ওয়ার্ল্ড ফুটবল সামিটের আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পেলেন ড. ইউনূস
ক্রীড়াজগতে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে আজীবন কৃতিত্ব ও অর্জনের জন্য ওয়ার্ল্ড ফুটবল সামিটের (ডাব্লিউএফএস) আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পেলেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
গত ১১ ডিসেম্বর সৌদি আরবের জেদ্দায় এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সৌদি আরবের জেদ্দায় ১২ থেকে ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ওয়ার্ল্ড ফুটবল সামিটের সর্বশেষ সংস্করণের আগে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়।
ওয়ার্ল্ড ফুটবল সামিট বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম বৃহত্তম ক্রীড়া প্ল্যাটফর্ম, যা খেলাধুলায় সুযোগ তৈরি করতে এবং ক্রীড়াজগতে নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে বিশ্বখ্যাত পেশাদারদের সম্মিলিত করে। পেশাদার ফুটবলের এই বিশ্বব্যাপী কমিউনিটি আরও টেকসই ও সর্বোচ্চ স্তরের ফুটবল জগত গড়ে তোলার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড ফুটবল সামিট অ্যাওয়ার্ড ফুটবলের গতিপথকে প্রভাবিত করা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্বীকৃতি প্রদান করে।
এ বছর মোট চারজনকে তাদের অবদানের জন্য ওয়ার্ল্ড ফুটবল সামিট আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দিয়েছে। প্রথম সম্মাননাটি প্রদান করা হয় প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়াও এ বছর এই সম্মাননাপ্রাপ্ত অন্যান্যরা হলেন পেশাদার ফুটবলার ও চিকিৎসক ডা. নাদিয়া নাদিম, প্যালেস্টাইন অ্যাসোসিয়েশন ফর চিলড্রেনস এনকারেজমেন্ট অব স্পোর্টসের ট্রাস্টি হেলেন আলুজাইজি এবং এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল দাতুক সেরি উইন্ডসর জন।
ইউনূস সেন্টারের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রফেসর ইউনূস ও তার অসামান্য সব সামাজিক অবদানের কথা বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়। দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় খেলাধুলা ও সামাজিক ব্যবসার শক্তি ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী কাজ করে যাওয়া প্রতিষ্ঠান ইউনূস স্পোর্টস হাব প্রতিষ্ঠার জন্য তার অবদানকে এই অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়।
২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইউনূস স্পোর্টস হাব সামাজিক ব্যবসার নীতির ভিত্তিতে সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অনুঘটক হিসেবে খেলাধুলার শক্তিকে ব্যবহার করে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত সম্মাননায় উল্লেখ করা হয়, 'প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস একজন অসাধারণ এবং অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব, যিনি সামাজিক পরিবর্তন আনতে এবং কমিউনিটিকে আরও সমৃদ্ধ করতে তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছেন।'
২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী, অলিম্পিক লরেল পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত ড. ইউনূস সামাজিক উন্নয়নের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ব্যক্তিত্ব। ওয়ার্ল্ড ফুটবল সামিট তার অসাধারণ জীবনকালের বিভিন্ন কৃতিত্বকে সামনে তুলে ধরে, যিনি একইসঙ্গে নোবেল শান্তি পুরস্কার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং ইউনাইটেড স্টেটস কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত বিশ্বের সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তির অন্যতম।
বিশ্ব ফুটবল সম্মেলনে প্রফেসর মুহম্মদ ইউনূসকে প্রদত্ত এই সম্মাননা কেবল পৃথিবীকে আরও সুন্দর ও বসবাসযোগ্য করে তুলতে তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও আত্মনিবেদনের স্বীকৃতিই শুধু দেয়নি, বরং খেলাধুলার দিগন্তকে আরও প্রসারিত করতে তার নিরলস প্রচেষ্টাকেও একইভাবে সম্মানিত করেছে।
অনুষ্ঠানে তার নোবেল শান্তি পুরস্কার থেকে শুরু করে অলিম্পিক লরেল এবং ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র দূরীকরণের লক্ষ্যে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য তার অসংখ্য মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের জন্যই শুধু নয়, বিশ্বমানবতার কল্যাণে তার বিভিন্ন অবদানের কথাও তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও জলবায়ু সংকটের অবসান ঘটাতে খেলাধুলা এবং সামাজিক ব্যবসার শক্তিকে সম্মিলিত করতে ইউনুস স্পোর্টস হাব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার অসাধারণ দূরদৃষ্টি।
এ সময় বলা হয়, 'আজ রাতে আমরা তার অসাধারণ কর্ম এবং দীর্ঘস্থায়ী উত্তরাধিকারের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করছি।'
সম্মাননা গ্রহণকালে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, 'বিশ্ব ফুটবল সামিট থেকে প্রদত্ত এই সম্মাননায় আমি সত্যিই গর্বিত। আমরা যখন খেলাধুলা উদযাপন করি, আসুন আমরা খেলাধুলার মাধ্যমে এর ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি মানুষ হিসেবে আমাদের নিজস্ব সম্ভাবনাকেও যেন চিনতে পারি—তা ব্যক্তিগতভাবে হোক বা সম্মিলিতভাবে হোক—যাতে মানুষের জীবনে অর্থবহ পরিবর্তন সূচিত হতে পারে। খেলাধুলা ও তারুণ্য পরস্পর সমার্থক যা স্বপ্ন অর্জনের প্রতিশ্রুতি সৃষ্টি করে। খেলাধুলা তারুণ্যের অব্যবহৃত সামাজিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সমাজের জন্য নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করে।'
তিনি আরও বলেন, 'আসুন আমরা খেলাধুলার সার্বজনীন ভাষা এবং সামাজিক ব্যবসার বাস্তব শক্তিকে এমন একটি ভবিষ্যৎ সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করি যেখানে খেলাধুলা শুধুমাত্র বিনোদন হিসেবেই নয়, বরং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং বেকারত্ব মুক্ত একটি নতুন পৃথিবী তৈরি করতে নিজেকে উৎসর্গ করে। যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আসুন, আমরা আনন্দের সঙ্গে এটি করি।'
Comments