এজেন্ট ব্যাংকের ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৪১ শতাংশ

মূলত ঋণ গ্রহণ এবং সঞ্চয়ের সহজ প্রক্রিয়া ও তুলনামূলক কম সুদের হারের কারণে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
এজেন্ট ব্যাংকিং, ঋণ বিতরণ, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক,

চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্রের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে ৪১ দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়েছে। মূলত ঋণ গ্রহণ এবং সঞ্চয়ের সহজ প্রক্রিয়া ও তুলনামূলক কম সুদের হারের কারণে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সংক্রান্ত জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশের ১৫ হাজার ৮৩৫ এজেন্ট ১৬ হাজার ৪৮২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে, যা গত বছরের মার্চে ছিল ১১ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান ব্যাংক এশিয়ার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জিয়াউল এইচ মোল্লার মতে এজেন্ট ব্যাংকিং এ ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে ঋণ আবেদনের জন্য বিদ্যমান সহজ পদ্ধতি যা গ্রাহক-বান্ধব ও সময় এবং অর্থ সাশ্রয়ী।

মোহাম্মদ জিয়াউল এইচ মোল্লা, যিনি ব্যাংক এশিয়ার চ্যানেল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান ও চিফ অ্যান্টি মানিলন্ডারিং কমপ্লায়েন্স হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন, বলেন, 'এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্র থেকে ঋণ নিতে গ্রাহকদের বাড়ি থেকে দূরে ব্যাংকের শাখায় যেতে হয় না।'

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত ব্যাংকিং সেবার বিকল্প এই মাধ্যমটি সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ফলে এই বছরের মার্চ পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আমানত আগের বছরের চেয়ে ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়েছে।

২০২৪ সালের মার্চ শেষে ২ কোটি ২০ লাখ এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আমানতের পরিমাণ ৩৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালের মার্চে ছিল ৩১ হাজার ৬৪১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এসব অ্যাকাউন্টের প্রায় চার-পঞ্চমাংশ এর মালিক গ্রামাঞ্চলের মানুষ।

ব্যাংক এশিয়ার মোহাম্মদ জিয়াউল এইচ মোল্লা বলেন, 'মানুষ এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবহার করতে পছন্দ করে, কারণ তারা কেন্দ্রগুলোতে রাখা বায়োমেট্রিক মেশিনে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে নিজের টাকা তুলতে পারে।'

এছাড়া প্রত্যেকবার টাকা জমার দেয়ার পর তাদেরকে একটি রশিদ এবং খুদে বার্তা পাঠানো হয়। ফলে গ্রাহক সহজেই নিশ্চিত হতে পারেন তার অর্থ জমা হয়েছে কি না।

এদিকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯১৬ কোটি টাকার রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি এবং এর প্রায় ৯০ দশমিক ২২ শতাংশ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে গেছে।

জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেড়েছে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেমিট্যান্সের এই প্রবৃদ্ধি সরকারের দেওয়া আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনার ইতিবাচক ফল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিতে, যার পরিমাণ মোট রেমিট্যান্সের ৫২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশের শীর্ষ পাঁচটি ব্যাংক ৭৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্র চালু করেছে, যার মধ্যে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক পিএলসি ৬ হাজার ৫৭টি আউটলেট নিয়ে শীর্ষে আছে।

অন্যদিকে এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি  ব্যাংক এশিয়া পিএলসির, যা মোট এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের ২৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানতের ৩৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিতে, যা সব ব্যাংকের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণে শীর্ষে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি। এজেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করা ১৬ হাজার ৪৮২ কোটি ৫০ লাখ টাকার মধ্যে ৬২ দশমিক ০২ শতাংশ বিতরণ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।

এদিকে, এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্রের ঋণ-আমানতের অনুপাতও (গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওয়া আমানতের তুলনায় ঋণ বিতরণের হার) বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০২৪ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ঋণ-আমানতের অনুপাত ছিল মাত্র ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৪২ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত প্রান্তিকের তুলনায় ঋণ-আমানত অনুপাত বৃদ্ধির মানে, এজেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে বিনিয়োগ ধীরে ধীরে বাড়ছে।

তবে সেই অনুপাত এখনো কম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ২২টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করেছে।

কম ঋণ-আমানত অনুপাত ইঙ্গিত দেয়, এজেন্ট ব্যাংক ঋণ দেওয়ার চেয়ে আমানত সংগ্রহ করে ব্যাংকগুলোর উদ্দেশ্য পালনে বেশি ভূমিকা রাখছে।

আবার গ্রামাঞ্চলে ঋণ-আমানতের অনুপাত ছিল ৩৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অর্থাৎ, শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এখনো তাদের আমানতের বিপরীতে কম ঋণ সুবিধা পাচ্ছে।

তবে এজেন্ট ও কেন্দ্রের সংখ্যার দিক থেকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং কেন্দ্রের সংখ্যা ২১ হাজার ৬১৩টিতে পৌঁছেছে এবং এর চার-পঞ্চমাংশেরও বেশি গ্রামাঞ্চলে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এজেন্ট ও কেন্দ্রের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।

এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে প্রায় ৪৯ দশমিক ৭১ শতাংশ নারী গ্রাহকের, যারা অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে পুরুষ গ্রাহককে (৪৯.০৬ শতাংশ) টপকে গেছে।

অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ নারী গ্রাহক এবং ১ কোটি ৯ লাখ পুরুষ গ্রাহক।

চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত আমানতের ৫৭ দশমিক ৬১ শতাংশ পুরুষ গ্রাহকের এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে এবং ৩৫ দশমিক ৭১ শতাংশ নারীর অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারী আমানত কমে যাওয়ায় নারী ও পুরুষ গ্রাহকদের আমানতের পরিমাণের ব্যবধান বেড়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Exit polls: UK Labour Party set for landslide victory

As polling stations closed at 10:00pm (2100 GMT), the survey for UK broadcasters suggested centre-left Labour would win 410 seats in the 650-seat House of Commons, with the right-wing Tories managing only 131

2h ago