবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে অতিরিক্ত বাজেট সহায়তা চেয়েছে।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে যে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগে সহায়তার জন্য বাংলাদেশকে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার দেবে।
এর মধ্যে বিদ্যমান প্রকল্পগুলোর এক বিলিয়ন ডলার থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার পুনর্বিন্যাস করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর কয়েকটি গত এক দশকেও বাস্তবায়িত হয়নি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে জানান, তারা ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রকল্প চিহ্নিত করেছেন। সেগুলোর বেশিরভাগই পাঁচ বছরেরও বেশি সময় আগে শুরু হয়। আগামী দুই বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তিনি বলেন, 'এসব প্রকল্পের টাকা অন্য প্রকল্পে পুনর্বিন্যাস করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।'
তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলেন, চিহ্নিত প্রকল্পগুলো থেকে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার পুনর্বিন্যাস করা যেতে পারে। এই পরিমাণটি দেড় বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
অক্টোবরের শেষ দিকে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভার ফাঁকে বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার সময় সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত হবে বলে জানান তিনি।
বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিতে পারেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
দ্য ডেইলি স্টারের দেখা বিশ্বব্যাংকের নথি অনুসারে, যেসব প্রকল্প থেকে অর্থ পুনর্বিন্যাসের সম্ভাবনা আছে এর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল এন্টারপ্রেনারশিপ প্রোগ্রাম।
বিশ্বব্যাংক ২০২০ সালে এই প্রকল্পের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন দিয়েছে।
গত জুন পর্যন্ত ঋণের ৪৩২ মিলিয়ন ডলার অব্যবহৃত থাকলেও প্রকল্পের শেষ তারিখ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর।
এ ধরনের আরেকটি প্রকল্প হচ্ছে ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর ও রিজিওনাল এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রাম। এর জন্য সংস্থাটি ২০২০ সালে ৫০০ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন দেয়।
তবে এই ঋণের মাত্র ৫৮ মিলিয়ন ডলার এখন পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে।
২০১৩ সালে গৃহীত আরও অনেক প্রকল্প চলমান থাকলেও এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।
গত মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা বাংলাদেশ সরকারের সংস্কার উদ্যোগে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেন।
গত মাসে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকার জ্বালানি ও ব্যাংকিং খাত সংস্কারের জন্য বাজেট সহায়তা চেয়েছে।'
'নতুন ঋণটি প্রায় দুই দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার হবে। এতে এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পুনর্বিন্যাস করা ঋণ থাকবে। সামগ্রিক ঋণ হবে প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার।'
একটি পুনর্বিন্যাস করা ঋণের বিষয়ে রেইজার বলেছিলেন, 'এমন প্রকল্পও আছে যেখানে ভেবেছিলেন যে আপনি কিছু করতে চান—একটি নির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি করুন বা কিছু প্রযুক্তিগত সহায়তা দিন বা কোনো নির্দিষ্ট নীতি সংস্কারকে সমর্থন করুন, তবে অগ্রাধিকারগুলো বদলে গেছে। আপনি এমন প্রকল্পে ১০০ মিলিয়ন ডলার রেখে দিয়েছেন যা আর অগ্রাধিকার নয়।'
'আপনাকে যা করতে হবে তা হল চুক্তির পরিবর্তন। একবার চুক্তি পরিবর্তন করার পর আপনি অন্য প্রকল্পে সেই টাকা নিতে পারেন।'
রেইজার আরও বলেছিলেন, 'সব সরকারের সার্বভৌম অধিকার আছে ব্যাংক পুনর্গঠনের জন্য চুক্তি পরিবর্তনের কথা বলার।'
তিনি আরও বলেছিলেন যে, বিতরণ না করা নয় বিলিয়ন ডলারের পুরোটাই তারা পুনর্বিন্যাসের চেষ্টা করছেন না। কয়েকটি প্রকল্প এখনো যুক্তিযুক্ত। বিশ্বব্যাংক চায় সেগুলোর বাস্তবায়ন হোক।
Comments