ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস প্রতিবেদন

‘শেখ হাসিনার পতনের পেছনে গ্যাং অব ফোর’

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা
শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগের পেছনে চারজনের একটি চক্র বা 'গ্যাং অব ফোর' দায়ী বলে দাবি করেছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। 

ওই নেতার বরাতে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে বলছে, চারজনের ওই চক্রটি শেখ হাসিনাকে দেশের বাস্তব অবস্থা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছে, যারা মনে করেন শেখ হাসিনার তাদের এমন পরিস্থিতিতে ফেলে চলে গেছেন যে, এখন তাদের জীবন বিপন্ন। বিক্ষুব্ধ জনতা এখন তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান টার্গেট করছে।

আওয়ামী লীগের এক নেতা ভারতীয় এই সংবাদপত্রকে বলেন, 'সেদিন বিকেল ৩টার দিকে (৫ আগস্ট) সেনাপ্রধান যখন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন এবং জনগণ টিভিতে তার বক্তব্য শুনছিল, আমরা ঠিক সে সময় বাড়ি থেকে বের হওয়ার সুযোগ পাই।'

'ধরা পড়লে পরিবারসহ আমাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হতো,' বলেন বিগত সরকারের এক মন্ত্রী।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, আওয়ামী লীগের কিছু নেতা জুলাই মাসে শিক্ষার্থীসহ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর জন্য অনুতপ্ত হন এবং পরে ৩-৪ আগস্ট দেশব্যাপী জনগণ যখন রাস্তায় নামে তখন তারাও যোগ দেন।

এক নেতা অভিযোগ করে জানান, শেখ হাসিনা তাদের কথা শোনা বন্ধ করে দিয়েছেন। এর পেছনে তিনি দলের ভেতরের  'দ্য গ্যাং অব ফোর' চক্রকে দায়ী করেন।

চক্রের সদস্য হিসেবে তিনি শেখ হাসিনার ছেলে ও আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম উল্লেখ করেন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি বলেন, 'এই "গ্যাং অব ফোর" তাকে (শেখ হাসিনাকে) পতনের দিকে নিয়ে গেছে। এই লোকেদের ওপর তার অন্ধ বিশ্বাস তৈরি হয়। এতে অতীতে তার যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল তা নষ্ট হয়েছে।'

চলতি বছরের জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নিতে না দেওয়াকে হাসিনার 'বড় ভুল' বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা।

সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি বলেছে, লন্ডনে নির্বাসিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন।

কিন্তু শেখ হাসিনা নির্বাচনের এক বছর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তারেকের সঙ্গে যোগাযোগের প্রস্তাবে সাড়া দেননি। ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনার জন্য তারেককে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, 'দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, পুলিশের নৃশংসতার কারণে জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল সেটা আমরা বুঝেছিলাম...এবং বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে পারলে সেই ক্ষোভ হয়ত কেটে যেত। এরপরও আমরা নির্বাচনে জয়ী হতাম, দল ক্ষমতায় থাকত।'

সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাইয়ের প্রথমদিকে বিক্ষোভ শুরু হলে আওয়ামী লীগ নেতারা চেষ্টা করেছিলেন শেখ হাসিনাকে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাতে। কিন্তু সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

এতে আরও বলা হয়, 'কফিনে শেষ পেরেকটি পড়ে, যখন গোয়েন্দা পুলিশ ছাত্র নেতাদের তুলে নেয় এবং তাদের ভয় দেখিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ছেড়ে দেয়।'

'কৌশলটি ব্যাকফায়ার করে এবং ছাত্ররা জনসমক্ষে বলে দেয় যে কীভাবে তাদের জোর করে আন্দোলন প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটার পর একটা ঘটনা ঘটে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে (শেখ হাসিনাকে) দেশ থেকে পালাতে হয়।'

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২৪ জন রাজনৈতিক নেতা, ৫ জন বিচারক, বেসামরিক প্রশাসনের ১৯ কর্মকর্তা এবং ২৮ পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ৬২৬ জনকে আশ্রয় দিয়েছে। সাবেক সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

যেসব আওয়ামী লীগ নেতা দ্য ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলেছেন, তারা মনে করেন যে, ৭৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠা হওয়া দলটি যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিল, অস্তিত্বের সংকট সত্ত্বেও তারা এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাখে।

তারা বলেন, 'এর জন্য শেখ হাসিনার উচিত এমন লোকদের সামনে নিয়ে আসা, যাদের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ আছে।' এক নেতার মতে, 'হয়ত দীর্ঘ সময় লাগবে। মানুষ এখনো বিক্ষুব্ধ। তাদের সময় দিতে হবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Managing expectations the challenge for EC

The EC was a rubber stamp to legalise AL's usurpation of power in last three elections

1h ago