বদলি ঠেকাতে ক্ষমতার দাপট দেখাতেন মতিউর

মতিউর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমানের এতটাই দাপট ছিল যে, তিনি নিজে না চাইলে তাকে বদলি করা যেত না।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনেকের সঙ্গে মতিউরের সখ্যতা আছে এবং তাদের অনেকের জন্য তিনি তার পরিবারের মালিকানাধীন রিসোর্টে বিনোদনের ব্যবস্থা করতেন।

এনবিআরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

মতিউর তার এসব যোগাযোগ ও ক্ষমতা ব্যবহার করে এনবিআরে তার অন্তত দুটি বদলির আদেশ বাতিল করেছেন বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস, বেনাপোল কাস্টমস, লার্জ ট্যাক্সপেয়ার ইউনিট (এলটিইউ), ঢাকা ও চট্টগ্রামের কাস্টমস ভ্যাট কমিশনারেটসহ একাধিক শুল্ক স্টেশনে কাজ করেছেন মতিউর।

কর বিভাগের এই কর্মস্থলগুলোতে কাজ করা বেশ 'লাভজনক' বলে মনে করেন অনেক কর্মকর্তা।

সম্প্রতি ঈদের আগে মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত কোরবানির জন্য কেনা একটি ছাগলের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে। সেই পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছিল ছাগলটি তিনি ১২ লাখ টাকায় কিনেছেন। এরপর মতিউরের সম্পদ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

এরপর এই ৭৮ হাজার টাকা মাসিক বেতন পাওয়া সরকারি কর্মকর্তার আয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তার সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে তার ও তার পরিবারের বিপুল সম্পদ এবং বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

এরপর মতিউরের সম্পদের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এর আগেও তার বিরুদ্ধে দুদকে অন্তত চারটি অভিযোগ করা হলেও সেগুলোর তদন্ত পর্যন্ত শুরু হয়নি।

গত রোববার তাকে এনবিআর থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে বদলি করা হয়।

কিন্তু, এর আগে এনবিআরের দুই চেয়ারম্যান তাকে বদলি করতে গিয়েও পারেননি।

২০০৭ সালের অক্টোবরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তৎকালীন এনবিআর চেয়ারম্যান বদিউর রহমান মতিউরকে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস থেকে রাজশাহীর ভ্যাট কমিশনারেটে বদলি করেন।

সম্প্রতি একটি টিভি টকশোতে বদিউর বলেন, 'এনবিআর চেয়ারম্যান হিসেবে আমি মতিউরকে বদলির আদেশ দিয়েছিলাম। আদেশ জারি হওয়ার পর মতিউর আমার অফিসে গিয়েছিলেন। এমনকি তিনি আমার সঙ্গে দেখা করতে আমার বাসায়ও গিয়েছিলেন। কিন্তু আমি তার সঙ্গে দেখা করিনি। পরে যা ঘটেছিল তাতে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।'

বদিউর বলেন, 'আমাকে এ বদলি ঠেকাতে ফোন করেছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ ও অন্য তিন সেনা কর্মকর্তা।'

'আমি আদেশ বাতিল করিনি,' বলেন তিনি। 'আমি সেনাপ্রধানকে বলেছি প্রয়োজনে আমাকে বদলি করুন এবং মতিউরকে ফিরিয়ে আনুন, তবু আমি আদেশ পরিবর্তন করব না।'

আর ঠিক এটাই হয়েছে। বদিউরকে ২১ অক্টোবর অন্যত্র বদলি করা হয়। আর মতিউর এক মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে ফিরে আসেন।

২০২২ সালের জুলাই মাসে এনবিআর চেয়ারম্যান এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীমও মতিউরকে বদলি করতে ব্যর্থ হন।

কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিল ট্রাইব্যুনাল থেকে মতিউরকে রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেটে বদলির আদেশ জারি করা হয়। 

মতিউর রাজশাহীতে তার নতুন পদে যোগদান করেননি এবং ১৫ দিনের মধ্যে তার বদলি বাতিল করে নতুন আদেশ জারি করা হয়।

এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে এনবিআর চেয়ারম্যানের সম্মতি বা কর কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়াই মতিউরকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার।

তাদের দাবি, মতিউরের যোগাযোগ এবং ক্ষমতা এতটাই বেশি ছিল যে তিনি তার বদলির আদেশ বাতিল করতে পারতেন।

এ কারণে রুটিন বদলি হওয়া ১৩ কর্মকর্তার মধ্যে ১২ জন নতুন কর্মস্থলে যোগ দিলেও মতিউর যোগ দেননি।

এসব বদলির আদেশের অনুলিপি আছে দ্য ডেইলি স্টারের কাছে।

গত সোমবার মতিউরকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে অপসারণ করে সরকার।

দুদকের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে মতিউর ও তার পরিবারের দুই সদস্যের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত।

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh trade deficit July-August FY25

Trade deficit narrows 2.6% in July-April

The country’s trade deficit narrowed by 2.60 percent in the first ten months of the current fiscal year compared to the same period a year ago, thanks to a rise in export earnings coupled with subdued imports..During the July-April period of fiscal year (FY) 2024-25, the trade gap was $18.

5h ago