ভারত শেখ হাসিনাকে কেন আশ্রয় দেবে, কেন দেবে না

শেখ হাসিনা। ছবি: রয়টার্স

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন।

এখন প্রশ্ন হলো—অন্য কোনো দেশ যদি শেখ হাসিনাকে আশ্রয় নিতে না চায়, তাহলে ভারত কি তাকে আশ্রয়ে রাখবে? আর ভারত যদি শেষ পর্যন্ত তাকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলে, এর কারণগুলোও কী হতে পারে?

এম হুমায়ুন কবির। ছবি: সংগৃহীত

বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে কূটনীতিক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে। তিনি বলছেন, 'এখন ভারত যদি শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তার যুক্তি হিসেবে অনেকগুলো বিষয় আসতে পারে। উনি ৭৫ সালে যখন বিপদগ্রস্ত হয়েছিলেন, ভারত তাকে আশ্রয় দিয়েছিল। এবারও তিনি বিপদগ্রস্ত হয়ে সেখানে গেছেন। তাই এবারও তাকে আশ্রয় দিতে পারে তারা।

'দ্বিতীয়ত, গত ১৫ বছর ধরে তিনি ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে একটা নতুন মাত্রায়ও নিয়ে গেছেন তিনি। সেই প্রেক্ষাপটে তারা এই মুহূর্তে হয়তো মিত্র বা বন্ধু হিসেবে তাকে সাহায্য করতে পারে।'

শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার আরেকটি কারণ উল্লেখ করে হুমায়ুন কবির বলেন, 'ভারত যেহেতু নিজেদের এই অঞ্চলের একটা প্রধান শক্তি হিসেবে দাবি করে, সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনা যদি অন্য কোথাও না যেতে পারেন, তাকে ভারতেই থাকতে বাধ্য হতে হয়, তাহলে একটা উদাহরণ তৈরির জন্যই ভারত তাকে রেখে দিতে পারে। এক্ষেত্রে ভারতের বার্তাটা হবে—এই অঞ্চলে তাদের যে বন্ধুরা আছে, তারা যদি আশ্রয়চ্যুত হয় তাহলে ভারত তাদের আশ্রয় দিতে পারে।'

আবার শেখ হাসিনাকে ভারতে না রাখার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না সাবেক এই রাষ্ট্রদূত। তিনি বলছেন, 'ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিলে এর একটা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে বাংলাদেশে। কারণ ইতোমধ্যেই আমরা জানি যে গত তিনটা নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা নিয়ে নানান ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে ভারত বাংলাদেশের জনগণ বা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাইবে। কারণ আমরা নিকটতম প্রতিবেশী। আমাদের দীর্ঘ অভিন্ন সীমান্ত আছে। অভিন্ন স্বার্থ আছে। এমন অনেক বিষয় আছে যেখানে আমাদের যৌথভাবে কাজ করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে যদি শেখ হাসিনা ভারতে থাকেন, তাহলে তা দুই দেশের জন্যই একটা ইস্যু হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের জনগণও এটাকে কীভাবে দেখবে এই প্রশ্নটাও থাকবে। সে বিবেচনা থেকে হয়তো তারা এটা চাইতে পারে যে, তিনি ভারতে না থাকলেই ভালো।'

সুতরাং বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করেন হুমায়ুন কবির। বলেন, 'দুই দেশের সরকারের সঙ্গে যেমন সুসম্পর্ক প্রয়োজন, তেমন দুই দেশের জনগণের মধ্যেও একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। যেহেতু আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে, সেই প্রেক্ষাপটে ভারত যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, সেটা বাংলাদেশের প্রতি প্রতিবেশী হিসেবে শ্রদ্ধাশীল, দুই দেশের স্বার্থের অনুকূল এবং ভবিষ্যৎমুখী হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়।'

উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার যে তীব্র গণআন্দোলন হয়েছে, তার একটা অংশে ছিল ভারত-বিরোধিতাও। আন্তর্জাতিক পরিসরে ভারতকে দেখা হতো হাসিনা সরকারের সবচেয়ে বড় সমর্থক হিসেবে।

কারফিউ ও পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে গত সোমবার লাখো ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার গণভবন অভিমুখে যাত্রার প্রাক্কালে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। তিনি দিল্লির হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করেন। ধারণা করা হচ্ছে দিল্লিতে থেকেই তিনি হয়তো তৃতীয় কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে পারেন।

এক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য, বেলারুশ, ফিনল্যান্ড, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি দেশের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে কোন দেশে তিনি শেষ পর্যন্ত আশ্রয় পাচ্ছেন, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। অবশ্য দিল্লি বলে দিয়েছে, যত দিন প্রয়োজন, তাকে তারা রাখবে।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh foreign adviser visit to China 2025

Foreign adviser’s China tour: 10 extra years for repaying Chinese loans

Beijing has assured Dhaka it will look into the request to lower the interest rate to ease Bangladesh’s foreign debt repayment pressure

11h ago