স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু হওয়ায় কমতে পারে জ্বালানি তেলের দাম

তেলের দাম
স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু হওয়ায় দেশে সব ধরনের পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম কমার সম্ভাবনা আছে। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

চলতি মাসেই আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের নতুন পদ্ধতি সরকার বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। জ্বালানি ও অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা মনে করছেন, প্রথমবারের সমন্বয়ের পর জ্বালানি তেলের দাম কমতে পারে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) যেকোনো দিন নতুন দাম ঘোষণা করতে পারে।

গতকাল রোববার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা আশা করছি সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমবে।'

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে সরকার গত ২৯ ফেব্রুয়ারি স্বয়ংক্রিয় জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি ঘোষণা করে।

এই ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে স্থানীয় বাজারেও বাড়বে। আন্তর্জাতিক বাজারে কমলে স্থানীয় বাজারেও কমবে। নতুন পদ্ধতিতে যেদিন জ্বালানি তেলের নতুন দাম ঘোষণা হবে, তার আগের মাসে 'প্ল্যাটস' এ প্রকাশিত গড় দামকে ভিত্তি-মূল্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হবে।

এ ছাড়াও জাহাজ ভাড়া, পরিষেবার খরচ, বিমা, শুল্ক, ভ্যাট, কমিশন, জেটির খরচ, এলসি কমিশন, পরিবহনে লোকসান, প্রক্রিয়াজাতের খরচ ও বিপিসির লাভ এতে বিবেচনা করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ নিয়ে বিপিসির কমিটি কাজ করছে। তারাই নতুন দাম ঠিক করবে। গেজেটের মাধ্যমে দাম জানানো হবে।'

প্রথম মাসে দাম কিছুটা কমতে পারে বলে জানান তিনি।

২০২২ সালে যখন সর্বশেষ দাম ঘোষণা করা হয় তখন প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম ছিল ১২৫ থেকে ১৩০ ডলার। এখন তা ৯৫ থেকে ৯৭ ডলার।

তবে তিনি মনে করেন, 'ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের আগস্টে ডলারের দাম ছিল প্রায় ৯৫ টাকা। এখন তা ১১০ টাকা।'

বিদ্যুৎ বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে—ডিজেলের সঙ্গে অকটেন, পেট্রোল ও কেরোসিন দামের পার্থক্য বর্তমানে ২১ টাকার বেশি হলেও নতুন ব্যবস্থায় এই ব্যবধান ১০ টাকায় নেমে আসবে।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৭০ লাখ টন পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদা আছে। অপর্যাপ্ত পরিশোধন সুবিধার কারণে এর ৮০ শতাংশ পরিশোধিত আকারে আমদানি করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা নতুন প্রক্রিয়ার প্রশংসা করে বলেছেন—এটি এই খাতে স্বচ্ছতা আনবে। তবে কিছু ফাঁকফোকরের কথাও তারা বলেন।

গতকাল বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতি মাসে দাম ঘোষণার আগে বিপিসিকে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে কিনা তা স্পষ্ট করা উচিত। যদি তা দরকার হয়, তাহলে প্রক্রিয়াটি ধীর হবে। তেলের দাম সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে।'

তার প্রশ্ন—'ফর্মুলাতে উন্নয়ন খাতের জন্য আলাদা খাত রাখা হয়েছে, যার মাধ্যমে বিপিসি তার নিজের লাভের বাইরেও ভোক্তাদের থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করবে। এটি কেন প্রয়োজন?'

'এই প্রক্রিয়া থেকে অগ্রিম আয়কর বাদ দেওয়া উচিত' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'অগ্রিম কর পরে সমন্বয় করা হয়। এটি সমন্বয় করা হলে বিপিসি কি গ্রাহকদের পাওনা ফিরিয়ে দেবে?'

'জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণে সরকারকে হস্তক্ষেপের অনুমতি দেওয়ার বিধান নীতিমালায় আছে। যেমন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে সরকার দাম সমন্বয় করতে পারবে,' যোগ করেন তিনি।

'দামের খসড়া প্রস্তাবটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে' উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, 'এটি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলে সব ধরনের পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম কমাতে পারব বলে আশা করছি।'

তিনি জানান, ভারতে ডিজেলের দাম বাংলাদেশের হিসাবে ১৩৩ টাকা। দেশে ডিজেলের দাম ১০৯ টাকা।

'এ নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। প্রতিবেশী দেশের তুলনায় কম দাম হলে চোরাচালানের আশঙ্কা থাকে' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

'আমরা যদি দাম কমাতে পারি তাহলে চমৎকার হবে। পরিবহন খরচসহ সব খরচ কমবে। ব্যবসায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাবে,' যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

6h ago