আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত সিলেটের ৪ উপজেলা, ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি

জৈন্তাপুর উপজেলার সিলেট-তামাবিল সড়কের রাঙপানি এলাকায় গতরাত থেকে পানি বাড়ায় ঘরবাড়ি ছেড়ে সড়কের পাশে ট্রাকে আশ্রয় নিয়েছে ৬টি পরিবার। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

সিলেটের জৈন্তাপুর ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দা সাজিদুর রহমান সাজন গতরাতে ফেসবুকে লিখেছেন, 'লাশ উদ্ধার অইমু হয়তো, জীবিত উদ্ধার অইতে পারতাম না, হয়তো এইটা শেষ পোস্ট।'

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট প্রবল বৃষ্টিতে ভারত সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলায় সারি নদী আগেই বিপৎসীমার ওপরে ছিল। সেই সঙ্গে রাতে মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নামা ঢলে দ্রুতই তলিয়ে যেতে থাকে উপজেলা।

তবে দ্রুতই উদ্ধার অভিযান শুরু করে উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়রা। ভোররাতে উদ্ধার হন সাজিদুর রহমান সাজনের মতো আকস্মিক বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়া হাজারো মানুষ।

পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যার একইচিত্র সিলেটের গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলাতেও। সব মিলিয়ে প্রায় ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন এই চার উপজেলায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় সারি নদী একদিনে ২০২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ছবি: শেখ নাসির/স্টার

এ ছাড়াও, সুরমা নদী কানাইঘাট উপজেলা পয়েন্টে ১৯৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৬৬ সেন্টিমিটার ওপর, কুশিয়ারা নদী জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে ২২০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে ৬৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যার ফলে সিলেটের নদ-নদীর পানি দ্রুত বেড়েছে।

জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, উপজেলার টিলা এলাকা ছাড়া বাকিসব এলাকাই প্লাবিত হয়েছে। কোথাও কোথাও মানুষের বাড়ির ছাউনি পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন।

তিনি বলেন, 'রাতে অন্ধকার ও প্রবল স্রোতের কারণে উদ্ধার অভিযানে সমস্যা হচ্ছিল। ভোর থেকে ব্যাপকভাবে উদ্ধার অভিযান চলছে। মানুষ উদ্ধার করা গেলেও গৃহপালিত পশুপাখির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।'

লিয়াকত আলী বলেন, 'চাল বরাদ্দ থাকলেও রান্না করে খাওয়ার মতো শুকনো জায়গা নেই। আমরা বন্যা-কবলিত মানুষের জন্য আপাতত শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করছি।'

ছবি: শেখ নাসির/স্টার

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যায় উপজেলার ৭৫ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। জাফলং-বিছনাকান্দিসহ সব পর্যটন এলাকার পর্যটকবাহী নৌকা নিয়ে উদ্ধার অভিযান চলছে।'

তিনি বলেন, 'বন্যার পূর্বাভাস থাকায় আমরা আগেই ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করে রেখেছিলাম। কাল রাতেই ১৬৭টি পরিবার আশ্রয় নেয়, সকাল থেকে যা ২৫০ ছাড়িয়েছে। অনেক মানুষ নিজের বাড়িঘর ছেড়ে পার্শ্ববর্তী উঁচু বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছেন।'

ইউএনও আরও জানান, বন্যা-কবলিত মানুষের জন্য আগের বরাদ্দ ৪৮ টন চালের সঙ্গে নতুন ১৫ টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও, ২০০ প্যাকেট শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বন্যা কবলিতদের ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসাইন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যা পরিস্থিতি গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি খারাপ। স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। প্রয়োজনে তারাও উদ্ধার অভিযানে যোগ দেবে।'

তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক হয়েছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল-রুম খোলা হয়েছে। বন্যা-কবলিত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Postgrad doctors block Shahbagh demanding stipend hike

The blockade resulted in halt of traffic movement, causing huge suffering to commuters

56m ago