১৫ বছরের সালতামামি

পুঁজিবাজারের অধিকাংশ নীতিই ব্যর্থ হলো কেন?

পুঁজিবাজার
আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সর্বোচ্চ পর্যায়ে রক্ষার কথা বলে গত ১৫ বছরে অসংখ্য নীতি, বিধি-বিধান প্রণয়ন ও আদেশ জারি করেছে। তবে বেশিরভাগই ব্যর্থ হয়েছে। ফলে আস্থার সংকটে পড়েছে পুঁজিবাজার।

এসব পরিবর্তন পুঁজিবাজারে সুশাসন নিশ্চিতে ব্যর্থ হলেও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রধান হিসেবে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ও এম খায়রুল হোসেনের অযাচিত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

ফ্লোর প্রাইস আরোপ, মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানো ও শেয়ারের লভ্যাংশকে তাদের রিটার্ন হিসাবে অনুমোদন দেওয়া এবং দুর্বল পারফরম্যান্স রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাথমিক পাবলিক অফারিং করার অনুমতি দেওয়াসহ ত্রুটিপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকরা।

বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল্যায়নে কঠোর শর্ত আরোপ এবং শেয়ারের দাম একদিনে কতটুকু বাড়তে বা কমতে পারে তা নির্ধারণে সার্কিট ব্রেকারে ঘন ঘন পরিবর্তনের সিদ্ধান্তটিও হিতে বিপরীত হয়েছে।

খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১১ ও ২০১২ সালে জোর করে শেয়ার বিক্রি বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল। এর ফলে শেষ পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

অতীতের ভুল সিদ্ধান্তের বোঝা বহন করায় সেসব বিনিয়োগকারীদের অনেকেই এখনো বাজারে জোরালো ভূমিকা রাখছেন না।

ইনভেস্টিট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ এমরান হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মহামারির সময় ব্যাংকিং কার্যক্রম অল্পদিন পর চালু হলেও পুঁজিবাজার প্রায় দুই মাস বন্ধ ছিল। পৃথিবীর আর কোনো পুঁজিবাজার এত দীর্ঘ সময় বন্ধ রাখা হয়নি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার দিক থেকে এটি বাজে সিদ্ধান্ত ছিল।'

এরপর, ফ্লোর প্রাইস দুইবার আরোপ করা হয়। এটি ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত হিসাবে প্রমাণিত হয়।

তার মতে, 'নিয়ন্ত্রক সংস্থা শেয়ারের দাম নির্ধারণ করতে পারে না। শেয়ারের নিচের দিকের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় ক্রেতার সংখ্যা কমে যায়। বাজারে তারল্যের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয়।'

২০২০ সালে মহামারির মধ্যে দেশে প্রথমবারের মতো ফ্লোর প্রাইস চালু করে খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন। এমরান হাসানের মতে, 'দুই মাস পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।'

শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০২২ সালে আবার তা আরোপ করা হয়। ছয় প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস এখনো বহাল আছে।

ক্লোজড-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে এমরান হাসান বলেন, 'এটি মিউচুয়াল ফান্ডশিল্পে বিপর্যয়ের অন্যতম বড় কারণ।'

তার ভাষ্য, একজন বিনিয়োগকারী নির্দিষ্ট সময় পর মুনাফা ফেরত পাওয়ার আশায় ফান্ডে টাকা রাখেন। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেই মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়।

২০১৮ সালে খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন সব ক্লোজড-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ১০ বছর বাড়িয়ে দেয়। এটি বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করে। মুনাফাসহ তাদের টাকা ফেরত পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে।

এমনকি বিদেশি বিনিয়োগকারী সিটি অব লন্ডন ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির (সিএমসি) ইউনিটহোল্ডারদের অনুমোদন ছাড়া মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি বিএসইসির (মিউচুয়াল ফান্ড) নিয়মমালা, ২০০১-র লঙ্ঘন বলে বিএসইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট করেছে।

এমনকি, খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন সম্পদ ব্যবস্থাপকদের মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের ওপর স্টক লভ্যাংশ বা রিটার্ন দেওয়ার অনুমতি দেয়। এটি বিশ্বে বিরল।

'শিবলী ও খায়রুলের নেতৃত্বাধীন কমিশন থেকে পাবলিক প্রতিষ্ঠান হওয়ার অনুমোদন পাওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের খারাপ পারফরম্যান্সের কারণে পরে সেগুলোকে ডাউনগ্রেড করা হয়েছিল। এটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলে' বলে মন্তব্য করেন এমরান হাসান।

ইউসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী শেখ মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিএসইসি একবার সব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে (এএমসি) মিউচুয়াল ফান্ডে তাদের বিনিয়োগের কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল।'

তিনি আরও বলেন, 'নিয়ন্ত্রক সংস্থা এএমসিগুলোকে কোথায় বিনিয়োগ করতে হবে সে সম্পর্কে নির্দেশ দিতে পারে না। এএমসিগুলো বিনিয়োগকারীদের টাকা রক্ষা করতে বাধ্য। কিন্তু বিএসইসির নির্দেশনায় শেয়ারের দাম আগে থেকেই বেড়ে যাওয়ায় লোকসান হয়। এর প্রভাব পড়ে বিনিয়োগকারীদের ওপর।'

নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঘন ঘন নীতি পরিবর্তন না করার আশ্বাস দিলে মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

গতকাল বুধবার এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ও এম খায়রুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাদের কেউই ফোন ধরেননি।

Comments

The Daily Star  | English

One killed in multi-vehicle crash on Dhaka-Mawa highway

The chain of crashes began when a lorry struck a private car from behind on the Mawa-bound lane

48m ago