আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায় 'অস্পষ্ট', সুযোগ নিচ্ছে ইসরায়েল

আইসিজের রায়ের পরও রাফায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। ছবি: রয়টার্স
আইসিজের রায়ের পরও রাফায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। ছবি: রয়টার্স

 

শুক্রবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ইসরায়েলকে রাফায় অভিযান বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। তা সত্ত্বেও, রাফায় হামলা বন্ধ করেনি দেশটি। তাদের যুক্তি, জাতিসংঘের এই আদালতের রায় স্পষ্ট নয় এবং এই নির্দেশনায় রাফায় অভিযান বন্ধের কথা সরাসরি বলা হয়নি।

গতকাল শনিবার এই তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।

বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকার যুদ্ধবিরতির দাবির বিপরীতে শুধু রাফায় হামলা বন্ধের একটি অস্পষ্ট রায় দিয়েছে আইসিজে, যার সুযোগ নিচ্ছে ইসরায়েল। 

আইসিজের রায়ে বলা হয়েছে, গণহত্যা প্রতিরোধ ও গণহত্যার অভিযোগের শাস্তি সংক্রান্ত সনদের বাধ্যবাধকতার অংশ হিসেবে এবং রাফা প্রদেশের বেসামরিক মানুষদের ক্রমবর্ধমান দুর্দশার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে ইসরায়েলকে অবিলম্বে রাফায় সামরিক অভিযান বা অন্য যেকোনো ধরনের উদ্যোগ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, যার ফলস্বরূপ গাজার এই অঞ্চলে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা আংশিক বা পুরোপুরি নির্মূল হতে পারেন।'

২৪ মে আইসিজে দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদনের বিপরীতে রায় দেয়। ছবি: রয়টার্স
২৪ মে আইসিজে দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদনের বিপরীতে রায় দেয়। ছবি: রয়টার্স

অর্থাৎ, এই রায়ে শুধু সে ধরনের হামলা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে ফিলিস্তিনিরা আংশিক বা সম্পূর্ণ নির্মূল হতে পারেন। ইসরায়েলি ব্যাখ্যা মতে, সীমিত আকারে বা গণহত্যার কারণ না ঘটিয়ে অভিযান চালানোর বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা, এমন কী স্পষ্ট কোনো নির্দেশনাও নেই এই রায়ে।

গাজায় নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি চালু ও ইসরায়েলি আগ্রাসনকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করার দাবি জানিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা আবেদন করেছিল আইসিজের কাছে। শুক্রবারের রায়ের সঙ্গে এই চাহিদার আকাশ-পাতাল ব্যবধান রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানান, তারা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নির্দেশনাকে বিবেচনায় নিয়েছে। তাদের দাবি, এই আইসিজের রায়ে হামলা বন্ধের কথা বলা হয়নি। 

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তাচি হানেগবি স্থানীয় গণমাধ্যম চ্যানেল ১২ নিউজকে বলেন, 'তারা আমাদেরকে যা করতে বলেছে, তা হল, রাফায় গণহত্যা না চালাতে। আমরা কোনো গণহত্যা চালাইনি এবং আমরা গণহত্যা চালাব না।'

রাফা অভিযান অব্যাহত থাকবে কী না, এ প্রশ্নের জবাবে হানেগবি বলেন, 'আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, আমাদের নিজেদেরকে প্রতিরক্ষা দেওয়ার অধিকার আছে। আদালত আমাদেরকে নিজেদের সুরক্ষা দেওয়া অব্যাহত রাখতে কোনো বাধা দিচ্ছে না, যা এই অধিকারের স্বপক্ষে অকাট্য প্রমাণ।'

হানেগবির মন্তব্য নিয়ে আইসিজে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। হামাসের কাছ থেকেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

অপর এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা আইসিজের রায়ের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, শর্তসাপেক্ষে এই রায় দেওয়া হয়েছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে এই কর্মকর্তা বলেন, 'রাফা অভিযান নিয়ে রায়টি কোনো সাধারণ রায় নয়।'

রাফায় খাবার ও পানি সঙ্কটে ভুগছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স
রাফায় খাবার ও পানি সঙ্কটে ভুগছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স

তিনি বলেন, 'গাজার বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করার জন্য আমরা কখনোই রাফায় বা অন্য কোথাও কোনো সামরিক অভিযান চালাইনি। আংশিক বা সম্পূর্ণ নির্মূলের উদ্দেশ্যেও নয়। এবং এ ধরনের কোনো অভিযান আমরা কখনো চালাবও না।'

রাফায় অভিযানকে আইডিএফ 'হামাসের সামরিক শক্তিমত্তার সর্বশেষ চিহ্ন' মুছে ফেলার উদ্যোগ হিসেবে অভিহিত করেছে। এই অভিযান আন্তর্জাতিক মহলের নিন্দার মুখে পড়েছে কারণ এ অঞ্চলেই উত্তর ও মধ্য গাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিয়েছেন।

ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, তারা শনিবার রাফাসহ গাজা উপত্যকার বিভিন্ন অংশে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে।

আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাফায় হামাসের একটি অবস্থান ধ্বংস করা হয়েছে। এখান থেকে ইসরায়েলি সেনাদের উদ্দেশে গুলি ছুড়েছিল হামাসের যোদ্ধারা। এ ছাড়া বেশ কিছু সুড়ঙ্গপথ ও অস্ত্রের মজুদ ধ্বংসেরও দাবি জানিয়েছে দেশটি।

রাফার শাবৌরা এলাকায় শুক্রবার ইসরায়েল বড় আকারে বিমানহামলা চালায়। এ সপ্তাহের শুরুতে হামাসের বিরুদ্ধে রাফার এই অংশে অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ১৭০ জন নিহত হন। হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৫২ জন। জিম্মিদের মধ্যে ১২৪ জন এখনো গাজায় আছেন এবং ৩৭ জন ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন।

এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে সেদিনই গাজার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ও নির্বিচার বিমানহামলা শুরু করে ইসরায়েল। পরবর্তীতে স্থলবাহিনীও এতে যোগ দেয়। গত ৭ মাসে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা অন্তত ৩৫ হাজার ৯০৩। এদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

Comments

The Daily Star  | English

Doubts growing about interim govt’s capability to govern: Tarique

"If we observe recent developments, doubts are gradually growing among various sections of people and professionals for various reasons about the interim government's ability to carry out its duties."

2h ago