ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

যে কারণে মনোনয়ন পেলেন না মাহমুদ আহমাদিনেজাদ

২০১৮ সালে আহমাদিনেজাদ খামেনির সরাসরি সমালোচনা করেন, যা ইরানে খুবই বিরল। তিনি তাকে চিঠি পাঠিয়ে ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন’ আয়োজনের আহ্বান জানান।
ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ । ছবি: রয়টার্স
ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ । ছবি: রয়টার্স

ইরানে আগামী ২৮ জুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন ছয় প্রার্থী। ইরানের সাবেক কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ প্রার্থিতার আবেদন করলেও তাকে মনোনয়ন দেয়নি দেশটির গার্ডিয়ান কাউন্সিল।

আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।

গত ২ জুন প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধনের কথা জানান আহমাদিনেজাদ। তবে বিশ্লেষকরা সে সময় মত দিয়েছিলেন, গার্ডিয়ান কাউন্সিল খুব সম্ভবত তাকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেবে না। 

২০১৭ ও ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও তিনি প্রার্থিতার আবেদন করেও অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি। এবারও তাকে একই ভাগ্য বরণ করতে হলো।

ইরানের রেভোল্যুশনারি গার্ডস সেনাদলের সাবেক সদস্য আহমাদিনেজাদ প্রথম ২০০৫ আলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে মেয়াদ পূর্তির পর পদ ছেড়ে দেন।

ইরানের সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে খামেনির একছত্র আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আহমাদিনেজাদ। এরপর থেকেই খামেনির সঙ্গে তার সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দেয়।

২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচনে দাঁড়ানোর পর তাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি। সে সময় আহমাদিনেজাদের বিরুদ্ধে গণবিদ্রোহ দানা বেঁধে উঠে। ইরানের রেভোল্যুশনারি গার্ডস কর্পসের নেতৃত্বে সেই বিদ্রোহ দমন করা হয়। সে সময়য় এই রক্তাক্ত দমন-পীড়ন অভিযানে অসংখ্য মানুষ নিহত হন ও হাজারো বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ ও সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। ফাইল ছবি: রয়টার্স
ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ ও সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। ফাইল ছবি: রয়টার্স

দ্বিতীয় মেয়াদের শেষের দিকে এসে খামেনির সমালোচনায় মুখর হন আহমাদিনেজাদ।

২০১৬ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি তাকে সতর্ক করে বলেন, তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ 'দেশের স্বার্থপরিপন্থী'। এরপর ২০১৭ সালে তাকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়নি গার্ডিয়ান কাউন্সিল।

২০১৮ সালে আহমাদিনেজাদ খামেনির সরাসরি সমালোচনা করেন, যা ইরানে খুবই বিরল। তিনি তাকে চিঠি পাঠিয়ে 'নিরপেক্ষ নির্বাচন' আয়োজনের আহ্বান জানান।

অন্যান্য প্রার্থীরা

ইরানে নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্বে আছে গার্ডিয়ান কাউন্সিল। এই কাউন্সিল ছয় প্রার্থীর মনোনয়পত্র গ্রহণ করেছে।

প্রার্থীরা হলেন পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাগের গালিবাফ, পরমাণু কর্মসূচিবিষয়ক সাবেক মধ্যস্থতাকারী সাইদ জালিলি, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তফা পোউর মোহাম্মাদি, তেহরানের মেয়র আলী রেজা জাকানি, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট আমির হোসেইন গাজিজাদেহ হাশেমি ও পার্লামেন্ট সদস্য মাসুদ পেজেশকিয়ান।

ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ। ছবি: রয়টার্স
ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ। ছবি: রয়টার্স

এই ছয়জনের মধ্যে মাসুদ পেজেশকিয়ান ছাড়া বাকি সবাই রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত।

ইরানের প্রচলিত প্রথা মেনে গার্ডিয়ান কাউন্সিল কোনো নারী প্রার্থী বা শাসন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে চান এমন কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়নি।

প্রার্থীরা ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমে সরাসরি প্রচারিত বিতর্কে অংশ নেবেন। প্রার্থীরা বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন ও সমাবেশে ভাষণ দিয়ে প্রচারণা চালাতে পারবেন।

সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রার্থী হিসেবে বাগের কালিবাফের (৬২) কথা উল্লেখ করেছে এপি। তিনি তেহরানের সাবেক মেয়র এবং রেভল্যুশনারি গার্ড দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে তার। তিনিও আহমাদিনেজাদের মতো গার্ড কর্পসের সদস্য ছিলেন। ১৯৯৯ সালে ইরানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নে সক্রিয় ভূমিকার জন্য সমালোচিত হন তিনি।

পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাগের কালিবাফ। ছবি: রয়টার্স
পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাগের কালিবাফ। ছবি: রয়টার্স

২০০৩ সালে দেশের পুলিশ বাহিনীর প্রধান হিসেবে তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

২০০৫ ও ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন কালিবাফ। ২০১৭ সালে রাইসির প্রতি সমর্থন জানিয়ে সরে দাঁড়ান তিনি।

গত ১৯ মে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের জোলফা এলাকার কাছে প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। এতে তিনিসহ ওই হেলিকপ্টারে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ানসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিহত হন।

রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার। মোখবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ছেন না।

Comments