কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলি গণহত্যাবিরোধী বিক্ষোভে বাধা দেওয়া প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নেমাত মিনোশে শফিক। ফাইল ছবি: এএফপি
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নেমাত মিনোশে শফিক। ফাইল ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নেমাত মিনোশে শফিক পদত্যাগ করেছেন। এ বছর ইসরায়েলি গণহত্যাবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের দমনে এই আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে এনে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

নতুন সেমিস্টার শুরুর কয়েক সপ্তাহ আগে পদত্যাগ করলেন তিনি। প্রায় এক বছর এই পদে ছিলেন শফিক। 

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর নজর রাখছে পুলিশ। ফাইল ছবি: রয়টার্স
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর নজর রাখছে পুলিশ। ফাইল ছবি: রয়টার্স

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে বুধবার সন্ধ্যায় ইমেলের মাধ্যমে তার সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানান। ইমেলে তিনি বলেন, 'দু:খের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট থেকে আমার পদত্যাগ কার্যকর হবে।'

তিনি দাবি করেন, তার পদে তিনি সাফল্য অর্জন করেছেন। তবে তিনি উল্লেখ করেন, তার মেয়াদ চলাকালীন সময়টি 'গোলযোগপূর্ণ ছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল সম্প্রদায়ের ভিন্ন ভিন্ন চিন্তাধারার মাঝে সমন্বয়য় ঘটানো খুব ঝামেলাপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।'

তিনি বলেন, 'এ সময়টি আমার পরিবার ও এ সম্প্রদায়ের অন্যান্য সদস্যদের জন্য বেশ কঠিন ছিল। গত গ্রীষ্মে আমি ভালো করে ভেবে দেখেছি, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামীদিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমার সরে দাঁড়ানোই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হবে।'

যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীবিক্ষোভের অন্যতম কেন্দ্র ছিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের কিছু অংশ দখল করে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

বিক্ষোভকারীদের হটাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকেন শফিক। তার এ পদক্ষেপের নিন্দা জানায় বিক্ষোভকারীরা। অন্যদিকে বিক্ষোভ দমনে ব্যর্থ হওয়ায় তার সমালোচনা করেন ইসরায়েলের সমর্থকরা।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স

এপ্রিলে গাজা নিয়ে ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঘটনা নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে শুনানি হয়। শুনানিতে শফিকসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানদের সমালোচনা করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভকে ঘিরে শফিকের পাশাপাশি আট আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটিতেই প্রেসিডেন্টরা পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। ইতোমধ্যে পেনসিলভ্যানিয়া, হারভার্ড ও কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টরাও পদত্যাগ করেছেন।

নিউইয়র্কে রিপাবলিকান পার্টির প্রতিনিধি এলিস স্তেফানিক দাবি করেছেন, কলাম্বিয়ার ক্যাম্পাসে 'ইহুদিবিদ্বেষ' থামাতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন শফিক।

তার পদত্যাগের সংবাদে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক্সে পোস্ট করেন স্তেফানিক। তিনি বলেন, 'ইহুদি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হন তিনি। এরপর হামাসপন্থি জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। অনেক আগেই তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা উচিৎ ছিল।'

৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালায় হামাস। এই হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৫০ জন। সেদিনই গাজায় নির্বিচার ও প্রতিশোধমূলক হামলা শুরু করে ইসরায়েল, যা আজও অব্যাহত রয়েছে। গত ১০ মাসে নিহতের সংখ্যা ৪০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। আহত হয়েছেন ৯০ হাজারেরও বেশি মানুষ। হতাহতের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে কলাম্বিয়ার শিক্ষার্থীরা সোচ্চার হয়ে ওঠে। দাবি জানায়, ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের যোগসূত্র ছিন্ন করতে হবে।

শফিক মিসরীয় বংশোদ্ভূত অর্থনীতিবিদ। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে তার। আগে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

২০২৩ সালের জুলাইয়ে তিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০তম প্রেসিডেন্ট হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে যুক্তরাজ্যে সরকারি চাকরিতে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন শফিক।

Comments

The Daily Star  | English

Doubts growing about interim govt’s capability to govern: Tarique

"If we observe recent developments, doubts are gradually growing among various sections of people and professionals for various reasons about the interim government's ability to carry out its duties."

1h ago