‘শুধু বাংলাদেশি নয়, বিশ্বের কোটি মানুষের জীবন বদলে দিয়েছেন ড. ইউনূস’
র্যামন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট সুসান্না বি. আফান বলেছেন, 'শুধু লাখো বাংলাদেশি নয়, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জীবন বদলে দিয়েছেন ড. ইউনূস।'
আজ বৃহস্পতিবার ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় এসএমএক্স কনভেনশন সেন্টারে ১৪তম সামাজিক ব্যবসা দিবসের আয়োজনে এ কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের উল্লেখ করে সুসান্না বি. আফান বলেন, 'এই স্বাধীনতার সঙ্গে আসে অনেক চ্যালেঞ্জ, যার মধ্যে রয়েছে লাখো বাস্তুচ্যুত মানুষের পুনর্বাসন।'
তিনি বলেন, 'স্পষ্টতই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও চরম দারিদ্র্যের মুখে পড়েছিল।'
সেই সময় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এটা কঠিন কাজ ছিল, যার জন্য প্রয়োজন উদ্ভাবনী চিন্তা, সীমাহীন অধ্যবসায়, সাহস ও কঠোর পরিশ্রম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন তরুণ শিক্ষক হিসেবে সেই সমস্যা সমাধানে সাহসী উদ্যোগ নেন ইউনূস।'
গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনালগ্নের ইতিহাসের উল্লেখ করে তিনি বলেন, '১৯৭৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে কাছে দারিদ্রপীড়িত জোবরা গ্রামে একটি পাইলট প্রকল্প শুরু করেন ইউনূস। ভূমিহীন ও সুবিধাবঞ্চিতদের ক্ষুদ্রঋণ দেন। যেখান থেকে জন্ম নেয় গ্রামীণ ব্যাংক।'
তিনি উল্লেখ করেন, গ্রামীণ ব্যাংক শুরুর প্রথম কয়েক বছরে ড. ইউনূস প্রবর্তিত ক্ষুদ্রঋণের প্রভাবে এক লাখেরও বেশি দরিদ্র গ্রামবাসীর জীবনমানের উন্নতি হয়। এই ঋণের টাকায় তারা ছোট ছোট সরিষার তেলের কল তৈরি করেন, গরু ও ছাগল কেনেন, শাড়ি ও জাল বুনতে শুরু করেন—এমন নানা ধরনের ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে তাদের জীবনে আর্থিক সচ্ছলতা আসে।
ড. ইউনূসের এই উদ্ভাবনী শক্তি ও রূপান্তরমূলক নেতৃত্ব তাদের চোখ এড়ায়নি উল্লেখ করে সুসান্না বি. আফান বলেন, '১৯৮৪ সালে ৪৪ বছর বয়সী মুহাম্মদ ইউনূস র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পান কমিউনিটি লিডারশিপের মাধ্যমে গ্রামীণ পুরুষদের আর্থিকভাবে সক্ষম করতে তার অগ্রণী প্রচেষ্টা এবং সুনির্দিষ্ট গ্রুপ-পরিচালিত ঋণের মাধ্যমে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য।'
তিনি বলেন, 'ইউনূসের মডেল দেখিয়েছে যে সবচেয়ে দরিদ্র ব্যক্তিরাও তাদের জীবনকে উন্নত করতে পারে এবং দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে। মুহাম্মদ ইউনূস আজ বিশ্বব্যাপী পরিচিত "ক্ষুদ্রঋণের জনক" হিসেবে।'
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ড. ইউনূসের দেখানো পথে কার্যক্রম পরিচালনা করে লাখো মানুষের জীবনমান উন্নয়নের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, 'তারা মুহম্মদ ইউনূসের কাজ থেকে সরাসরি অনুপ্রাণিত এবং তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছে।'
ফিলিপাইনের সপ্তম রাষ্ট্রপতির নামানুসারে প্রদান করা হয় র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার। এটি 'এশিয়ার নোবেল' নামেও পরিচিত।
ড. ইউনূসের র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার প্রাপ্তির ৪০তম বার্ষিকী ও আগামীকাল ২৮ জুন জন্মদিন উপলক্ষে তার হাতে তারই একটি প্রতিকৃতি উপহার হিসেবে তুলে দেন সুসান্না বি. আফান।
ইউনূস সেন্টারের আয়োজনে ও ফিলিপাইনভিত্তিক নেগ্রোস উইমেন ফর টুমরো ফাউন্ডেশনের (এনডব্লিউটিএফ) সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৪তম সামাজিক ব্যবসা দিবসের এই আয়োজন।
দুইদিনব্যাপী এই আয়োজনের উদ্বোধন হয় আজ। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয়—সোশ্যাল বিজনেস: অ্যান এক্সিট রুট ফ্রম দ্য কারেন্ট সেলফ-ডেস্ট্রাকটিভ সিভিলাইজেশন।
আয়োজনের প্রথম দিন স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউনূস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক লামিয়া মোরশেদ।
১৪তম সামাজিক ব্যবসা দিবসে দেওয়া বক্তব্যে ড. ইউনূস বলেন, সারা বিশ্ব ভুল পথে চলছে। সভ্যতাকে ভুল পথে পরিচালিত করা হয়েছে। এই সভ্যতা মানুষকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। বেঁচে থাকতে হলে চাই নতুন সভ্যতা।
বিশ্বের ২৭টি দেশ থেকে ৪০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। দুদিনের এই আয়োজনে বক্তব্য রাখবেন বিশ্বের প্রখ্যাত ১২০ জন বক্তা। সাতটি প্যানেল সেশন, ১০টি কান্ট্রি ফোরাম ও ছয়টি ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হবে এই সম্মেলনে।
দুইদিনব্যাপী সামাজিক ব্যবসা সম্মেলনের পর ২৯ জুন অ্যাকাডেমিয়া ডায়ালগ এবং থ্রি জিরো ক্লাব কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে।
Comments