অবরোধের দ্বিতীয় দিন

সময়মতো পণ্য পৌঁছায়নি, চট্টগ্রাম ছাড়তে পারেনি জাহাজ

অবরোধে পণ্য পরিবহন
অবরোধের দ্বিতীয় দিনে আমদানি পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়ছে ট্রাক। ১ নভেম্বর ২০২৩। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

দেশব্যাপী অবরোধের দ্বিতীয় দিনে গতকাল বুধবার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রপ্তানি কন্টেইনার সময়মতো পৌঁছাতে না পারায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিঙ্গাপুরগামী একটি জাহাজ নির্ধারিত যাত্রা বাতিল করেছে।

পর্যাপ্ত পণ্য নিয়ে জাহাজটি আজ বৃহস্পতিবার ছেড়ে যাওয়ার কথা আছে।

এ দিকে, চলমান অবরোধের কারণে বন্দরে আমদানি পণ্য খালাস কার্যক্রমে প্রভাব পড়েছে। অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ৭৮৮ একক কন্টেইনারের পণ্য খালাস হয়েছে। অবরোধের আগের দিন একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল চার হাজার ১০৫ একক কন্টেইনার।

বন্দর সূত্র জানায়, গত সোমবার পানামার পতাকাবাহী 'স্কাই উইন্ড' নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের তৃতীয় জেটিতে ভিড়ে। গতকাল সকাল ১১টায় জাহাজটি ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল।

জাহাজটি এক হাজার ৪০ একক রপ্তানি কন্টেইনার নিয়ে যাওয়ার জন্য বুকড করা হয়েছিল। তবে নির্দিষ্ট সময় গতকাল সকাল পর্যন্ত ৭০০ একক কন্টেইনার লোড করা সম্ভব হয়।

জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট সি কনসোর্টিয়াম বাংলাদেশ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, লোডিং প্রক্রিয়া শেষ করতে তারা জাহাজটি এক দিন দেরিতে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

জানা গেছে, অবরোধে সংঘাতের আশঙ্কায় বেশিরভাগ বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো (আইসিডিএস) মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত রপ্তানি কন্টেইনার পরিবহন করতে না পারায় এই সমস্যা দেখা দেয়।

পরে রাতভর আইসিডিগুলো পণ্যের কন্টেইনার নিয়ে বন্দরে ভিড় করলে বার্থ অপারেটররা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেগুলো জাহাজে লোড করার চেষ্টা করেন।

সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, বন্দর জেটিতে আরও এক দিন বেশি থাকার কারণে বার্থিং চার্জ হিসেবে প্রায় তিন হাজার ডলার খরচ হবে। এ ছাড়াও, এক দিনের জন্য অতিরিক্ত জাহাজ ভাড়া ২০ হাজার ডলার গুনতে হবে।

তারা অবশিষ্ট পণ্য যাতে রেখে না যেতে হয় সে জন্য বাড়তি খরচ মেনে নিয়েও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, 'স্কাই উইন্ড'-এ যা লোড করা হচ্ছে এর বেশির ভাগই ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া পোশাক পণ্য।

চট্টগ্রাম ছাড়ার পর জাহাজটি প্রথমে সিঙ্গাপুর ও পরে মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং-এ রপ্তানি পণ্য পৌঁছে দেবে। ওই দুই বন্দর থেকে পণ্যগুলো বড় জাহাজে করে নির্ধারিত গন্তব্যে যাবে।

তৈরি পোশাক কারখানার মালিক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী জাহাজটির অপ্রত্যাশিত দেরির কারণে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, 'এখনো আশা করছি একদিন যাত্রা বিরতি খুব বড় প্রভাব ফেলবে না এবং জাহাজটি সময়মতো সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় বড় জাহাজগুলোর সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। কিন্তু তা না হলে রপ্তানি পণ্যগুলো সময়মতো জাহাজীকরণ করা যাবে না। ফলে খানিকটা অনিশ্চয়তা তো থেকেই যায়।'

তিনি আরও বলেন, 'চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে যখন দেশের রপ্তানির পরিমাণ নিম্নমুখী তখন এ ধরনের বাধা প্রত্যাশিত নয়।'

তবে অবরোধের প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনে পণ্যবাহী যান চলাচল বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খায়রুল আলম সুজন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরবরাহ চেইনে যে কোনো ধরনের দেরি সময়মতো রপ্তানির চালান পৌঁছানো নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করে।'

তার মতে, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মঙ্গলবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৯টি আইসিডি ১৭২ একক রপ্তানি কন্টেইনার পাঠাতে পেরেছে।'

তবে সন্ধ্যার দিকে কন্টেইনার পরিবহনের গতি বেড়ে যাওয়ায় সারা রাত কাজ করতে হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আমিন সিকদার আরও জানান, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আইসিডিগুলো বন্দরে মোট এক হাজার ৫৮১ একক রপ্তানি কন্টেইনার পাঠাতে পেরেছে।

কয়েকজন আইসিডি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, গতকাল সকাল থেকে আইসিডি ও বন্দরের মধ্যে রপ্তানি, আমদানি ও খালি একক কন্টেইনার পরিবহন চলমান থাকলেও এর গতি ধীর ছিল।

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

27m ago