রয়টার্সের প্রতিবেদন

সেনাবাহিনী বিক্ষোভ দমনে অস্বীকার করায় হাসিনার পতন

গণভবনের ফটক পরিষ্কার করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ছবি: রয়টার্স
গণভবনের ফটক পরিষ্কার করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ছবি: রয়টার্স

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগের রাতে সেনাবাহিনী প্রধান তার জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেন, কারফিউ বজায় রাখতে সেনাসদস্যরা সাধারণ জনগণের ওপর গুলি চালাবে না।

আজ বুধবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুই সদস্যের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

বৈঠকের পর সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান হাসিনার কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, সেনারা "লকডাউন" বা কারফিউ মানতে সাধারণ মানুষকে বাধ্য করতে পারবে না। এ বিষয়টি সম্পর্কে ব্রিফিং পেয়েছেন এমন এক ভারতীয় কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

ভারতের কর্মকর্তা জানান, বার্তাটি বেশ স্পষ্ট ছিল। শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর সমর্থন হারিয়েছেন।

শীর্ষ সামরিক নেতৃবৃন্দের এই অনলাইন বৈঠক ও হাসিনাকে দেওয়া বার্তার তথ্যগুলো এর আগে প্রকাশ পায়নি।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে, মূলত সেনাবাহিনীর সমর্থন হারানোর ফলেই সোমবার হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।

রোববার সারা দেশে ব্যাপক সংঘর্ষ ও সহিংসতায় অন্তত ৯১ জন নিহত ও হাজারো মানুষ আহত হন। জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরুর পর এটাই ছিল একদিনে সর্বোচ্চ নিহতের ঘটনা।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী রোববার সন্ধ্যার এই বৈঠকের বিষয়টি রয়টার্সকে নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির পর্যালোচনায় এটি সেনাবাহিনীর নিয়মিত বৈঠক ছিল।

তবে তিনি এ বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি।

সোমবার গণবিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যান শেখ হাসিনা।

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ছবি: সংগৃহীত

গত সপ্তাহের ঘটনাগুলো সম্পর্কে জানেন এমন ১০ ব্যক্তির সঙ্গে রয়টার্স কথা বলেছে। তাদের মধ্যে আছেন চার সেনা কর্মকর্তা ও অপর দুই সূত্র। তাদের বয়ান থেকে হাসিনার শাসনামলের শেষে ৪৮ ঘণ্টার কিছু অজানা তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। সূত্রদের অনেকেই এ বিষয়টির সংবেদনশীলতার বিচারে নাম না প্রকাশের শর্তে কথা বলেন।

সেনাপ্রধান হাসিনার ওপর থেকে সমর্থন সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি এখনো সরাসরি জনসম্মুখে প্রকাশ করেননি।

তবে সেনাবাহিনীর তিন সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, বিক্ষোভের স্বতঃস্ফূর্ততা ও অন্তত ২৪১ জনের মৃত্যু (রয়টার্সের হিসাব মতে) 'যে কোনো মূল্যে' শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার বিষয়টিকে অবাস্তব করে তোলে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ম. শাখাওয়াত হোসেন রয়টার্সকে বলেন, 'সেনাদের মাঝে অনেক অস্বস্তি কাজ করছিল। এ কারণে তারা সম্ভবত সেনাপ্রধানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। সেনারা পথে ছিল। তারা দেখেছে কী ঘটছে।'

সেনাপ্রধান শনিবার টাউন হল ভবনে হাজারো সেনার উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত সেনারা পরে জানান, সেনাপ্রধানের বক্তব্যে হাসিনার প্রতি সমর্থন প্রত্যাহারের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

এ বৈঠকের কিছু তথ্য পরবর্তীতে প্রকাশ করা হয়।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের বরাত দিয়ে বলেন, বৈঠকে তিনি ঘোষণা দেন, মানুষের জানমাল রক্ষা করতে হবে। সেনাদের ধৈর্য ধরতে হবে।

শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর জনসাধারণের সঙ্গে উৎসবে শামিল হন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ছবি: রয়টার্স
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর জনসাধারণের সঙ্গে উৎসবে শামিল হন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ছবি: রয়টার্স

এই বৈঠকেই প্রথমবারের মতো আভাস পাওয়া যায়, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী বলপ্রয়োগের মাধ্যমে বিক্ষোভ দমন করবে না। যার ফলে শেখ হাসিনা খানিকটা বেকায়দা পরিস্থিতিতে পড়ে যান।

সোমবার কারফিউ ভেঙে পথে নেমে আসেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ শাহেদুল আনাম খান। 

তিনি বলেন, 'আমাদেরকে সেনারা কোনো বাধা দেয়নি। সেনাবাহিনী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পালন করেছে।'

শাহেদুল আনাম খান বলেন, 'আমার ব্যক্তিগত অভিমত হল, তাকে (হাসিনা) নিরাপদে যেতে দেওয়া উচিৎ হয়নি। এটা বোকামি হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English
caretaker government proposal Bangladesh

Restoration of caretaker system to be proposed

The restoration of the caretaker government and the introduction of a bicameral system in parliament will be among the recommendations to be proposed by the Constitution Reform Commission.

4h ago