আড়াই কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন এনবিআর কর্মকর্তা ফয়সাল

ফয়সাল
কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল নিজের ও স্বজনদের নামে তিন মাসে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র কিনেছিলেন বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত ২৭ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব (ট্যাক্সেস লিগ্যাল অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) কর্মকর্তা ফয়সালের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।

প্রাথমিক তদন্ত শেষে গত বৃহস্পতিবার আদালতে দুদকের দাখিল করা নথি থেকে জানা যায়, আয়কর কর্মকর্তাদের বদলি, করদাতাদের ভয়ভীতি দেখানো এবং অন্যান্য অনিয়মের মাধ্যমে ফয়সাল প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন।

ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষের মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠার পর গত বছর ফয়সালের বিরুদ্ধে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

এসব নথির মধ্যে ২০১৯ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ফয়সাল তার ও তার পরিবারের নামে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১২ নভেম্বর ২০২০ থেকে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র কেনা হয়েছে।

২০০৫ সালে বিসিএস ক্যাডারে সহকারী কর কমিশনার পদে এনবিআরে যোগ দেওয়া ফয়সাল ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর প্রথমে নিজের নামে ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনেন।

এর চার দিন পর তার স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা হয়।

২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি তার শ্বশুর আহমেদ আলীর নামে যথাক্রমে ১০ লাখ ও ২০ লাখ টাকা মূল্যের দুটি সঞ্চয়পত্র কেনা হয়।

তিন সপ্তাহ পর ফয়সালের আত্মীয় খন্দকার হাফিজুর রহমানের নামে ৩০ লাখ টাকা মূল্যের আরেকটি সঞ্চয়পত্র কেনা হয়। ১০ দিন পর একই ব্যক্তির নামে ১০ লাখ টাকা মূল্যের আরেকটি সঞ্চয়পত্র কেনেন।

২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ফয়সাল তার ভাই কাজী খালিদ হাসানের নামে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে আরেকটি সঞ্চয়পত্র কেনেন।

গত ২৬ ডিসেম্বর তিনি তার শ্যালক আফতাব আলীর নামে ২৯ লাখ টাকা মূল্যের আরেকটি সঞ্চয়পত্র কেনেন।

ফয়সাল, তার স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজনের নামে ৮৭টি ব্যাংক হিসাব জব্দে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

ফয়সাল ও তার পরিবার যাতে ওই সম্পত্তি অন্য কোথাও হস্তান্তর করতে না পারে এবং ওই টাকা যাতে পাচার না হয়, সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

আদালতকে দুদক জানায়, ফয়সাল তার অবৈধ উপার্জন আড়াল করতে তার আত্মীয় স্বজনদের নামে অনেক ব্যাংক হিসাব খুলেছিলেন। এর মধ্যে ৮৭টি ব্যাংক হিসাবের সুনির্দিষ্ট লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুদক।

দুদকের নথি অনুযায়ী, ফয়সাল ও তার ১১ জন আত্মীয় ১৯টি ব্যাংক ও একটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ৮৭টি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করেছেন।

তার শ্বশুর অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তার অ্যাকাউন্টে সবচেয়ে বড় ১১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা লেনদেনের সন্ধান পাওয়া গেছে। তার শ্বশুর আহমদ আলীর আটটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে।

ফয়সালের শাশুড়ি মমতাজ বেগমের ১০টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে এবং এসব অ্যাকাউন্টে সাত কোটি টাকার লেনদেনের হদিস পাওয়া গেছে।

ফয়সালের ছয়টি অ্যাকাউন্টে ৫ কোটি ২১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। তার স্ত্রীর পাঁচটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে, যেখানে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।

তদন্তে দুদক আরও জানতে পেরেছে, ফয়সাল ও তার স্ত্রী খিলগাঁওয়ের জলসিঁড়ি হাউজিং প্রজেক্ট থেকে পাঁচ কাঠার একটি প্লট কিনেছেন এবং তার স্ত্রী ইস্ট-ওয়েস্ট ডেভেলপমেন্ট থেকে ৭৫ লাখ টাকায় পাঁচ কাঠার আরেকটি প্লট কিনেছেন। রাজধানীর রমনায় রূপায়ন হাউজিং এস্টেট থেকে এক কোটি টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন তার শ্বশুর।

 

Comments

The Daily Star  | English

What if the US election ends in a Trump-Harris tie?

While not highly likely, such an outcome remains possible, tormenting Americans already perched painfully on the edge of their seats ahead of the November 5 election

2h ago