বিদেশের যেসব স্টেডিয়ামের আন্তর্জাতিক অভিষেকের অংশ বাংলাদেশ

শ্রীমন্ত মাধবরাও সিন্ধিয়া ক্রিকেট স্টেডিয়াম, গোয়ালিয়র। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের বিপক্ষে আজ (রোববার) টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নামামাত্রই একটি ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবে বাংলাদেশ। গোয়ালিয়রের শ্রীমন্ত মাধবরাও সিন্ধিয়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ হবে এটি। দেশের বাইরে এর আগে আরও নয়টি স্টেডিয়ামের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অংশীদার বাংলাদেশ। সেটিও আবার আটটি ভিন্ন ভিন্ন দেশে!

প্রথমবার এমন কিছুর সাক্ষী টাইগাররা হতে পারে ১৯৯৯ সালে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন শহরে ক্যাসল অ্যাভিনিউয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ৭ উইকেটে হেরেছিল সেদিন আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন দল।

আইরিশদের পাশের দেশ স্কটল্যান্ডে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা হয়েছে এডিনবরার গ্র্যাঞ্জ ক্রিকেট ক্লাব গ্রাউন্ডে। এই স্টেডিয়ামের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচটিতে বাংলাদেশ খেলে ওই ১৯৯৯ বিশ্বকাপেই। স্কটিশদের বিপক্ষে ২২ রানে জিতে হাসিমুখে মাঠ ছেড়েছিলেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নু-ফারুক আহমেদরা। বিশ্বকাপের মঞ্চে সেটি ছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীদের প্রথম জয়।

মুলতান ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ছবি: এএফপি

দুটি ক্রিকেট মাঠই ছিল তখনকার দুটি সহযোগী দেশের। আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশের কোনো স্টেডিয়ামের আন্তর্জাতিক অভিষেকে বাংলাদেশের ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা হয় দুই বছর পর। ২০০১ সালে পাকিস্তানের মুলতান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হওয়া টেস্টে ইনিংস ও ২৬৪ রানে হেরেছিল টাইগাররা। ম্যাচটি রেকর্ড বইতে আরেকটি কারণে উল্লেখযোগ্য হয়ে আছে। টেস্টে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ড ছুঁয়েছিল পাকিস্তানিরা। সাঈদ আনোয়ার, তৌফিক ওমর, ইনজামাম উল হক, মোহাম্মদ ইউসুফ ও আব্দুল রাজ্জাক— এদের বদৌলতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দ্বিতীয়বারের মতো দেখেছিল এমন ঘটনা। এর আগে ১৯৫৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এক ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার পাঁচ ব্যাটার করেছিলেন শতক।

অস্ট্রেলিয়ারও দুটি ক্রিকেট মাঠের আন্তর্জাতিক অভিষেকের অংশ হতে পেরেছে বাংলাদেশ। নাম শুনতেই অবশ্য চেনার কথা না! ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম সফরে অখ্যাত দুটি স্টেডিয়ামেই আতিথেয়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ দল। ডারউইনের যে টিআইও স্টেডিয়ামে ইনিংস ও ১৩২ রানে হেরেছিল টাইগাররা, সেখানে এখন পর্যন্ত হয়েছে ছেলেদের ছয়টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। আরেকটি টেস্ট বাংলাদেশ খেলেছিল কেয়ার্নসের কাজালিস স্টেডিয়ামে। সেখানে জুটেছিল ইনিংস ও ৯৮ রানে হার। কেয়ার্নসে সবশেষ ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা হয়েছে। তবে এই মাঠে ছেলেদের ক্রিকেটের মোট ম্যাচের সংখ্যা সাতের ওপরে যায়নি এখনও।

অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে বাংলাদেশ আরেকটি প্রথমে নাম লিখিয়ে ফেলে ২০০৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে। দক্ষিণ আফ্রিকার পিটারমারিটজবার্গের সিটি ওভালের ম্যাচটি বিখ্যাত হয়ে আছে ভিন্ন কারণে যদিও। ইনিংসের প্রথম তিন বলেই তিন বাংলাদেশি ব্যাটারকে ফিরিয়ে শ্রীলঙ্কার চামিন্দা ভাস করেছিলেন হ্যাটট্রিক। তিনি ২৫ রানে ৬ উইকেট নেওয়ায় বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছিল ১২৪ রানে। এরপর সহজ লক্ষ্য ১০ উইকেটে তাড়া করে জিতেছিল লঙ্কানরা। একই স্টেডিয়ামে ভারত ও নামিবিয়ার মধ্যকার বিশ্বকাপের আরেকটি ম্যাচ হয়েছিল। এরপর ছেলেদের আর একটিও আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়নি সেখানে।

বাংলাদেশ অনেকগুলো স্টেডিয়ামের সূচনার সাক্ষী হয়েছে বটে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ স্টেডিয়াম বিখ্যাত হতে পারেনি এরপর। বিদেশের যে নয়টি স্টেডিয়ামের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ, তার মধ্যে মাত্র দুটিতে এখন পর্যন্ত ২০টির বেশি ছেলেদের ম্যাচ হয়েছে। একটি ডাবলিনের ক্যাসল অ্যাভিনিউ (৩১ ম্যাচ), আরেকটি নিউজিল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি ওভাল (২৩ ম্যাচ)। ডানেডিনের মাঠটি ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করেছিল টেস্ট দিয়ে। কিউইরা বাংলাদেশিদের হারিয়েছিল ৯ উইকেটে।

উইন্ডসর পার্ক, ডমিনিকা। ছবি: সংগৃহীত

বিদেশি স্টেডিয়ামের অভিষেক ম্যাচে নয়বার খেলে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র দুবার। সেই ১৯৯৯ সালে স্কটল্যান্ডের এডিনবরার পর আরেকটি জয় আসে ২০০৯ সালে ক্যারিবিয়ানে। ডমিনিকার উইন্ডসর পার্কের যাত্রা শুরুর দিনটি শুভ হয়েছিল বাংলাদেশের জন্য। সেদিন ওয়ানডেতে টাইগাররা ৫২ রানে হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।

এবারের আগে সবশেষ ভারতেরই একটি স্টেডিয়ামের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখার ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে দেরাদুনের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পথচলা শুরু হয়েছিল। সেখানে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে সাকিব আল হাসানের দল হেরেছিল ৪৫ রানে।

আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ডমিনিকা (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), ভারত— আট দেশের নয়টি স্টেডিয়ামের সঙ্গে আজ যুক্ত হবে শ্রীমন্ত মাধবরাও সিন্ধিয়া স্টেডিয়াম। শুধু কি গোয়ালিয়রের মাঠটির অভিষেকের অংশই হয়ে থাকবেন নাজমুল হোসেন শান্তরা? নাকি সুখস্মৃতিও সঙ্গী হবে তাদের?

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

3h ago