ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে অনুমোদন ছাড়াই ১১৮ কোটি টাকা তুলেছেন ‘এস আলমের কর্মী’

বাংলাদেশ ব্যাংক, এস আলম গ্রুপ, ইউনিয়ন ব্যাংক,

কোনো অনুমোদন ছাড়াই ও ব্যাংকিং নিয়ম না মেনে 'এস আলম গ্রুপের এক কর্মী' ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ১১৮ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে উঠে এসেছে। সমালোচিত ব্যবসায়ী গ্রুপটি যে ব্যাংকটিকে যথেচ্ছা ব্যবহার করেছে এ ঘটনা তারই একটি উদাহরণ।

সম্প্রতি তদন্ত করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানতে পেরেছে, আগস্টে বোর্ড পুনর্গঠনের পরও ব্যাংক থেকে টাকা তোলা হয়েছে।

তদন্ত দল জানতে পেরেছে, চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গ্রুপ ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো কেলেঙ্কারি ও অনিয়মের মাধ্যমে ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ১৭ হাজার ২২৯ কোটি ১০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে। এই টাকা ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ৬৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের আর্থিক বিবরণী থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত মাসে এ তদন্ত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর আগে, চলতি বছরের ২৭ আগস্ট ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু বোর্ড পুনর্গঠনের পরও এস আলম গ্রুপ ও এর সুবিধাভোগীরা দুর্বল ব্যাংকটি থেকে টাকা তুলেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কোনো অনুমোদন ছাড়াই ব্যাংকটির পান্থপথ শাখা এক গ্রাহককে ১১৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে।

তদন্ত দল ঋণগ্রহীতার হিসাব খোলার ফরমে একটি মোবাইল ফোন নম্বর পেয়েছে। কিন্তু নম্বরটি বন্ধ ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঋণ পাওয়া গ্রাহক এস আলম গ্রুপের একজন কর্মী।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এস আলম গ্রুপের ২৪৭ জন সুবিধাভোগীকে ১১ হাজার ৪২৩ কোটি ১৩ লাখ টাকার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংক এবং বর্তমানে ব্যবসায়ী গ্রুপটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২২৯ কোটি ১০ লাখ টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানতে পেরেছে, ঋণের সুবিধাভোগীরা এস আলম গ্রুপের।

এতে আরও বলা হয়েছে, বিভিন্ন নামে ঋণ অনুমোদন ও সমালোচিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন হিসাবে অর্থ স্থানান্তরের সঙ্গে ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদ সরাসরি জড়িত ছিল।

ইউনিয়ন ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠনের আগে এস আলম পরিবারের অনেক সদস্য ব্যাংকটির পর্ষদে ছিলেন।

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বোন হালিমা বেগম, ভাই ওসমান গনি, মো. রাশেদুল আলম ও তার স্ত্রী মার্জিনা শারমিন এবং ভাগ্নে মোহাম্মদ মোস্তন বিল্লাহ আদিল বোর্ডে ছিলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানতে পারে, সাইফুল আলমের মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রিসিপ্ট (এমটিডিআর) গত ১১ আগস্ট ইউনিয়ন ব্যাংকের চট্টগ্রামের মুরাদপুর ও বন্দরটিলা শাখায় নগদায়ন করা হয়। তারপর টাকাগুলো খাতুনগঞ্জ শাখায় স্থানান্তর করা হয়। এমটিডিআর মূলত ইসলামী শরীয়তের মুদারাবা নীতির ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অর্থ জমা রাখার বিপরীতে মুনাফা দিয়ে থাকে।

গত ৩ ও ৯ সেপ্টেম্বর এস আলমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবিএম মোকাম্মেল হক চৌধুরী ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা তোলেন। অথচ তখন ইউনিয়ন ব্যাংকের গ্রাহকরা টাকা তুলতে পারছিলেন না।

এ বিষয়ে জানতে এবিএম মোকাম্মেল হক চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। তিনি বর্তমানে পলাতক আছেন বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত আগস্টে সাইফুল আলমের ভাই রাশেদুল আলম চট্টগ্রামের কদমতলী শাখা থেকে ৮ কোটি টাকা তুলে বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করেন। এছাড়া চট্টগ্রামের লিচুবাগান শাখা থেকে ৪ কোটি ২২ লাখ টাকা উত্তোলন করেন সাইফুল আলমের আত্মীয় আরশাদ মাহমুদ। এস আলম গ্রুপের একটি ট্রেডিং হাউজ খাতুনগঞ্জ ও আগ্রাবাদ শাখা থেকে ১২ কোটি ২৯ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইউনিয়ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে টাকা তুলতে ও স্থানান্তরে সহায়তা করেছেন।

এই বিষয়ে জানতে ইউনিয়ন ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি তাদের হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এখানে উল্লেখ্য, ইউনিয়ন ব্যাংক ২০১৩ সালে লাইসেন্স পায়।

Comments

The Daily Star  | English
lease land for vegetable farming in Bangladesh

Lease land, grow your own veggies, grains

It all began with a surprise addition to lunch -- long bean mash.

17h ago