সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষতি

সিলেটের গোয়াইনঘাট সড়ক থেকে ছবিটি আজ রোববার তোলা। ছবি: সংগৃহীত

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোতেও বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে সিলেটের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পাহাড়ি ঢলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জে পানি কমতে থাকায় ক্ষতির পরিমাণ দৃশ্যমান হচ্ছে। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে পানি কমতে শুরু করায় ভাঙনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ২৭ থেকে ২৯ মে তিন দিনে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে মে মাসে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। ৩০ মে'র পর থেকে বৃষ্টি অনেক কমে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত হয়নি।

তিনি বলেন, নদীগুলিতে পানি কমছে। আশা করছি ধীরে ধীরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

তিনি জানান, গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় কানাইঘাটে সুরমা নদীতে বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল আজ প্রবাহিত হচ্ছে ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ পয়েন্টে পানি গতকাল ১৯৩ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আজ তা প্রায় ১২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ভারী বর্ষণ না হলে আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে বলেও জানান তিনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কোনো কোনো এলাকায় পানি নেমে যাওয়ায় ভাঙা সড়কগুলো ধীরে ধীরে ভেসে উঠছে। দরবোস্ত-কানাইঘাট সড়কের রায়গড় অংশ এবং কানাইঘাট উপজেলার কানাইঘাট-সুরিঘাট সড়কের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া গোয়াইনঘাট উপজেলার গোয়াইনঘাট-সালুটিকর, গোয়াইনঘাট-জাফলং ও রাধানগর-জাফলং সড়কে বড় বড় গর্ত ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

দরবোস্ত এলাকার বাসিন্দা মিফতা মিয়া জানান, সিলেটে নতুন করে বৃষ্টি না হলেও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত রয়েছে। তাই কিছু এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও আমাদের এলাকার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি সামান্য পরিবর্তন হয়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, বন্যা কবলিত অনেক গ্রামের মাটির ঘর ভেঙে গেছে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, তলিয়ে গেছে ফসল। গ্রামের প্রায় সব রাস্তাই ভাঙা। রান্নাঘর পানির নিচে থাকায় অনেকেই রান্না করতে পারছেন না।

গোয়াইনঘাটের ইউএনও মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মনিটরিং সেলের কর্মকর্তাসহ পিআইও, কৃষি কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তা, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও ১৩ জন ট্যাগ কর্মকর্তা বন্যা কবলিত ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মাঠ পরিদর্শন করেন।

বন্যাপ্রবণ এলাকায় বাসিন্দাদের তাদের বাড়িঘর, বাজার ও দোকানপাট নিরাপদে সরিয়ে নিতে সতর্ক করা হয়েছে।

উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে মোট ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এবং বন্যাপ্রবণ এলাকায় লোকজনকে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বন্যা কবলিত এলাকায় ৪০০ টন চাল, দেড় লাখ টাকা, ১ হাজার ২৫০ বস্তা শুকনো খাবার, ১৮ লাখ টাকা শিশু ও গোখাদ্য কেনার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, বরাদ্দের কোনো ঘাটতি নেই। তবে আকস্মিক বন্যায় নৌকা সংকটের কারণে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

10 die of dengue

886 hospitalised in the last 24 hours

48m ago