খাগড়াছড়ির যে ৫ স্থান ঘুরতে ভুলবেন না

খাগড়াছড়ি
ছবি: ইউএনবি

পাহাড়, ঝরনা, আঁকাবাঁকা পথ, সবুজের সমারোহ, লেক সমৃদ্ধ করেছে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িকে। শীত মানেই খাগড়াছড়িতে উপচে পড়া ভিড়। ভোরের কুয়াশায় পাহাড়ের রূপ যেন আরও বৃদ্ধি পায়।

হাতে অল্প সময় থাকলেও খাগড়াছড়ির দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখা সম্ভব। 

আলুটিলা গুহা

আলুটিলা গুহা খাগড়াছড়ির অন্যতম জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। এটি আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রে অবস্থিত এক প্রাকৃতিক গুহা। এটিকে দেবতার গুহাও বলা হয়ে থাকে। যারা রোমাঞ্চ পছন্দ করেন তাদের দারুণ লাগবে এই গুহা।

খাগড়াছড়ি
আলুটিলা গুহা। ছবি: সংগৃহীত

আলো প্রবেশ করতে পারে না বিধায় গুহাটি খুবই অন্ধকার ও শীতল। এজন্য ভেতরে প্রবেশ করতে টর্চলাইট বা মশাল জ্বালিয়ে নিতে হয়। কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল এ গুহায় মশাল জ্বালিয়ে প্রবেশ করলে দারুণ এক অনুভূতি হবে। গুহার এপাশ থেকে ওপাশ যেতে সময় লাগে প্রায় ১৫ মিনিট। দৈর্ঘ্য ৩৫০ ফুট। ৪০ টাকা প্রবেশ ফি দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। খাগড়াছড়ি সদর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে মাটিরাঙ্গা উপজেলায় এটি অবস্থিত।

রিসাং ঝরনা

আলুটিলা গুহার খুব কাছেই রিসাং ঝরনার অবস্থান। মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে। এ ঝরনার কাছেই আবার আরেকটি ঝরনা আছে, যার দূরত্ব ২০০ গজও হবে না। প্রায় ৩০ মিটার উঁচু পাহাড় থেকে আছড়ে পড়া পানি দেখলেই পানিতে নামতে ইচ্ছা করবে। শরীর জুড়িয়ে নিতে ইচ্ছা হবে ঝরনার প্রবাহমান ধারায়।

খাগড়াছড়ি সদর থেকে ঝরনার দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। আসা যাবে বাস বা প্রাইভেটকার অথবা স্থানীয় যানবহনে। মোটরসাইকেলে আলুটিলা থেকে ভাড়া নেবে জনপ্রতি ৫০ টাকা আর ফেরার সময় নেবে জনপ্রতি ১০০ টাকা।

হাতিমাথা

হাতিমাথা মূলত একটি দুর্গম পাহাড়। এর চূড়া থেকে আশেপাশের অন্যান্য পাহাড়, পাহাড়ের পাদদেশে সবুজ গাছপালা, মেঘ পাহাড়ের লুকোচুরি খেলাসহ পাহাড়িদের নির্মিত ঘর-জীবনবৈচিত্র্য দেখা যায়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এ পাহাড়ে ৩০৮ ফুট লম্বা লোহার সিঁড়ি তৈরি করেছে। এই দুর্গম সিঁড়িপথ দিয়ে ১৫ গ্রামের বাসিন্দারা চলাচল করে। অনেকের কাছে এটি স্বর্গের সিঁড়ি নামে পরিচিত।

খাগড়াছড়ি
হাতিমাথা। ছবি: সংগৃহীত

এখানে যেতে চাইলে সবচেয়ে ভালো হয় একজন গাইড নিলে। কারণ প্রথম কেউ যেতে চাইলে পথ বিভ্রাট হতে পারে। খাগড়াছড়ি সদর থেকে পানছড়ি যাওয়ার পথে জামতলী যাত্রী ছাউনি নামতে হবে। এরপর জামতলী থেকে চেঙ্গী নদী পার হয়ে প্রায় দেড় ঘন্টা ট্রেকিং করে এই পাহাড়ে যেতে হবে।

বৌদ্ধ মন্দির

খাগড়াছড়ির পানছড়িতে অবস্থিত এ মন্দিরটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় বৌদ্ধ মন্দির। শান্তিপুর গভীর অরণ্যে প্রায় ৬৫ একর জায়গায় জুড়ে এ মন্দিরটি বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র তীর্থস্থান। ৫০ ফুট উচ্চতার বিশাল এক নান্দনিক বৌদ্ধের প্রতিকৃতি আছে, এখানে যা তৈরি করতে প্রায় চার বছর সময় লেগেছে। ধর্মীয় আচার পালনের জন্য সকাল ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পর্যটক প্রবেশ নিষেধ।

খাগড়াছড়ি সদর থেকে এ বৌদ্ধ মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। সদর থেকে জিপ বা মাহেন্দ্র ভাড়া নিয়ে এখানে আসা যায়।

নিউজিল্যান্ড পাড়া

খাগড়াছড়ি সদর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে নিউজিল্যান্ড পাড়া অবস্থিত। পানখাইয়া পাড়া এবং পোরাছড়ার কিছু অংশ নিউজিল্যান্ডের মতো হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে এটি নিউজিল্যান্ড পাড়া হিসেবে পরিচিত। এমনকি পানখাইয়া পাড়া থেকে পোরাছড়া গ্রামে যাওয়ার রাস্তাটির নামকরণ স্থানীয়রা করেছেন নিউজিল্যান্ড সড়ক নামে।

সমতল ভূমিতে সবুজ শস্যখেত, সাদা মেঘের ভেলা ও পাহাড় মিলে দারুণ এক প্রাকৃতিক ল্যান্ডস্কেপ এ স্থানটি। নয়নাভিরাম এ প্রকৃতিতে চোখ রাখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে।

ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি সরাসরি বেশ কিছু বাস চলাচল করে। এরমধ্যে জনপ্রিয় হলো শান্তি পরিবহন। এ ছাড়াও হানিফ, শ্যামলী, ঈগল পরিবহন ইত্যাদি বাস চলে। বাসভেদে ও এসি-নন এসিভেদে এসব বাসের ভাড়া ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা।

খাগড়াছড়ি
ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

খাগড়াছড়িতে বেশি মানুষ গেলে কম টাকা খরচ হয়। যাওয়ার পর ১০-১৫ জন মিলে চাঁদের গাড়ি বা জিপ গাড়ি ভাড়া করে দর্শনীয় স্থান একসঙ্গে দেখতে পারেন।

জিপ বা চাঁদের গাড়ি ভাড়া নেবে তিন থেকে চার হাজার টাকা। চার-পাঁচ জন হলে সিএনজিচালিত অটোরিকশাও ভাড়া নেওয়া যায়। ভাড়া নেবে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। একা হলে একদিনের জন্য মোটরসাইকেল ভাড়া নেওয়া যায়। তবে অবশ্যই আগে দরদাম করে ভাড়া মিটিয়ে নিতে হবে।

যেখানে থাকবেন

খাগড়াছড়িতে থাকার জন্য বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। এরমধ্যে পর্যটন মোটেল, হোটেল গাইরিং, অরণ্য বিলাশ, গিড়ি থেবার, হোটেল ইকো ছড়ি উল্লেখযোগ্য। এসব হোটেলে ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকায় থাকা যায়।

যা খাবেন

যেহেতু এটা পাহাড়ি এলাকা তাই পাহাড়ি খাবারের স্বাদ নিতে ভুলবেন না। পাহাড়ি খাবারের মধ্যে জুম সবজি, বাঁশ কোড়ল, ব্যাম্বু চিকেন, ব্যাম্বু ফিশ, জুম ডাল, পাজন ইত্যাদির স্বাদ নিতে পারেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Reimagining Dhaka’s parks: Rasulbagh shows the way

Tucked into the narrow confusing lanes of Lalbagh is Rasulbagh Children’s Park -- a rare slice of serenity in a city that often forgets to breathe.

18h ago