সাইক্লিংয়ে অনন্য উচ্চতার রেকর্ডের পথে রাকিবুল

গতকাল আলুটিলার তারেং পাহাড়ে সাইক্লিং করে ওঠানামা করেন রাকিবুল। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ গেমস ও জাতীয় সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় স্বর্ণজয়ী রংপুরের ছেলে রাকিবুল ইসলাম (৩১) এবার এক ভিন্ন রকম উচ্চতায় ওঠার রেকর্ডে বাংলাদেশকে তালিকাভুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। 

পাহাড় আরোহণের ভাষায় একে বলে 'হাফ এভারেস্টিং' বা এভারেস্টের বেইজ ক্যাম্প পর্যন্ত উচ্চতায় সাইক্লিং করে ওঠা।

শর্ত অনুযায়ী রাকিবুল গতকাল রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ১০ ঘণ্টা ৪২ মিনিট একটানা সাইকেল চালিয়ে খাগড়াছড়ির আলুটিলার 'তারেং' পাহাড়ে (সমতল থেকে চূড়া পর্যন্ত) একই পথে মোট ১৮ বার ওঠা-নামা করেছেন। 

এই ওঠানামার সময় তিনি অতিক্রম করেছেন মোট ৪ হাজার ৮৮২ মিটার উচ্চতা। এতে পথ অতিক্রম করতে হয়েছে মোট ১৪৫ কিলোমিটার।

বৃষ্টির মধ্যে সাইকেল চালিয়ে পাহাড়ে ওঠেন রাকিবুল। ছবি: সংগৃহীত

রাকিবুলের এই প্রচেষ্টার জন্য সব তথ্য-উপাত্ত এভারেস্টিং কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে এভারেস্টিং কর্তৃপক্ষ তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে সব ঠিক থাকলে রাকিবকে 'হাফ এভারেস্টিং' এর মর্যাদা দেবে।
সেই সঙ্গে তাদের হল অব ফেমে রাকিবুলের পাশে লেখা হয়ে যাবে বাংলাদেশের নাম।

এভারেস্টিং অথরিটি দুঃসাহসিক সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় সাইক্লিস্টদের স্বীকৃতি দানকারী বিশ্বজনীন স্বীকৃত একটি সংস্থা।

এভারেস্টিং কর্তৃপক্ষের মতে 'এভারেস্টিং' হলো পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন পর্বত আরোহণের চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যেকোনো পাহাড়ে যদি কেউ একটানা পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে ওঠা-নামা করে এভারেস্টের সমান উচ্চতা অর্থাৎ ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার অতিক্রম করে তার নাম লেখা হয়ে যাবে হল অব ফেমে।

যদি কেউ এই উচ্চতার অর্ধেক অতিক্রম করতে পারে তবে, তিনি সাইক্লিং করে এভারেস্টের বেইজ ক্যাম্পে ওঠার মর্যাদা পাবেন। রাকিবুল মূলত এই উচ্চতায় ওঠার চেষ্টা করেছেন। 

রাকিবুল জানান, বাংলাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত কেউই এই রেকর্ডের আনুষ্ঠানিক চেষ্টা করেননি। তিনিই প্রথম এই রেকর্ডের জন্য অফিসিয়ালি অ্যাটেম্প নিলেন। এর আগে নেপাল থেকে একজন এবং ভারত থেকে বেশ কয়েকজন এই রেকর্ড করেছেন।

রাকিবুলের কোনো অর্জনই সহজ ছিল না। এর আগে যখন সাইক্লিংয়ে গিনেজ রেকর্ড করেন, তখনো আবহাওয়া অনেক বৈরী ছিল। গত বছর রাকিব ডুয়াথলনের বিশ্ব আসরে অংশ নিতে যান, তখনো প্রথম প্রচেষ্টায় তিনি ভিসা পাননি। 

গতকাল সকালে তিনি যখন সাইকেল নিয়ে পাহাড়ে আরোহণ শুরু করেন তখন হঠাৎ করে শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি, সঙ্গে পাহাড় ধস।

সাইকেল চালিয়ে অনন্য রেকর্ডের পথে রাকিবুল। ছবি: সংগৃহীত

তবে কোনো বাধাই রাকিবকে আটকাতে পারেনি। প্রবল প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে রাকিবুল নিজের লক্ষ্যের দিকে ছুটে চলেছেন বাংলাদেশের এক নিঃসঙ্গ শেরপা রাকিবুল ইসলাম। 

রাকিবুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল সকালে যখন সাইকেল নিয়ে পাহাড়ে ওঠা শুরু করি, তখন বাতাসে ১০০ শতাংশ আর্দ্রতা। বৃষ্টির পর শুরু হয় ভয়াবহ গরম। মনে হচ্ছিল যেন ওভেনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। গরমে মনে হচ্ছিল অনন্ত যাত্রায় নেমেছি।'

'পাহাড়ে ঝড়-বৃষ্টি চলছেই, সাথে ভূমিধস। এর মধ্যে এক, দুই করে মোট ১৮ বার সাইক্লিং করে খাগড়াছড়ি জিরোমাইল থেকে 'তারেং' (সমতল থেকে ২৬০ মিটার উঁচু) পাহাড়ে ওঠানামা করেছি,' বলেন রাকিব।

কেন এমন প্রচেষ্টা, জানতে চাইলে রাকিবুল বলেন, 'বিশ্বে সাইক্লিংয়ের আত্মমর্যাদার যে লড়াই সেখানে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। এই ধরনের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ অনেক কম। সে কারণেই আমার এই প্রচেষ্টা।'

খাগড়াছড়িতে এই রেকর্ডের প্রচেষ্টা সম্পর্কে রাকিবুল বলেন, 'এই এলাকার মানুষ অনেক পরিশ্রমী। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা অনেক ভারী বোঝা নিয়ে পাহাড়ে ওঠানামা করে। তাদের দেখেই আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি এই কঠিন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার।'

রাকিবুল ২০২১ সালে বাংলাদেশ গেমসে স্বর্ণ জেতেন। ২০২২ সালে তিনি জাতীয় সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। একই বছর তিনি মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত পাওয়ারম্যান ডুয়াথলন (সাইক্লিং ও রানিং) এশিয়া চ্যাম্পিয়নশিপে বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। 

এরপর ২০২৩ সালে তিনি সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ডুয়াথলন চ্যাম্পিয়নশিপে বয়সভিত্তিক ক্যাটাগরিতে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন।

বর্তমানে চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি গত তিন বছর ধরে খাগড়াছড়ি পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ২০২৫ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে ডুয়াথলন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে একটি মর্যাদার পুরষ্কার এনে দিতে চান বলে জানান রাকিবুল।

 

Comments

The Daily Star  | English

Protests disrupt city life, again

Protests blocking major thoroughfares in Karwan Bazar and Shahbagh left the capital largely paralysed

1h ago