দুই বছরে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ২২ জুন দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর জন্য নির্ধারিত দুটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (এসইজেড) কার্যক্রম দ্রুত শুরুর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
তবে, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন (এপিএসইজেড) বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ধীরগতির কৌশল নিয়েছে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের অভ্যন্তরে ৯০০ একর জমিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের গড়ে তুলতে ২০১৯ সালের অক্টোবরে এপিএসইজেডের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।
২০২২ সালের এপ্রিলে তারা এ উদ্দেশ্যে একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার (জেভি) গড়ে তোলার শর্তে আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, 'আমরা এপিএসইজেডের কাছে একটি খসড়া (জেভি কীভাবে চালানো হবে) পাঠিয়েছিলাম। তবে তাদের কাছ থেকে এখনো চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া পাইনি।'
তিনি বলেন, এসইজেডের মাটি ভর্তি প্রকল্পের জন্য দরপত্র জমা দেওয়ার জন্য ভারত সরকার কর্তৃক নির্বাচিত দুটি ভারতীয় কোম্পানি চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারির দরপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমার মাত্র একদিন আগে তাদের প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছে।
'প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) অধীনে বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিলাম প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য বেজা ভারতের এক্সিম ব্যাংক এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে,' বলেন তিনি।
তার ভাষ্য, 'আরেকটি শর্তে বলা হয়েছে- ভারতীয় এলওসির আওতায় যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ৬৫ শতাংশ যন্ত্রাংশ ভারত থেকে ক্রয় করতে হবে, যা ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের আরেকটি বাধা।'
এই প্রেক্ষাপটে গত দু'বছরে ভারতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর অগ্রগতি স্থবির হয়ে পড়েছে বলে জানান বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান।
যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এপিএসইজেডের কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তারা ধীরগতির কৌশল অনুসরণ করছেন।
এক কর্মকর্তা বলেন, 'যদি এপিএসইজেড এই মুহূর্তে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে, তবে চলমান বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ভারতীয় কোম্পানির কাছ থেকে বিনিয়োগ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।'
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বর্তমান বাস্তবতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হলেও তারা তাদের পরিকল্পনায় অটল থাকবেন।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, তারা মিরসরাইয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত। কারণ ইতোমধ্যে তৃতীয় ভারতীয় এলওসির অধীনে ১১৫ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার অনুমোদন পেয়েছে।
'বেজা এপিএসইজেডকে জমি হস্তান্তর করতে প্রস্তুত, যেন তারা আনুষঙ্গিক নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারে,' বলেন তিনি।
এর আগে, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণসহ ৮৪৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে।
শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, 'এসইজেড বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধান কমে আসবে।'
এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে একটি পৃথক অঞ্চল গড়ে তোলা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ প্রকল্পের মূল কাজ হলো- ভূমি উন্নয়ন শেষ করা এবং সংযোগ সড়ক, প্রশাসনিক ভবন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, টেলিকম নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম, পানি শোধনাগারসহ অন্যান্য বিনিয়োগবান্ধব সুযোগ-সুবিধা স্থাপন করা।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও বলেন, মংলায় আরেক ভারতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। কারণ একটি যৌথ জয়েন্ট ভেঞ্চার গঠন ও প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বেজা ইতোমধ্যে ভারতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য মংলায় ১০০ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে এবং প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করবে আরটেলিয়া কনসাল্টিং।
শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, 'সব আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। আমরা শুধু জয়েন্ট ভেঞ্চার গঠনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি।'
Comments