গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়েই ছাড়বেন ট্রাম্প, বিপর্যয় নামবে বলে হামাসের হুঁশিয়ারি

মার আ লাগোয় ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার আ লাগোয় ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও গাজা দখল করার বিতর্কিত পরিকল্পনার প্রতি অঙ্গীকার প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে, হামাস বলেছে এ ধরনের উদ্যোগে নেমে আসবে বিপর্যয়।

আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

এবার ট্রাম্প এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, তিনি গাজা 'কিনে নিতে ও এর মালিকানা গ্রহণের' সংকল্প করেছেন।

যা বললেন ট্রাম্প

সুপারবৌলে ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
সুপারবৌলে ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য নির্ধারিত ব্যক্তিগত জেট এয়ার ফোর্স ওয়ানে বসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, গাজাকে একটি 'বড় আকারের আবাসন প্রকল্প' হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোর উচিত নতুন করে এ অঞ্চলের উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেওয়া।

'আর পুনর্নির্মাণের ক্ষেত্রে, আমরা এই দায়িত্ব মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশকে দিতে পারি। তারা এর অংশবিশেষ নিয়ে কাজ করবে। অন্যেরাও এতে অংশ নিতে পারে। তবে সব কিছুই আমাদের তত্ত্বাবধানে হতে হবে', যোগ করেন ট্রাম্প।

এয়ার ফোর্স ওয়ানে চেপে সুপার বৌলে অংশ নিতে নিউ অরলিন্স যাওয়ার পথে এ কথা বলেন ট্রাম্প। 

ট্রাম্প আরও বলেন, 'কিন্তু আমরা এর মালিকানা নিতে, এটি গ্রহণ করতে এবং হামাস যাতে সেখানে আর ফিরে আসতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। ওখানে (ফিলিস্তিনিদের) ফিরে আসার কোনো কারণ নেই। এটা (গাজা) পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে।'

ট্রাম্প দাবি করেন, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা আর গাজায় ফিরতে আগ্রহী নয়। তবে শুরু থেকেই ট্রাম্পের প্রস্তাবে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিরা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ আপত্তি জানিয়ে এসেছে।

গত মঙ্গলবার গাজার মালিকানা নেওয়ার বিস্ময়কর পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়ে বিশ্ববাসীকে হতভম্ব করে দেন ট্রাম্প। এমন কী, তার নিজের প্রশাসনেও অনেকে এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতেন না।

পাকা আবাসন ব্যবসায়ীর মতো মন্তব্য করেন তিনি, 'গাজাকে মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা বানাব।'

পরবর্তী দিনে তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা ওই প্রস্তাব থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দেন। তারা জানান, ফিলিস্তিনিদের সরানো হলেও এই উদ্যোগ সাময়িক হবে।

কিন্তু আবারও নিজের পরিকল্পনায় অটল থাকার কথা জানালেন ট্রাম্প।

গাজা দখল করতে মার্কিন সেনা পাঠানো হবে কী না, এ প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প জানান 'প্রয়োজন হলে তা করা হবে'।

তবে পরবর্তীতে তিনি জানান তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গাজায় কোনো মার্কিন সেনা পাঠানোর প্রয়োজন নেই।

গতকাল ট্রাম্প আরও বলেন, 'আমরা যদি তাদেরকে একটি নিরাপদ জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করে দেই, তাহলে সেটাই সবচেয়ে ভালো হবে। তাদের কাছে আপাতত কোনো বিকল্প নেই দেখে তারা গাজায় ফেরার কথা বলছেন। তাদের সামনে বিকল্প দেওয়া হলে তারা আর গাজায় ফিরতে চাইবে না।'

হামাসের বক্তব্য

হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য ইজ্জাত আল-রিশেক। ছবি: সংগৃহীত
হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য ইজ্জাত আল-রিশেক। ছবি: সংগৃহীত

রোববার ট্রাম্পের বক্তব্যের পর গাজার শাসক ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস আবারও ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে এবং জানায়, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের সর্বশেষ মন্তব্যগুলো 'অবাস্তব'।

হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য ইজ্জাত আল-রিশেক টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে জানান, 'গাজা কারও সম্পত্তি নয় যে এটা কেনা-বেচা যাবে। এটা আমাদের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ।'

'আবাসন ব্যবসায়ীর দৃষ্টিভঙ্গিতে ফিলিস্তিনের সমস্যাগুলো সমাধানের প্রচেষ্টা বিপর্যয় ডেকে আনবে', যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'ফিলিস্তিনি জনগণ তাদেরকে বাস্তুচ্যুত করার বা সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ভণ্ডুল করবে। গাজার মানুষই গাজার মালিক।'

ট্রাম্পের পরিকল্পনায় নেতানিয়াহুর প্রশংসা

তেল আবিবে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানাতে এক ইসরায়েলি ট্রাম্পের বেশ ধারণ করেন। তার হাতে নেন নেতানিয়াহুর পুতুল। ছবি: এএফপি
তেল আবিবে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানাতে এক ইসরায়েলি ট্রাম্পের বেশ ধারণ করেন। তার হাতে নেন নেতানিয়াহুর পুতুল। ছবি: এএফপি

এর আগে রোববার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের প্রস্তাবের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

তিনি একে 'বৈপ্লবিক' ও 'সৃজনশীল' বলে অভিহিত করেন।

ওয়াশিংটন থেকে ফেরার কয়েক ঘণ্টা পর মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন এই নেতা।

যা ভাবছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ

সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান। ছবি: রয়টার্স
সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান। ছবি: রয়টার্স

ইতোমধ্যে প্রতিবেশী দেশ মিশর ও জর্ডান ফিলিস্তিনিদের গ্রহণের আহ্বান নাকচ করেছে।

রোববার সৌদি আরব নেতানিয়াহুর প্রস্তাবে নিন্দা জানিয়েছে। ইসরায়েলি নেতা শুক্রবার মন্তব্য করেন, 'সৌদি আরবের অনেক খালি জায়গা আছে। তারা সেখানে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন করুক'।

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে, গাজায় ইসরায়েলের 'অপরাধ' থেকে 'নজর সরাতে' ইসরায়েলি নেতা এসব কথা বলছেন।

'ফিলিস্তিনি জনগণের নিজ ভূখণ্ডের অধিকার রয়েছে এবং তারা সেখানে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বা অভিবাসন প্রত্যাশী নয় যে সহিংস ইসরায়েলিরা চাইলেই তাদেরকে সেখান থেকে বহিষ্কার করতে পারবে', বিবৃতিতে আরও বলা হয়।

Comments