নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাফায় ইসরায়েলি হামলা চলছেই, আজ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক

রাফার আশ্রয়শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মরদেহ। ছবি: রয়টার্স
রাফার আশ্রয়শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মরদেহ। ছবি: রয়টার্স

রাফার এক আশ্রয়শিবিরে ইসরায়েলি বিমানহামলায় ৪৫ জন নিহতের পর আজ মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের একটি জরুরি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

মঙ্গলবার ভোরে রাফায় উপস্থিত এএফপির সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, এ অঞ্চলে রাতভর হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।

এর আগে, গত রোববার দিবাগত রাতে রাফায় 'নিরাপদ অঞ্চল' হিসেবে ঘোষিত একটি শরণার্থীশিবিরে বিমানহামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। তাল আস-সুলতান এলাকায় তাঁবু দিয়ে গড়ে তোলা শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলের এই হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ২৫০ জন। হামলার পর শরণার্থীশিবিরের তাঁবুগুলোয় আগুন ধরে যায়। এতে অনেকে জীবন্ত পুড়ে মারা যান।

রাফার আশ্রয়শিবিরে ইসরায়েলি হামলার পর। ছবি: রয়টার্স
রাফার আশ্রয়শিবিরে ইসরায়েলি হামলার পর। ছবি: রয়টার্স

অনেক আরব দেশ এ ঘটনাকে নির্বিচার হত্যা হিসেবে বর্ণনা করে ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) বাধ্যতামূলক আদেশ মেনে অবিলম্বে রাফায় অভিযান বন্ধে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব সম্প্রদায়।

ইসরায়েলের দাবি, হামাসের দুই নেতাকে হত্যার উদ্দেশে তারা এই হামলা চালায়।

ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা বেসামরিক নাগরিক নিহতের 'মর্মান্তিক দুর্ঘটনার' তদন্ত করছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, 'গাজায় কোনো নিরাপদ জায়গা নেই। এই আতঙ্কজনক পরিস্থিতির অবসান হতেই হবে।'

জাতিসংঘের ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা সংস্থার (ওসিএইচএ) প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, 'রাফার এই ঘটনাকে "ভুল" বলে অভিহিত করা হয়েছে। যারা মারা গেছেন, তাদের জন্য যারা শোক করছেন আর যারা অন্যদের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, তাদের কাছে এই বার্তার কোনো অর্থ নেই।'

আলজেরিয়ার আহ্বানে আজ জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক হতে যাচ্ছে।

কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, এই বৈঠকে মূলত ইসরায়েলের এই হামলা নিয়ে আলোচনা হবে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির পার্লামেন্টকে জানান, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষিত রাখার 'সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা' সত্ত্বেও নিহতের ঘটনাটি ঘটেছে।

রোববার শেষ রাতে ইসরায়েল এই ভয়াবহ হামলা চালায়। এর কয়েক ঘণ্টা আগে তেল আবিবের উদ্দেশে বেশ কয়েকটি রকেট ছুঁড়েছিল হামাস, যার বেশিরভাগই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়।

রাফার আশ্রয়শিবিরে ইসরায়েলি হামলার পর মানুষ সেখান থেকে সরে যাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
রাফার আশ্রয়শিবিরে ইসরায়েলি হামলার পর মানুষ সেখান থেকে সরে যাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানায়, তারা রাফায় হামাসের একটি সামরিক কম্পাউন্ডে হামলা চালিয়েছে এবং এই হামলায় হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইয়াসিন রাবিয়া ও খালেদ নাগার নিহত হয়েছেন।

গাজার বেসামরিক সুরক্ষা এজেন্সি জানায়, এই হামলার ফলে রাফার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ইউএনআরডব্লিউএর আশ্রয়শিবিরে আগুনের সূত্রপাত হয়।

এজেন্সির প্রধান মোহাম্মাদ আল-মুঘাইইর বলেন, 'আমরা পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া মরদেহ ও দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া অঙ্গ দেখেছি। আমরা মানুষের হাত পা উড়ে যেতে দেখেছি, আহত শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের দেখেছি।'

মুগাইইর জানান, ইসরায়েলের নিরবচ্ছিন্ন হামলার কারণে উদ্ধার কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে। ইসরায়েলি অবরোধের কারণে আগুন নেভানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি ও আগুন নির্বাপক সরঞ্জাম চালানোর জন্য জ্বালানির অভাব দেখা দেয়।

ভোটগ্রহণ বিলম্বিত হওয়ার ফলে ফাঁকা হয়ে পড়ে নিরাপত্তা কাউন্সিলের সম্মেলনকক্ষ। ছবি: রয়টার্স
ভোটগ্রহণ বিলম্বিত হওয়ার ফলে ফাঁকা হয়ে পড়ে নিরাপত্তা কাউন্সিলের সম্মেলনকক্ষ। ছবি: রয়টার্স

আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ইসরায়েলকে রাফায় হামলা বন্ধের নির্দেশ দিলেও এই রায়কে 'অস্পষ্ট' বলে অভিহিত করে হামলা অব্যাহত রেখেছে তেল আবিব।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ১৭০ জন নিহত হন। হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৫২ জন। জিম্মিদের মধ্যে ১২১ জন এখনো গাজায় আছেন এবং ৩৭ জন ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন।

এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে সেদিনই গাজার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ও নির্বিচার বিমানহামলা শুরু করে ইসরায়েল। পরবর্তীতে স্থলবাহিনীও এতে যোগ দেয়। গত ৭ মাসে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা অন্তত ৩৬ হাজার ৫০। এদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

Comments

The Daily Star  | English
FY2026 Budget,

What are the likely tax and duty measures in FY26?

These include steps to reduce the cost of doing business and align tax policies with the requirements of LDC graduation

1h ago