সেন্টমার্টিনে পণ্যসামগ্রী পোঁছালেও দুরবস্থা কাটেনি

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদে চাল নিতে আসা মানুষ। আজ শনিবার দুপুর ২টার দিকে তোলা। ছবি: তকিসমান খোকা

৯ দিন পর সেন্টমার্টিনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীবাহী জাহাজ ভিড়লেও দ্বীপের বাসিন্দাদের দুরবস্থা কাটেনি। স্থানীয়রা বলছেন, কেউ কেউ পণ্য পাচ্ছেন, আবার অনেকেই পাচ্ছেন না। এ নিয়ে সেন্টমার্টিনবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।

এ বিষয়ে জানতে আজ শনিবার দুপুরে সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা ও স্থানীয় ফার্মেসি মালিক তকিসমান খোকার সঙ্গে দ্য ডেইলি স্টারের কথা হয়।

তিনি বলেন, 'গতরাতে এমভি বারো আউলিয়া সেন্টমার্টিন জেটি ঘাটে পৌঁছার পর সরকারি বরাদ্দের চাল ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়া হয়। আর দ্বীপের ব্যবসায়ীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে যেসব পণ্যসামগ্রী এনেছেন, সেগুলো তারা নিজেদের দোকানে নিয়ে গেছেন।'

চাল নেওয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ। ছবি: তকিসমান খোকা

'আজ ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখি মানুষের অনেক ভিড়, সেখানে অন্য কোনো নিত্যপণ্য নয়, শুধু চাল বিতরণ করা হচ্ছে। তবে যারা চাল পেয়েছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি যে, শুধু সরকারি কার্ডধারী ব্যক্তিদেরই চাল বিতরণ করা হচ্ছে। কার্ড ছাড়া কেউ চাল পাচ্ছেন না', বলেন তিনি।

দোকানে পণ্যসামগ্রীর সরবরাহ কেমন? জানতে চাইলে তকিসমান খোকা বলেন, 'দোকানে এখন পণ্য আছে, তবে দাম আকাশছোঁয়া। এক সপ্তাহ আগে ২৫ টাকায় দুটি ডিম পাওয়া গেলেও এখন একটি ডিমের দামই ২০ টাকা। এক কেজি বেগুন যেখানে ছিল ৬০-৭০ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১০০-১২০ টাকা।'

এরমধ্যে দ্বীপের ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট অধিক মুনাফা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, 'আগে যে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হতো এক হাজার ৪০০ টাকায়, এখন দ্বীপের দুই ব্যবসায়ী মৌলভী আবদুর রহমান ও মাহবুব তা বিক্রি করছেন এক হাজার ৮০০ টাকা করে।'

এসব তদারকির কেউ নেই বলে আক্ষেপ করেন তিনি।

চাল নিয়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ। ছবি: তকিসমান খোকা

জেলেদের কী অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'জেলেদের অবস্থা খুবই দুর্বিষহ। একে তো তারা মিয়ানমারের গুলির ভয়ে সাগরে মাছ ধরতে নামতে পারছেন না। অপরদিকে, সাগরে তাদের মাছ ধরার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। আয়-রোজগারহীন এই ৬৫ দিন জেলেরা কীভাবে পার করবেন তা ভেবেই দিশেহারা।'

'তবে আজ ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখি জেলেদেরও চাল দেওয়া হচ্ছে। ৬৫ দিনের জন্য একেকজনকে মোট ৫০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। ২২০ জনের মতো জেলে সে চাল পেয়েছেন', যোগ করেন তিনি।

সামনে কোরবানির ঈদ, এই সংকটে দ্বীপবাসীর ঈদ কেমন কাটবে? জানতে চাইলে তকিসমান খোকা বলেন, 'এমভি বারো আউলিয়ায় করে কাল কোরবানির পাঁচটি গরু এসেছে বলে শুনেছি। তবে আজ ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে কোনো গরুর দেখা পাইনি। সেগুলো কোথায় আছে কেউ বলতেও পারছেন না।'

গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করে দ্বীপের ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট অধিক মুনাফা করছে। ছবি: তকিসমান খোকা

'খুশির ঈদ চলে এলেও সেন্টমার্টিনের বাসিন্দাদের মনে সুখ নেই। সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছে। আজও সেন্টমার্টিন সৈকত থেকে মিয়ানমারের চারটি যুদ্ধজাহাজ দেখা যাচ্ছে', বলেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এই রুটে চলাচলকারী একাধিক ট্রলার লক্ষ্য করে মিয়ানমার থেকে গুলি চালানো হয়। নাফ নদীর মোহনায় এই ঘটনাগুলো ঘটে। এরপর থেকে সেন্টমার্টিনের পথে কোনো নৌযান ছেড়ে যায়নি।

শাক-সবজির দামও আকাশছোঁয়া। ছবি: তকিসমান খোকা

সর্বশেষ মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশি স্পিডবোট লক্ষ্য করে মিয়ানমার থেকে গুলি চালানো হয়েছে। মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) নাকি বিদ্রোহী আরাকান আর্মি গুলি চালিয়েছে তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।

এতে দ্বীপের বাসিন্দারা তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েন বলে ডেইলি স্টারকে জানান ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান। 

এসব ঘটনার ৯ দিন পর গতরাত সোয়া ১১টার দিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীবাহী জাহাজ এমভি বারো আউলিয়া সেন্টমার্টিন জেটি ঘাটে পৌঁছায়।

 

Comments

The Daily Star  | English

First phase of Ijtema ends with ‘Akheri Munajat’

The final prayer was conducted by Maulana Zubair, top spiritual leader of Shura-e-Nezami, Bangladesh

1h ago