২০২৩-২৪ অর্থবছর

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অস্বস্তির বছর

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

গত চার অর্থবছরের মধ্যে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে খারাপ বছর গেছে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছর। বিদায়ী অর্থবছরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক এক হাজার পয়েন্ট কমেছে।

এর আগে, ২০১৯-২০ অর্থবছর বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও খারাপ কেটেছিল। তখন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১ হাজার ৩৯৫ পয়েন্ট কমে ৩ হাজার ৯৮৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছিল।

এদিকে নতুন অর্থবছরের প্রথম দিনে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয়েছে ৫ হাজার ৩২৮ পয়েন্টে। গত অর্থবছরে শুরু হয়েছিল ৬ হাজার ৩৪৩ পয়েন্টে।

এছাড়া বিদায়ী অর্থবছরে শেয়ারবাজারে নগদ লেনেদের পরিমাণও কমে গেছে। গত বছরের চেয়ে দৈনিক গড় টার্নওভার ২২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬২১ কোটি টাকায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে যা ছিল ৭৯২ কোটি টাকা।

একইসঙ্গে বাজার মূলধন বা ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মোট শেয়ারের ক্ষেত্রেও একই দৃশ্য দেখা গেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ দিন ৩০ জুন বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬২ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা, গত অর্থবছরের শেষ কার্যদিবসের চেয়ে ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ কম।

সামগ্রিকভাবে শেয়ারের দাম কমেছে এবং বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে শেয়াবাজারে একটু স্বস্তির অপেক্ষায় ছিলেন বিনিয়োগকারীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের জন্য বছরটা খুব খারাপ ছিল।'

তার মতে, গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাজার ভালো পারফর্ম করেছে। কিন্তু এরপর আর বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর জন্য কোনো সুখবর ছিল না।

তিনি আরও বলেন, 'এখন বাজারের অবস্থা বেশ খারাপ। পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে... গত তিন মাসে এক হাজার বিনিয়োগকারীর মধ্যে একজনও মুনাফা করতে পেরেছে কি না তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।'

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০২২ সালের জুলাই মাসে দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস চালু করেছিল। এর মাধ্যমে শেয়ারের দর নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

তাদের উদ্দেশ্য ছিল করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা থেকে সূচকের পতন রোধ করা।

কিন্তু ফ্লোর প্রাইস বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে পারেনি। বরং এতে শেয়ারবাজার একপ্রকার স্থবির হয়ে পড়ে। ফলে বিএসইসি ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়।

এজ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান আসিফ খানের মতে, বিদায়ী অর্থবছরে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে।

'একদিকে আমরা দেখেছি মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ ও প্রবৃদ্ধির মতো অর্থনৈতিক সূচকের নেতিবাচক পারফরম্যান্স। অন্যদিকে আমরা এখন আরও বিচক্ষণ মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি অনুসরণ করছি। এগুলো সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতির উন্নতি করবে। তবে স্থিতিশীল অবস্থায় ফেরার মূল চাবিকাঠি হল যথাযথ সংস্কার।'

তার ভাষ্য, পুরো অর্থবছর বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখা, মূল্যস্ফীতি কমানো এবং মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন ঠেকাতে হিমশিম খেয়েছে।

'সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিক্রিতে মন্দাবস্থা তারই স্পষ্ট ইঙ্গিত,' মন্তব্য করেন তিনি।

সিএএল সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাজেশ সাহা বলেন, 'জাতীয় বাজেটে মূলধনী মুনাফা কর আরোপের কারণে  বিনিয়োগকারীদের ওপর প্রভাব পড়েছে।'

নতুন অর্থবছরের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার লেনদেন থেকে আয় ৫০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেলে তার ওপর অন্তত ১৫ শতাংশ মূলধনী মুনাফা কর আরোপের পরিকল্পনা করছে সরকার।

তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। তাই আমরা আশা করছি, এই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসবে।'

Comments

The Daily Star  | English

What's causing the unrest among factory workers?

Kalpona Akter, labour rights activist and president of Bangladesh Garment and Industrial Workers Federation, talks to Monorom Polok of The Daily Star about the recent ready-made garments (RMG) workers’ unrest.

8h ago