টানা ১২ বছর কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে ব্যর্থ এনবিআর

কর
অলঙ্করণ: স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

টানা ১২ বছরেরও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর আদায়ের বিদ্যমান কাঠামো যথেষ্ট কার্যকর নয়।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এনবিআরের মোট রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে তিন লাখ ৮২ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। এটি সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২৭ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা কম।

অর্থবছরের শুরুতে সরকার চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা কর আদায়ের লক্ষ্য নিলেও শেষ পর্যন্ত ২০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে আনে।

সাময়িক তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বিপরীতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদায়ে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেও কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে এনবিআর।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও এনবিআরকে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দিয়েছে সরকার।

নতুন লক্ষ্যমাত্রাটি অতিমাত্রায় 'উচ্চাভিলাষী' কারণ এটি গত অর্থবছরের কর আদায়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি।

এটিও আগের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। কর আদায়ে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি গত পাঁচ বছর ধরে গড়ে ১১ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কর প্রশাসন সংস্কার না করলে রাজস্ব আদায় প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছাবে না।'

এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, 'এনবিআরের নীতি ও প্রশাসনিক সংস্কারের পাশাপাশি এর পরিষেবাগুলির সম্পূর্ণ অটোমেশন প্রয়োজন।'

'গত অর্থবছরের শুরু থেকেই স্পষ্ট ছিল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হবে। এটি উচ্চাভিলাষীর চেয়ে বেশি ছিল।'

দেশে কর-জিডিপির অনুপাত বিশ্বে সর্বনিম্ন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা আনুমানিক সাত দশমিক ৩৮ শতাংশ।

আহসান এইচ মনসুরের মতে, 'আমাদের কর প্রশাসন দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।'

এ প্রসঙ্গে তিনি এনবিআরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিল ট্রাইব্যুনালের সভাপতি মতিউর রহমানের কথা উল্লেখ করেন, যাকে সম্পদের হিসাব নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কের জেরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে বদলি করা হয়েছে।

বেতন ৭৮ হাজার টাকা হওয়ার পরও কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ মতিউরের বিরুদ্ধে।

'মতিউরের মতো এনবিআরের আরও অনেক কর্মকর্তা আছেন যারা 'অপকর্ম' করেই যাচ্ছেন। কিন্তু সেগুলো আজো প্রকাশ করা হয়নি,' যোগ করেন তিনি।

একই মত প্রকাশ করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত অর্থবছরের শুরু থেকেই স্পষ্ট ছিল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হবে। এটি উচ্চাভিলাষীর চেয়ে বেশি ছিল।'

তিনি আরও বলেন, 'দেশের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা না করেই সরকার গত ১০-১৫ বছর ধরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে আসছে।'

উপরন্তু, লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বারবার ব্যর্থতা রাজস্ব কাঠামোর বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করছে।

তিনি কর ফাঁকি রোধে, দুর্নীতি নির্মূলে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ওপর কর কর্তৃপক্ষকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে রাজস্ব তিন লাখ ৯৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এনবিআরের তথ্য অনুসারে, আর্থিক সংকটের মধ্যে ডলার সাশ্রয়ে সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করায় আমদানি কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বৈদেশিক বাণিজ্য থেকে কর আদায় আট দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়ে এক লাখ ৮১৯ কোটি টাকা হয়েছে।

গত বছর কর আদায় ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ বেড়ে এক লাখ ৩১ হাজার ২৫ কোটি টাকা হয়েছে। রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস ভ্যাট আদায় ২০ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে এক লাখ ৫০ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা হয়েছে।

তিন খাতের মধ্যে ভ্যাট আদায়ে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে এনবিআরের।

আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, 'ক্রমাগত উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও টাকার বিনিময় হারের অস্থিরতা গত অর্থবছরে ভ্যাট প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। ভবিষ্যতে আমাদের প্রত্যক্ষ করের দিকে নজর দিতে হবে। এটি দেশের জিডিপির ১২ শতাংশ হওয়া উচিত।'

এছাড়াও মোট ভ্যাট আদায় দেশের জিডিপির ছয় থেকে আট শতাংশ হওয়া উচিত। বর্তমানে এই অনুপাত মাত্র তিন শতাংশের আশেপাশে বলে জানিয়েছেন আহসান মনসুর।

Comments

The Daily Star  | English

Cyber protection ordinance: Draft fails to shake off ghosts of the past

The newly approved draft Cyber Protection Ordinance retains many of the clauses of its predecessors that drew flak from across the world for stifling freedom of expression.

6h ago