চট্টগ্রামে জাহাজে বিস্ফোরণ অতিরিক্ত দাহ্য গ্যাসের কারণে: তদন্ত প্রতিবেদন

চট্টগ্রাম বন্দরে গতকাল তেলবাহী জাহাজ বাংলার জ্যোতিতে আগুন ধরে ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন নিহত হন। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

চট্টগ্রাম বন্দরে গতকাল নোঙর করা তেলবাহী জাহাজে অতিরিক্ত দাহ্য গ্যাস জমা হওয়ায় আগুন ধরে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে একটি তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তদন্ত কমিটি আজ মঙ্গলবার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

গতকাল বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের তেলবাহী জাহাজ 'বাংলার জ্যোতি'তে বিস্ফোরণে ৩ জন নিহত হন।

এ ঘটনায় বিপিসির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, জাহাজটির ফোর পিক সেকশনে অতিরিক্ত দাহ্য গ্যাস জমা হওয়ায় আগুনের সূত্রপাত। আর এই আগুন থেকে বিস্ফোরণ।

দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ থেকে এখনো অপরিশোধিত জ্বালানি তেল খালাস করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় আমদানিকৃত এই তেল নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিপিসি।

জানা গেছে, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শরিফ হাসনাতের নেতৃত্বে গঠিত বিপিসির তদন্ত কমিটিকে বেধে দেওয়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার সকালে জেটিতে নোঙর করার পর জাহাজটি থেকে ক্রুড অয়েল খালাসের কাজ শুরু হয়। প্রায় ৮০০ মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল খালাসের পর জাহাজটির ফোর পিক সেকশনে, যেখানে রশি, নোঙর, স্পেয়ার পার্টস রাখা হয় সেখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

সেখানে ডেক ক্যাডেট সৌরভ কুমার সাহা, বিএসসির ফোরম্যান নুরুল ইসলাম ও শ্রমিক মো. হারুন কাজ করছিলেন সে সময়। তারা তিনজনই বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে শিপিং করপোরেশন নিশ্চিত করেছে।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মো. শরিফ হাসনাতের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। যেহেতু সময় কম ছিল, তাই প্রতিবেদন সংক্ষিপ্ত হয়েছে। এতে কিছু সুপারিশ ও পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছি আমরা।'

জানতে চাইলে বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিবেদন পেয়েছি। জ্বালানি তেলের কোনো ক্ষতি হয়নি। পরবর্তী ব্যবস্থার জন্য বিএসসির টেকনিক্যাল কমিটির প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'বিএসসি কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে জাহাজ থেকে তেল খালাসের কাজ শুরু করার জন্য।'

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুর্ঘটনাকবলিত বাংলার জ্যোতি জাহাজের সব বৈদ্যুতিক তার বিচ্ছিন্ন করে, ঝুঁকি কমিয়ে তারপর জ্বালানি তেল খালাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।'

ওই দুর্ঘটনার জন্য বহির্নোঙ্গর থেকে জ্বালানি তেল খালাস যেন বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য বুধবার বিপিসি ও বিএসসির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক মিটিং হওয়ার কথা।

তদন্ত কমিটির চার সুপারিশ

বিপিসির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা চারটি সুপারিশ হলো, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও বিদ্যমান লাইটার জাহাজ দুটির ব্যবহারের উপযুক্ততা নির্ধারণের লক্ষ্যে একটি কারিগরি কমিটি গঠনের জন্য বিএসসিকে অনুরোধ করা যেতে পারে। 

বিএসসির লাইটার জাহাজ 'বাংলার জ্যোতি' এবং 'বাংলার সৌরভ' ব্যবহার করে ক্রুড অয়েল লাইটারিং কার্যক্রম পরিচালনা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আমদানি করা ক্রুড অয়েল খালাসের জন্য সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন অবিলম্বে চালু করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণে ঠিকাদার নিয়োগ দ্রুত করা গেলে নিরাপদে ক্রুড অয়েল খালাস করা সম্ভব হবে। 

এসপিএমের মাধ্যমে জ্বালানি তেল খালাস কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত 'বাংলার জ্যোতি' জাহাজকে কার্যকরভাবে ব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব হবে কিনা, বা সম্ভাব্য বিকল্পের বিষয়ে বিএসসির মতামত নেওয়া যেতে পারে। 

জেটিতে থাকা অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা আরও আধুনিকায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Consensus Commission’s first meeting with political parties begins

The meeting of the national consensus-building commission is being chaired by Chief Adviser Prof Muhammad Yunus

1h ago