ইরানে এলেন সংস্কারপন্থি মাসুদ, তারপর…

ইরানের প্রেসিডেন্ট
মাসুদ পেজেশকিয়ান। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

মাত্র দুই বছরের মাথায় ইরান আবারও পেল সংস্কারপন্থি প্রেসিডেন্ট। গত ১৯ মে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় কট্টরপন্থি হিসেবে পরিচিত ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশটির জনগণ বেছে নিলেন সংস্কারপন্থি মাসুদ পেজেশকিয়ানকে।

রাইসির আগে আট বছর তথা পরপর দুইবার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন অপর সংস্কারপন্থি হাসান রুহানি।

তার আগে আরও আট বছর প্রেসিডেন্ট ছিলেন তেহরানের সাবেক মেয়র ও চরম কট্টরপন্থি হিসেবে পরিচিত মাহমুদ আহমাদিনেজাদ।

তার আগে ইরান পেয়েছিল সংস্কারপন্থি মোহাম্মাদ খাতামিকে। তিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন আট বছর।

খাতামির আগে সাত বছর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন কট্টরপন্থি আকবর হাশেমি রাফসানজানি।

অর্থাৎ, ১৯৮৯ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের খনিজসমৃদ্ধ ইরান একবার কট্টরপন্থি প্রেসিডেন্ট পেলে পরবর্তীতে পেয়েছে সংস্কারপন্থি প্রেসিডেন্ট। অথবা, প্রতি সংস্কারপন্থির পর দেশটি পেয়েছে একজন কট্টরপন্থি প্রেসিডেন্ট।

গত ২৮ জুন কোনো প্রার্থীই এককভাবে নির্বাচিত হতে না পারায় গতকাল শুক্রবার দ্বিতীয় দফার নির্বাচন হয়।

আজ ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম তেহরান টাইমস জানিয়েছে, সরকারি হিসাবে এক কোটি ৬০ লাখ ৪০ হাজার ভোট পেয়ে মাসুদ পেজেশকিয়ান ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।

মাসুদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশটির পরমাণু চুক্তির মধ্যস্থতাকারী জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাইদ জালিলি পেয়েছেন এক কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার ভোট।

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদরদপ্তর ভোটের এই তথ্য জানিয়ে বলেছে, গত ২৮ জুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়লেও দ্বিতীয় ধাপে ভোট পড়েছে ৪৯ দশমিক আট শতাংশ।

ইরানে মোট ভোটার ছয় কোটি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, তিন কোটির বেশি মানুষ ভোট দিয়েছেন।

সরকারি হিসাবেই বোঝা যাচ্ছে, দেশটির অর্ধেক মানুষ এই নির্বাচনে ভোট দেননি। অন্যভাবে বলতে গেলে, ইরানের অর্ধেক মানুষ ভোট না দিয়ে এই ব্যবস্থার প্রতি তাদের 'অনাস্থা' জানিয়েছেন।

মাসুদ নির্বাচিত, তারপর…

আজ সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাসুদ ভোটারদের কাছে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেগুলোর মধ্যে আছে—পশ্চিমের দেশগুলোর সঙ্গে থেমে থাকা পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানের সমঝোতার পাশাপাশি সারা বিশ্বের জন্য ইরানের দরজা খুলে দেওয়া।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে মিত্রদের নিষেধাজ্ঞা-অবরোধ থেকে ইরানকে মুক্তি দিয়ে খনিজসমৃদ্ধ দেশটির আর্থিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।

আরও আছে—সামাজিক ন্যায়বিচার, সম-অধিকার ও লিঙ্গবৈষম্য থেকে ইরানকে উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি।

তবে তিনি অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তার প্রতিশ্রুতি কতটা রাখতে পারবেন তা নির্ভর করছে দেশটির শীর্ষ ক্ষমতাধর বা আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ও তার ধর্মীয় প্রশাসনের মনোভাবের ওপর।

আন্তর্জাতিক বিষয়ে মাসুদকে তাকিয়ে থাকতে হবে যুক্তরাষ্ট্র-মিত্রদের আন্তরিক-সহযোগিতার দিকে।

অনেক বিশ্লেষকের মতে, বর্তমান পরিবর্তিত বিশ্বে পশ্চিমের দেশগুলো থেকে চরম চাপে থাকা ও আর্থিকভাবে নাজেহাল ইরানের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা হয়ত দেশবাসীকে একটু স্বস্তি দিতেই একজন সংস্কারপন্থির প্রেসিডেন্ট হওয়াকে মেনে নিচ্ছেন।

তবে মাসুদ পেজেশকিয়ান তার আগের সংষ্কারপন্থি প্রেসিডেন্টদের মতো ইরানকে কতটা স্বস্তি দিতে পারবেন তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে। আর আগের সংষ্কারপন্থি প্রেসিডেন্টরা দেশটির জনগণকে কতটাই বা স্বস্তি দিয়েছিলেন তা দেখেছে বিশ্ববাসী।

Comments

The Daily Star  | English
govt employees punishment rule

Govt employees can now be punished for infractions within 14 working days

Law ministry issues ordinance amending the Public Service Act, 2018

1h ago