একক রপ্তানি পণ্যের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা বড় ঝুঁকি: এডিবি
গত তিন দশকে তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য পণ্যের রপ্তানি থেকে দেশের আয় বেড়েছে সাত দশমিক ছয় শতাংশ। অন্যদিকে, পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ছয় শতাংশ। এ থেকে বোঝা যায় যে, দেশে রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা কম।
১৯৮০ দশকের শেষের দিকে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় ছিল অন্যান্য পণ্যের রপ্তানির প্রায় সমান।
তবে, ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে পোশাক রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ৪৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বাকি পণ্যের রপ্তানি থেকে আয় এক বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে আট বিলিয়ন ডলার।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) দক্ষিণ এশিয়া ওয়ার্কিং পেপার সিরিজের জুন সংখ্যায় বলা হয়েছে, পোশাক রপ্তানিতে যে সাফল্য এসেছে তা অন্যান্য খাত থেকে না আসায় বাংলাদেশের জন্য রপ্তানি বাড়ানো বড় ও দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জ।
একক পণ্যের রপ্তানির ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতার অর্থ হচ্ছে দেশের রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা বিশ্বে সবচেয়ে কম।
রপ্তানি আয়ে প্রায় ৯৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে একই ধরনের পণ্য থেকে।
রপ্তানি বহুমুখীকরণে নতুন পণ্যের অবদান পাঁচ শতাংশেরও কম।
বাংলাদেশের প্রতিযোগী সব দেশে নতুন পণ্য থেকে আয় মালয়েশিয়ায় প্রায় ৭৮ শতাংশ বেড়েছে। ভিয়েতনামে বেড়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ ও চীনে ৩২ শতাংশ।
স্বল্পোন্নত নয় এমন দেশের অর্জনের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের রপ্তানি সাফল্য আশাব্যঞ্জক নয়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশিরভাগ দেশ রপ্তানির দিক থেকে বাংলাদেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে।
বাংলাদেশের ১৭ কোটি জনসংখ্যার বিবেচনায় বর্তমান বার্ষিক রপ্তানি আয় ৫৫ বিলিয়ন ডলার। এটি তুলনামূলক বিচারে বেশিরভাগ দেশের তুলনায় কম।
নয় কোটি মানুষের দেশ ভিয়েতনামের রপ্তানি ৩৬০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
প্রায় ২২ কোটি জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি আয় ২৪০ বিলিয়ন ডলার। থাইল্যান্ডের জনসংখ্যা সাত কোটির একটু বেশি। অথচ এর রপ্তানি আয় প্রায় ৩২৩ বিলিয়ন ডলার।
মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ রপ্তানিতে বেশ সফল।
বাংলাদেশের মোট রপ্তানি পণ্যের উল্লেখযোগ্য অংশের মধ্যে আছে নিটওয়্যার গার্মেন্টস (৪৪ দশমিক ছয় শতাংশ), ওভেন গার্মেন্টস (৩৭ দশমিক দুই শতাংশ), হোম টেক্সটাইল (তিন দশমিক তিন শতাংশ), জুতা (দুই দশমিক তিন শতাংশ), পাটজাত পণ্য (এক দশমিক নয় শতাংশ) ও মাছ (এক শতাংশ)।
সব মিলিয়ে শীর্ষ ২০ পণ্য থেকে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় ৮০ শতাংশ বা এর বেশি। প্রতিবেশী ভারত, চীন, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের আয় ৩৭ থেকে ৫৯ শতাংশ।
শীর্ষ ১০০ রপ্তানি পণ্য থেকে বাংলাদেশের আয় ৯০ শতাংশের বেশি। চীনের আয় ৬৯ শতাংশ, ভারতের ৭৩ শতাংশ, এবং মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের ৮৪ শতাংশ।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ অর্থনীতির দেশ ভারত ও চীনের সঙ্গে ভৌগোলিক নৈকট্য থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ রপ্তানি সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না।
ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রাক্কলিত মাত্রার চেয়ে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার কম। চীনে রপ্তানি প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার কম।
এ ছাড়াও, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশ প্রত্যাশার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম রপ্তানি করে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় রপ্তানির সমষ্টিগত ঘাটতি প্রায় সাত বিলিয়ন ডলার ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এক দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলার।
এসব অঞ্চলে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রায় ২৫ শতাংশ বাড়ানোর সম্ভাবনা আছে।
বাংলাদেশ রপ্তানি বাজার বাড়াতে পারছে না। এর রপ্তানি পণ্যের পাঁচ ভাগের চার ভাগের বেশি যায় উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে।
তবে ২০০০ সালের পর থেকে দেশের মোট রপ্তানি পণ্যের ৯০ শতাংশ যে শীর্ষ ১৫ বাজারে যেত এখন সেখানে যাচ্ছে মোট রপ্তানির ৮২ শতাংশ।
Comments