১৮ দিনের বিক্ষোভে ৪৭ ক্যাম্পাসে ৬১ সহিংসতার ঘটনা, গ্রেপ্তার অন্তত ২৪০০

পোর্টল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স
পোর্টল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭ বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। গত ১৭ এপ্রিল থেকে চলছে এই বিক্ষোভ। শান্তিপূর্ণ এই বিক্ষোভ দমনে শুরু থেকেই পুলিশ অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে এসেছে।

গতকাল ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। 

আজ রোববার মার্কিন বার্তাসংস্থা এপি এই তথ্য জানিয়েছে।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর নজর রাখছে পুলিশ। ফাইল ছবি: রয়টার্স
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর নজর রাখছে পুলিশ। ফাইল ছবি: রয়টার্স

এপি জানিয়েছে, ১৮ এপ্রিল থেকে শুরু করে এই বিক্ষোভকে ঘিরে অন্তত ৬১টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ৪৭টি ক্যাম্পাস থেকে দুই হাজার ৪০০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এপি এই হিসাব তৈরি করেছে।

ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে অস্থায়ী তাঁবু সরিয়ে নিতে অস্বীকার করেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ বল প্রয়োগ করে তাঁবু সরানোর চেষ্টা চালালে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের জেরে ২৫ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অপর দিকে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা যুদ্ধবিরোধী স্লোগান দেন এবং পতাকা উঁচিয়ে প্রতিবাদ জানান।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স

ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্কুলের প্রার্থনাস্থলের বাইরের প্রাঙ্গণে গত মঙ্গলবার থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। শনিবার স্থানীয় টিভি চ্যানেল ডব্লিউভিএডব্লিউ-টিভির ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ভারী অস্ত্র-বর্মের সজ্জিত দাঙ্গা পুলিশ ঢাল হাতে নিয়ে শার্লটভিলে অবস্থিত ক্যাম্পাসের সামনে সারিবদ্ধ হয়ে অবস্থান নিয়েছে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা 'ফিলিস্তিন মুক্ত কর' বলে স্লোগান দিতে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ তাদের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে 'বেআইনি সমাবেশের' আয়োজন করা হয়েছে।

পুলিশ এগিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে তারপর ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। এ সময় তাদের ওপর রাসায়নিক উপকরণ সমৃদ্ধ স্প্রে ছিটানো হয়। ইংরেজি ও আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক লরা গোল্ডব্ল্যাট ওয়াশিংটন পোস্টকে এই তথ্য জানান। তিনি বিক্ষোভকারীদের সহায়তা করছেন।

লরা বলেন, 'বিক্ষোভের শুরু থেকে আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম। এ মুহূর্তে তারা নিরাপদে নেই।'

পোর্টল্যান্ড স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স
পোর্টল্যান্ড স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের তাঁবু ও অন্যান্য অস্থায়ী স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল, কারণ এ ধরনের স্থাপনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালার বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলা জানায় কর্তৃপক্ষ। 

ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিংসতা এই বিক্ষোভের সর্বশেষ ঘটনা। 

ইতোমধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী তাঁবু ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

ইউসিএলএ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স
ইউসিএলএ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স

এই সপ্তাহান্তে মিশিগানের পাশাপাশি ইন্ডিয়ানা, ওহাইও স্টেট ও বোস্টনের নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভে সহিংসতার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান বিশ্লেষকরা। আগামী দিনগুলোতে এই তালিকা আরও দীর্ঘ হতে পারে বলেও তারা মত দেন।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ১৬০ জন নিহত হন। হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৫০ জন।

এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে সেদিনই গাজার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ও নির্বিচার বিমানহামলা শুরু করে ইসরায়েল। পরবর্তীতে স্থলবাহিনীও এতে যোগ দেয়। এই আগ্রাসনে গত ৭ মাসে অন্তত ৩৪ হাজার ৬২২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

ইসরায়েলের এই নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে এবং অন্যান্য দেশেরও বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Tax-free income limit may rise to Tk 3.75 lakh

The government is planning a series of measures in the upcoming national budget to alleviate the tax pressure on individuals and businesses, including raising the tax-free income threshold and relaxing certain compliance requirements.

11h ago