শেখ হাসিনার পতনের ২ মাস

আহত অনেকের সামনে অন্ধকার ভবিষ্যৎ

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি মোজাম্মেল হক। ছবি: স্টার

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের দুই মাসের মাথায় অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগে সুদিন আসার আশা জাগালেও ওই আন্দোলনে আহতদের দিন কাটছে অসহায়ত্বে আর দুশ্চিন্তায়।

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে গুরুতর আহতদের অনেকেই দৈনন্দিন কাজ করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছেন।

বিগত সরকারের রেখে যাওয়া অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আহতদের অনেকের পরিবারই এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তারা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, সরকারি সাহায্য না পেলে ভিক্ষা করা ছাড়া সামনে আর কোনো পথ নেই তাদের।

এখনো ঢাকার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন দুইশর বেশি আহত। তাদেরই একজন ২১ বছর বয়সী মোজাম্মেল হক। গত ১৮ জুলাই নরসিংদীতে পুলিশের শটগানের ছররা গুলিতে তার দুই চোখের আলো নিভে গেছে।

প্রথমে তাকে একটি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে ঢাকায় জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। গত ৬ আগস্ট থেকে এখানেই তার চিকিৎসা চলছে।

ছেলের দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে কাঁদতে শুরু করেন মোজাম্মেলের মা মরিয়ম বেগম।

'আমার ছেলে এখন অন্যের ওপর নির্ভরশীল। আমাদেরও বয়স হচ্ছে। জানি না আমরা না থাকলে মোজাম্মেল কীভাবে বাঁচবে।'

বিএ শেষ বর্ষের পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করেছিলেন নরসিংদী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মোজ্জাম্মেল। দুই চোখ হারিয়ে এখন তিনি কীভাবে পরীক্ষা দেবেন জানে না তার পরিবার।

মোজাম্মেলের মা বলেন, বিএ পাস করার পর ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার আশা ছিল। চাকরি পেলে ওর দিনমজুর বাবার ওপর থেকে চাপ কমত। খণ্ডকালীন যে চাকরি করত সেটাও বন্ধ। চোখের পলকে ওর সবকিছু পাল্টে গেল। সেই সঙ্গে ওর ভবিষ্যৎটাও শেষ হয়ে গেল।

তিনি বলেন, আমি আর ওর বাবা এখনো বিশ্বাস করতে পারি না আমাদের ছেলে এখন প্রায় দৃষ্টিহীন।

গত ৮ আগস্ট থেকে মোজাম্মেলের চিকিৎসার খরচ দিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এর আগেই প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। ঋণ করে সেই টাকাটা জোগাড় করতে হয় তাদেরকে।

আমার ছেলের ভালো চিকিৎসা হোক এটাই চাই। এমন অনেকের অবদানে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তারা সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা পাওয়ার যোগ্য। এখানে চিকিৎসা সম্ভব না হলে তাদের বিদেশে পাঠানো হোক।

মোজাম্মেল নিজেও দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, উন্নত চিকিৎসা পেলে তার চোখে আলো ফিরে আসতে পারে।

তিনি বলেন, আমি কোন ক্ষতিপূরণ চাই না। কোনো পুনর্বাসন চাই না। আমি আমার দৃষ্টি ফিরে পেলে নিজেই বাঁচার পথ খুঁজে নিতে পারব।

মোজাম্মেলের মতো আরও ৩৪ জন আন্দোলনকারী এই হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এদের অনেকেই এক চোখ হারিয়েছেন। কয়েকজন আছেন যাদের দুই চোখেরই আলো নিভে গেছে। কীভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন এই একটি প্রশ্নই এখন তাদের তাড়া করছে।

(সংক্ষেপিত অনুবাদ, বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে)

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh exports to EU

RMG exports to EU rise by 2.99% in Jan-Nov

In the 11 months, Bangladesh shipped garments worth $18.15 billion, second highest after China

1h ago