সাগরে ৩ নম্বর সংকেত

অতি ভারী বৃষ্টিতে ভূমিধসের শঙ্কা, বাড়তে পারে সাঙ্গু-কর্ণফুলী-হালদার পানি

হালদা নদীর পানি বৃদ্ধিতে বুধবার বেড়িবাঁধের অন্তত ১৬ জায়গায় ভাঙন দেখা দেয়। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ও দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে উজানে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া সংস্থাগুলো।

এতে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ার পাশাপাশি চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আজ রোববার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে একটি লঘুচাপ তৈরি হয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে।

এই মেঘ ভেসে এসে চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে বৃষ্টি ঝরাবে। বৃষ্টির পরিমাণ বাড়াতে পারে সক্রিয় মৌসুমি বায়ু।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণপূর্বাঞ্চল ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এতে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার সাঙ্গু, মাতামুহুরী, কর্ণফুলী, হালদার ও অন্যান্য প্রধান নদীগুলোর পানি বেড়ে যেতে পারে।

দেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

একইসঙ্গে ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের নদীবন্দরগুলোকে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

পূর্বাভাস অনুসারে—খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে।

সেই সঙ্গে বয়ে যেতে পারে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া। বৃষ্টির সঙ্গে হতে পারে বজ্রপাত।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

পূর্বাভাস অনুসারে, দক্ষিণাঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা এক থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তবে দেশের অন্যান্য জায়গায় তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আরও জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী সংলগ্ন ত্রিপুরায় রাজ্যে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি হয়নি। সেখানেও নদ-নদীর পানি কমছে।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরপূর্বাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। যে কারণে ধারণা করা হচ্ছে, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীর পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।

আবহাওয়া সংস্থাগুলো আরও মনে করছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লার গোমতী নদীর পানির সমতল বাড়ার সম্ভাবনা নেই।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, লঘুচাপের প্রভাবে সৃষ্ট মেঘ পশ্চিমবঙ্গে অস্বাভাবিক ভারী বৃষ্টি ঝরাতে পারে।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের কালীনগর গ্রামের রেখামারী খাল সংলগ্ন বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গ্রামবাসী নিজেরা উদ্যোগী হয়ে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছেন।

আজ দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে দেলুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখনো বাঁধ মেরামত সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে জোয়ার শুরু হয়ে গেছে, পানি ঢুকছে। আজ আর কাজ করা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না।'

প্রসঙ্গত, বন্যা উপদ্রুত ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার জেলার ৭৩টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৪৫টি ইউনিয়ন। মারা গেছেন ১৮ জন এবং মৌলভীবাজারে দুইজন নিখোঁজ হয়েছেন। কুমিল্লায় চারজন, ফেনীতে একজন, চট্টগ্রামে পাঁচ, নোয়াখালীতে তিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক, লক্ষ্মীপুরে এক ও কক্সবাজারে তিনজন মারা গেছেন।

এসব জেলায় এখনো পানিবন্দি ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯টি পরিবার।

Comments