চিনির দাম বাড়লেও বন্ধ ৬ কারখানা সংস্কারে অগ্রগতি নেই

চিনিকল
দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় চিনিকলের ভাগ্য এখনো অনিশ্চিত। এ দিকে, বাজারে চিনির দাম বেড়েই চলেছে।

সম্প্রতি অনিয়মের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে চিনিকলগুলোর চুক্তি বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত জুলাইয়ে সই করা চুক্তিটিতে চিনির উৎপাদন বাড়াতে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের বিষয়টি ছিল।

চিনিকলগুলো আবার চালুর জন্য ২০১৯ সালের চুক্তিতে দেশি-বিদেশি যৌথ বিনিয়োগের কথা বলা আছে।

থাইল্যান্ডের সুটেক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি, আরব আমিরাতের শারকারা ইন্টারন্যাশনাল ও জাপানের সজিটজ মেশিনারি করপোরেশনের সঙ্গে চিনি ও খাদ্য করপোরেশনের তেমন যোগাযোগ নেই বলে জানিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার কবির।

'তারা যদি সত্যিই বিনিয়োগে আগ্রহী হন, তাহলে এখনই সরকারের কাছে আসা উচিত' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

২০১৯ সালে দেশে আধুনিক, জ্বালানি সাশ্রয়ী আখ, মদ ও বিয়ার শিল্প স্থাপনে চিনি ও খাদ্য করপোরেশন এসব বিনিয়োগকারীর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে।

২০২০ সালে থাই সুটেক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের সার্বভৌম গ্যারান্টির আওতায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব করে।

তবে জিটুজি চুক্তির মাধ্যমে আপগ্রেড পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার।

জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন ও থাইল্যান্ডের এক্সিম ব্যাংক এই প্রকল্পে অর্থায়ন করবে বলে আশা করা হয়েছিল।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে পাবনা সুগার মিলস, রংপুরের শ্যামপুর সুগার মিলস, পঞ্চগড় সুগার মিলস, দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ সুগার মিলস, রংপুর সুগার মিলস ও কুষ্টিয়া সুগার মিলসে উৎপাদন বন্ধ করে দেয় সরকার।

চিনি ও খাদ্য করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, থাই ও জাপানি বিনিয়োগকারীদের নিয়ে বন্ধ চিনিকলগুলো উন্নয়নের পরিকল্পনা এগিয়ে নিলেও সরকারের প্রভাবশালীরা এস আলম গ্রুপকে ঠিকাদারি দিতে আগ্রহী।

সে অনুযায়ী সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে গত জুলাইয়ে চিনি ও খাদ্য করপোরেশন এবং এস আলমের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। অনিয়মের কারণে তা বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

চিনি ও খাদ্য করপোরেশনের সচিব আনোয়ার কবির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুটেকের প্রস্তাবটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। তা বন্ধ চিনিকলগুলোকে লাভজনক করতে পারে।'

তবে চিনি ও খাদ্য করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিগত সরকার চিনি শিল্পের উন্নয়নে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে কাজ করার পক্ষে ছিল। এ বিষয়ে চুক্তিও করেছিল।

আনোয়ার কবির আরও বলেন, 'যেহেতু আগের সরকার সার্বভৌম গ্যারান্টির বিষয়টি চূড়ান্ত করেনি, তাই অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে না।'

সার্বভৌম গ্যারান্টি ও জিটুজি ব্যবস্থা বিদেশি বিনিয়োগের সুবিধার্থে আলাদা প্রক্রিয়া। সার্বভৌম গ্যারান্টি বিদেশি বিনিয়োগকারীর কাছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ঋণ বা বাধ্যবাধকতার গ্যারান্টি দেওয়ার জন্য সরকারি অঙ্গীকার।

বিপরীতে, জিটুজি চুক্তি হচ্ছে ঋণ বা বিনিয়োগের জন্য দুই দেশের সরকারের মধ্যে সরাসরি চুক্তি। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী দেশের সরকার সরাসরি গ্রহীতা দেশের সরকারকে অর্থ দেয়।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের স্থানীয় প্রতিনিধি মো. এমদাদ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা বিনিয়োগে আগ্রহী। সরকার আগ্রহী হলে প্রক্রিয়াটি আবার শুরু করতে পারি।'

তিনি আরও বলেন, 'নতুন চুক্তির প্রয়োজন নেই। চিনি ও খাদ্য কর্পোরেশনের চিঠিই যথেষ্ট।'

তিনি জানান, বিনিয়োগকারীরা চিনিকলগুলোর অঞ্চলে উচ্চ ফলনশীল আখ চাষ করবেন। এর বাণিজ্যিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করবে।

প্রতিষ্ঠানগুলো পারফিউম ও ওষুধশিল্পে ব্যবহৃত উন্নতমানের অ্যালকোহল উৎপাদন করবে জানিয়ে এমদাদ হোসেন আরও বলেন, 'কলগুলোর উপজাত থেকে তাদের আয় বাড়বে।'

আখ চাষের সময়সহ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হতে প্রায় ২৮ মাস সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।

সুটেক মূল্যায়নের কথা উল্লেখ করে এমদাদ হোসেন বলেন, 'পরিশোধিত চিনির দাম পড়বে ৬০ টাকা কেজি। বর্তমান দাম ১৪০ টাকা কেজি।'

তারা প্রতি বছর আট লাখ টন লাল চিনি উৎপাদন করতে পারবেন। দেশে চাহিদা ২০ লাখ টনের বেশি।

প্রাথমিকভাবে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদিন ১৪ হাজার টন আখ প্রক্রিয়াজাত করার ক্ষমতাসম্পন্ন তিন চিনিকল আবার চালু করবে।

তারা রপ্তানির জন্য উপজাত হিসেবে এক্সট্রা নিউট্রাল অ্যালকোহল (ইএনএ) তৈরিতে উন্নত জাতের আখ চাষ করবে। সাধারণত তা গুড় থেকে পাওয়া যায়। এটি হুইস্কি, ভদকা, জিনের মতো অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় তৈরির প্রাথমিক কাঁচামাল।

Comments

The Daily Star  | English
explanations sought from banks for unusual USD rates

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

2h ago