৬ বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিপিসির বকেয়া ৫৩৩ মিলিয়ন ডলার

জ্বালানি তেল সরবরাহকারী ছয় বিদেশি প্রতিষ্ঠান বকেয়া অর্থের জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) চাপ দিচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া অর্থের পরিমাণ দিনকে দিন বাড়ছে।

বর্তমানে বিপিসির কাছে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা রয়েছে প্রায় ৫৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তিন মাসেও তাদের পেমেন্ট বুঝে পায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত ১ আগস্ট বিপিসির কাছে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা ছিল ৫০৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৪ আগস্ট বকেয়ার পরিমাণ আরও বেড়ে ৫৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়।

বিদেশি সরবরাহকারীদের চাপ সামাল দিতে বিপিসির শীর্ষ কর্মকর্তারা বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে ১৪ আগস্ট অনলাইনে ভার্চুয়াল সভা করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে বিপিসির পরিচালক (অর্থ) আবদুল মতিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত ফান্ড আছে। তবে ব্যাংকে ডলার সংকটের কারণে আমরা নির্ধারিত সময়ে পেমেন্ট দিতে পারছি না। বিদেশি সরবরাহকারীদের পেমেন্টে দ্রুত পরিশোধের জন্য চেষ্টা চলছে।

বকেয়া পেমেন্টের কারণে জ্বালানি তেল সরবরাহে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি বলেও জানান তিনি।

বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিপিসির সবচেয়ে বড় পাওনাদার। প্রতিষ্ঠাটি বিপিসির কাছে পাওনা রয়েছে ২০৯ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতিষ্ঠানটি তাদের পাওনা আদায়ের জন্য বিপিসির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।

এ ছাড়া বাকি পাওনাদার প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—মালয়েশিয়ার পেটকো ট্রেডিং লাবুয়ান কোম্পানি লিমিটেড (পিটিএলসিএল) প্রায় ২৩ মিলিয়ন ডলার, আরব আমিরাতের অ্যামিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (ইএনওসি) পাবে প্রায় ২৮ মিলিয়ন ডলার, ইন্দোনেশিয়ার পিটি ভূমি ছিয়াক পোছাকো (বিএসপি) পাবে প্রায় ৪৭ মিলিয়ন ডলার, ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেড (আইওসিএল) পাবে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন ডলার এবং ইউনিপেক সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড পাবে ৬০ মিলিয়ন ডলার।

এসব বিদেশি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গত এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত জ্বালানি তেলের ২৯টি চালান পাঠিয়েছে বাংলাদেশে।

সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান ভিটল এশিয়া ও এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি লিমিটেড চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বকেয়া পেমেন্ট আদায়ের জন্য (ফিন্যান্সিয়াল হল্ট) কার্গো খালাস বন্ধ রেখেছিল। পরে বিপিসির কর্মকর্তারা এই দুই প্রতিষ্ঠানের লোকাল এজেন্টের সঙ্গে কথা বললে ফিন্যান্সিয়াল হল্ট তুলে নেন তারা।

বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকে ডলার সংকটের কারণে বিদেশি সরবরাহকারীদের পেমেন্ট নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করা যাচ্ছে না।

ব্যাংকের নথিপত্র থেকে জানা যায়, সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান ভিটল এশিয়া থেকে অকটেন আমদানির জন্য সোনালী ব্যাংকে ২৪ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের এলসি খোলা হয় গত ১ এপ্রিল। এই এলসির পেমেন্ট দুই কিস্তিতে ২৮ এপ্রিলের মধ্যে পরিশোধের জন্য অঙ্গীকার করেছিল বিপিসি। কিন্তু গত জুন ও জুলাইয়ে ছয় কিস্তিতে ১১ দশমিক ০১ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধ করতে পেরেছে তারা। এখনো বিপিসির কাছে ১০টি চালানের বিপরীতে ভিটল এশিয়ার পাওনা রয়েছে ২০৯ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার।

একইভাবে বুমিসিয়াক পোসাকো জাপিন নামের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ডিজেল ও অকটেন আমদানির জন্য ২৮ মে সোনালী ব্যাংকে দুইটি এলসি খোলা হয় ২৬ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ও ২১ দশমিক ৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। এক মাসের মধ্যে এই এলসির পেমেন্ট করার কথা থাকলেও বিপিসি পরিশোধ করতে পেরেছে এক মিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।

এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি লিমিটেড থেকে ২৮ মে ডিজেল আমদানির জন্য প্রায় ২৭ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আরও একটি এলসি খোলা হয় সোনালী ব্যাংকে।

বিদেশি এই প্রতিষ্ঠানটির লোকাল এজেন্ট অফিসের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, উল্লেখিত পেমেন্টটি এখনো পরিশোধ করেনি বিপিসি কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে আমরা একাধিকবার বিপিসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।

Comments

The Daily Star  | English

‘No room for politics under AL name, ideology’

Nahid Islam, adviser to the interim government, spoke with The Daily Star on the nation's key challenges and the way forward.

14h ago