গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ঋণের ৮৬ শতাংশই নিয়েছে এস আলম

গত জুন পর্যন্ত গ্লোবাল ইসলামীর মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের ঋণ

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৮৬ শতাংশ ঋণ নিয়েছে এস আলম গ্রুপ ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো। চট্টগ্রাম ভিত্তিক এই বিজনেস জায়ান্টের হাতেই ছিল গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকসহ ছয়টি শরিয়াভিত্তিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ।

শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটির তথ্য অনুসারে, গত জুন পর্যন্ত গ্লোবাল ইসলামীর মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। যার ৮৬ দশমিক ৪৫ শতাংশই এস আলম ও এর সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো নিয়েছে।

২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে চট্টগ্রামে ব্যাংকের শাখা থেকে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৫০টিরও বেশি ট্রেডিং কোম্পানির মাধ্যমে এসব ঋণ নেওয়া হয়েছিল বলে ব্যাংকটির ঋণ শনাক্তকরণের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছে দ্য ডেইলি স্টার।

২০১৩ সালে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটি দ্রুত এস আলম গ্রুপের দখলে আসে, যার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। গত মাসে হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক এর বোর্ড পুনর্গঠন করে।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, ব্যাংকের ঋণের ৮৫ শতাংশই এস আলম ও এর সহযোগী কোম্পানিগুলো নিয়েছে।

স্বাধীন নিরীক্ষার পর এ বিষয়ে আরও তথ্য জানা যাবে।

তিনি জানান, ২০১৮ সালের পর এ গ্রুপ বা এর অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন কোনো ঋণ দেওয়া না হলেও আগের ঋণের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।

'আমরা তহবিল পুনরুদ্ধারের জন্য তাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।'

নূরুল আমিন বলেন, কাগজে কলমে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩২৭ কোটি ১২ লাখ টাকা, যা জুন পর্যন্ত মোট বকেয়া ঋণের ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। তবে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইন্সপেকশন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ব্যাংকটির ৮০ শতাংশের বেশি ঋণ চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে বিতরণ করা হয়েছে। বাংলদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বেশিরভাগ তহবিল চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখার মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান,

খাতুনগঞ্জ শাখা এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত আট ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানকে ১ হাজার ২৫০ কোটি ১৬ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে: গ্রিন এক্সপোজ ট্রেডার্সকে ১৫১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা; এপিক এবল ট্রেডার্সকে ১৬৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা; মোমেন্টাম বিজি সেন্টারকে ১৬০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা: মনির ট্রেড ইন্টারন্যাশনালকে ১৩৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা; মাসুম ট্রেডিং হাউজকে ১৬৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা; হোসেন ট্রেডার্সের ১৬১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা; ডোমিনিয়ন কার্পাকে ১৬৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা; চৌধুরী অ্যান্ড হোসেন ট্রেডকে ১৪৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

তবে ব্যাংকটি তার কার্যক্রমের কয়েক বছরের মধ্যেই অনিয়মে জর্জরিত হয়ে পড়ে। ২০১৫ সালে প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

অভিযোগ আছে এস আলমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী পিকে হালদার বিভিন্ন নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) থেকে কয়েকশ কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন।

প্রতিবেদনটি লেখার সময় ডেইলি স্টার এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।

যোগাযোগ করা হলে ব্যবসায়ী গ্রুপটির নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিক ডেইলি স্টারকে বলেন, তিনি ওই পদে নেই এবং এ জাতীয় তথ্যও তার কাছে নেই।

Comments

The Daily Star  | English

$800m repayment to Russia in limbo

About $809 million has piled up in a Bangladesh Bank escrow account to repay loans and interest for the Russia-funded Rooppur Nuclear Power Plant.

9h ago