সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বন্যায় সিলেট নগরী, সুনামগঞ্জ শহর ও দুই জেলার সবকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
এই দুই জেলার গুরুত্বপূর্ণ সব নদী বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)। আজ মঙ্গলবার ভোর থেকে আগামী ৭২ ঘণ্টা সিলেট বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সুরমা নদী আজ বিকেল ৩টায় সিলেটের কানাইঘাট উপজেলা পয়েন্টে ১৩১ সেন্টিমিটার, সিলেট নগর পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা পয়েন্টে ১৬০ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জ শহর পয়েন্টে ৬৪ সেন্টিমিটার এবং দিরাই উপজেলা পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
একই সময়ে কুশিয়ারা নদী সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার অমলসীদ পয়েন্টে ৩৯ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পয়েন্টে ৮৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটের সারি-গোয়াইন নদী জৈন্তাপুর উপজেলার সারিঘাটে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার এবং গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বাপাউবোর দেওয়া তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের লালাখালে ৩৩৩ মিলিমিটার, জাফলংয়ে ৩২৭ মিলিমিটার, কানাইঘাটে ১৯১ মিলিমিটার, জকিগঞ্জে ১৯১ মিলিমিটার, সিলেট নগরীতে ১০০ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জের লাউড়ের গড়ে ১৫৯ মিলিমিটার এবং সুনামগঞ্জ শহর ও ছাতকে ৯৫ মিলিমিটার করে বৃষ্টিপাত হয়েছে।
একই সময়ে বাংলাদেশের উজানে ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ৩৯৮ মিলিমিটার, আসামের ধুব্রিতে ১২১ মিলিমিটার এবং গোয়ালপাড়ায় ১১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যার ঢল আজ সকাল থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জে প্রবেশ করছে।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতিতে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাটের বেশিরভাগ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
এ ছাড়াও প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে সিলেট নগরীর উপশহর, মাছিমপুর, বাগবাড়ি, দরগাহমহল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। সুনামগঞ্জ শহরজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে অন্তত হাঁটু সমান পানির জলাবদ্ধতা।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলার ৮৬৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং পানিবন্দি হয়েছেন অন্তত ৩ লাখ ৭১ হাজার মানুষ। তাদের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন প্রায় ৪ হাজার মানুষ।
সিলেট অঞ্চলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় বিছনাকান্দি, সাদাপাথর, জাফলংসহ সব পর্যটন এলাকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রশাসন।
বন্যা পরিস্থিতি দেখতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় গেলে দেখা যায়, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার টুকেরবাজার এলাকার মোহাম্মদ বেগম ও তার পরিবার সিলেট-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কের উপরে বস্তা দিয়ে চালা তৈরি করে আশ্রয় নিয়েছেন।
একইভাবে রাস্তার উপরেই আশ্রয় নিয়েছে এনামুল হক, সাইস্তা মিয়া, মারুফ আহমদসহ বরলি এলাকার অনেক পরিবার। নৌকার অভাবে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র পর্যন্ত যেতে না পেরে ঝুঁকি নিয়ে এভাবে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে সিলেট নগরীর বড়ইকান্দি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে বন্যার পানি প্রবেশ করায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পরিস্থিতি জেনে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ঘটনাস্থলে গিয়ে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তায় কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর।
এ ছাড়াও বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিসিকের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে দ্রুত কাজে যোগাদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, 'সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যে শহর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সবচেয়ে বেশি প্লাবিত। ইতোমধ্যে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে।'
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, 'সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলা সবচেয়ে বেশি বন্যাকবলিত। এ সব উপজেলা ছাড়াও প্লাবিত সব এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ত্রাণ হিসেবে চাল, ক্ষেত্র বিশেষে রান্না করা খাবার বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা সার্বিক পরিস্থিতির দিকে খেয়াল রেখে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।'
Comments