২০২৬ সালে অর্থনৈতিক সংকট আরও প্রকট হবে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, সিপিডিদ, জিডিপি, বাংলাদেশের অর্থনীতি,
ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত সভায় বক্তৃতা দিচ্ছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ছবি: সংগৃহীত

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ২০২৬ সালে অর্থনীতির সংকট আরও প্রকট হতে পারে, কারণ সরকারকে বৈদেশিক ঋণ ও স্থানীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

আজ মঙ্গলবার ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে সংগঠনটি আয়োজিত এক সভায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি জানান, এর আগে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন- ২০২৪ সালে দেশের অর্থনীতি সংকটে পড়বে এবং সরকারের উচ্চ ঋণ পরিশোধের কারণে তা হয়েছে।

'একইভাবে ২০২৬ সালে দেশ মারাত্মক সংকটের মুখোমুখি হবে, কারণ সরকার ইতোমধ্যে বিদেশি ঋণদাতা সংস্থা এবং স্থানীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে এবং বড় অঙ্কের ঋণ পরিশোধ শুরু করতে হবে।'

মোট ঋণ নেওয়া অর্থের মধ্যে কেবল সরকারি অংশ নয়, বেসরকারি খাতেরও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ রয়েছে, যা ডলারে পরিশোধ করতে হয়। তাছাড়া মোট ঋণের ২০ শতাংশ বৈদেশিক ঋণ এবং বৈদেশিক ঋণের দ্বিগুণেরও বেশি স্থানীয় ব্যাংক থেকে বা সরকার টাকা ছাপিয়ে নেওয়া।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, আগে বাংলাদেশ গর্ব করে বলতো যে, বাংলাদেশ কখনই সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়নি এবং এখন এই গর্বের সঙ্গে আপস করতে হয়েছে, কারণ বাংলাদেশ সময়মতো পেট্রোলিয়াম আমদানি বিল হিসাবে পাঁচ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে পারেনি।

এছাড়া ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ডলার সংকটের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যেমন মুনাফা নিয়ে যেতে পারছে না, তেমনি বাংলাদেশে কর্মরত অনেক বিদেশি এয়ারলাইন্সও ডলার সংকটের কারণে টিকিট বিক্রি থেকে তাদের আয়ের বেশিরভাগই ফেরত নিতে পারছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গণমাধ্যমে তথ্য আসত এবং সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হতো, সে কারণেই সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথ্য সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কিছু গোলমেলে বিষয় রয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ পূর্বপরিকল্পিত, যা সরকারের ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলনের সঙ্গে প্রধান কারণগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই, তবে এখনো এটি হচ্ছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, 'প্রত্যেক বছর ১৫-২০ শতাংশ করে বাজেটের আয়তন কমানো হয়। তার আবার ৭০-৮০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়। প্রকৃত বাজেটের আয়তন যে গত ১৫-২০ বছরে বাড়েনি এ কথা কি আপনারা কেউ বলেন?'

'এর সবচেয়ে বড় শিকার হয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কারণ হিসাব মেলানোর জন্য তাকে একটি অলৌকিক লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে দেওয়া হয়। সেই অলৌকিক লক্ষ্যমাত্রা তারা (পূরণ) করতেও পারে না। ৪০-৫০ কোটি টাকা ঘাটতি থাকে। ও বেচারাদের আরেক সমস্যা,' বলেন তিনি।

জিডিপির প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'জিডিপি (দেশের মোট দেশজ উৎপাদন) অনুমিতির ভেতরে খাদ আছে। যদি জিডিপির পরিমাণ বড় হয়, তাহলে এর অনুসঙ্গ হিসেবে দায়-দেনা জিডিপির অংশ হিসেবে কমে যায়। তাহলে এটা খুব ভালো দেখা যায়। আবার একইসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর আদায় জিডিপি অনুপাত হিসেবেও কমে যায়।'

ব্যাংকিং খাত নিয়ে তিনি বলেন, 'সুদের হার এবং ব্যাংক একীভূত করার কথা ও বিনিময় হারের এই যে সমস্যাগুলো হয়েছে, একদিকে এর বড় কারণ হলো নীতি সমন্বয়ের অভাব। আরেক দিকের বড় কারণ হলো এগুলোকে মোকাবিলা করার জন্য যে রাজনৈতিক শক্তি দরকার, সেই রাজনৈতিক শক্তির চেয়ে সুবিধা ভোগীদের সামাজিক-রাজনৈতিক শক্তি অনেক বেশি।'

Comments

The Daily Star  | English

Interim govt not taking action following white paper: Economists

The makers of the white paper criticised the government for increasing value-added tax

26m ago