উত্তর গাজার শরণার্থী শিবির, হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলের ট্যাংক-বিমান হামলা
যুদ্ধবিরতির আহ্বান,বাইডেনের অস্ত্রের চালান আটকে দেওয়ার হুশিয়ারি, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার হুমকি—কোনো কিছুই দমাতে পারছে না ইসরায়েলকে। উত্তর গাজায় বড় আকারে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল; ধ্বংস করেছে শরণার্থী শিবির, আবাসিক ভবন ও হাসপাতাল।
গতকাল মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকায় একটি হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকায় ট্যাংক ও বিমানহামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
রাফার ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বিমানহামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
উত্তর ও দক্ষিণ গাজায় একইসঙ্গে হামলা চলতে থাকায় নতুন করে হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এ ছাড়া বড় আকারে মানবিক ত্রাণ বিতরণে বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। যার ফলে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বাড়ছে।
৭৫ বছর আগে নির্মিত জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের কাছে অবস্থিত স্থানীয় বাজারে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বুলডোজার ব্যবহার করে দোকান ও অন্যান্য ভবন ভেঙে দিয়েছে। এলাকাবাসীরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে এখানে চলছে ইসরায়েলি অভিযান।
কয়েক মাস আগে ইসরায়েল দাবি করেছিল, তারা এই শিবিরকে 'হামাসমুক্ত' করেছে। কিন্তু এবার তাদের দাবি, এখানে হামাসের যোদ্ধারা পুনর্গঠিত হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং এই উদ্যোগ ব্যর্থ করতে এই অভিযান।
ইসরায়েল দাবি করেছে, গত কয়েকদিনে তারা গাজা উপত্যকায় 'জঙ্গিদের ৭০টি লক্ষ্যবস্তু' ধ্বংস করেছে, যার মধ্যে আছে সামরিক কমপাউন্ড, অস্ত্রাগার, মিসাইল লঞ্চার ও নজরদারি চৌকি।
ফিলিস্তিনি চিকিৎসাকর্মীরা জানান, জাবালিয়ার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। যার ফলে আতঙ্কিত চিকিৎসাকর্মীরা রোগীদের স্ট্রেচার ও বেডে করে হাসপাতালের বাইরের সড়কে সরে আসতে বাধ্য হন।
হাসপাতাল প্রধান হুসাম আবু সাফিয়া জানান, হাসপাতালে পরপর তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। দুইটি জরুরি বিভাগের প্রবেশপথে আর অপরটি পাশের এক ভবনে আঘাত করে।
জাবালিয়ার আল-আওদা হাসপাতালে টানা তিন দিন ধরে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি ট্যাংক। ইতোমধ্যে সেখানে খাবার পানি শেষ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রস আধানম গেব্রিয়াসুস জানান, উত্তর গাজার অসুস্থ ও আহত মানুষের জন্য চিকিৎসার বিকল্প শেষ হয়ে আসছে।
'উত্তর গাজায় শুধু দুইটি হাসপাতাল চালু আছে', যোগ করেন তেদ্রস।
দক্ষিণ গাজায় বিমানহামলায় খান ইউনিসের এক বাড়িতে তিন শিশু ও রাফার এক বাড়িতে তিন শিশুসহ অন্তত পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
রাফায় পূর্ণাঙ্গ স্থল অভিযান না চালালেও সেখানে নিয়মিত বিমানহামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
মে মাসে রাফায় নতুন করে হামলা শুরুর পর আট লাখেরও বেশি মানুষ সেখান থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)।
সংস্থাটি জানায়, গতকাল থেকে রাফায় খাদ্য বিতরণ বন্ধ আছে। নিরাপত্তা ও খাবারের সরবরাহের অভাবে এই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে বলে তারা জানায়।
গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার ও নিরবচ্ছিন্ন হামলায় এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার ৫৬২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
Comments