নেতানিয়াহুকে বাইডেনের ফোন, আবারও রাফায় স্থল অভিযানের বিরোধিতা

জো বাইডেন ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: বাসস/কোলাজ
জো বাইডেন ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: বাসস/কোলাজ

গতকাল হামাস মধ্যস্থতাকারীদের দেওয়া যুদ্ধবিরতির খসড়া চুক্তি মেনে নিয়েছে বলে জানায়। তবে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এই চুক্তিতে ইসরায়েলের শর্ত মানা হয়নি দাবি করে আবারও রাফায় হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ফোন করে রাফায় অভিযানের বিরোধিতা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

আজ মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল।

হোয়াইট হাউজের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাইডেন ফোনকলে 'রাফায় অভিযান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার বিষয়টি আবারও পরিষ্কার করেছেন।'

উত্তর গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরে যেতে বলার পর সেখানকার হাজারো বাসিন্দা দক্ষিণের রাফায় আশ্রয় নেন। সেখানে এ মুহূর্তে ১০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি অবস্থান করছেন, যাদের বেশিরভাগই খোলা আকাশের নিচে তাঁবু খাটিয়ে বাস করছেন।

রাফায় স্থল অভিযান শুরুর আগে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদ অবস্থানে সরিয়ে নেওয়ার একটি গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বারবার ইসরায়েলকে তাগাদা দিলেও এখনো দেশটি এই অনুরোধ রাখেনি।

সোমবার হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কার্বি জানান, রাফার বেসামরিক মানুষ ঝুঁকিতে থাকবে এরকম কোন স্থল অভিযানকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে না। এর আগে পর্যন্ত হোয়াইট হাউজ বলছিল, রাফায় 'বড় ধরনের' অভিযানের বিরোধিতা করছে ওয়াশিংটন।

রাফাহ শহরে ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া মসজিদের সামনে এবারের রমজানের প্রথম জুম্মা পড়ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স
রাফাহ শহরে ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া মসজিদের সামনে এবারের রমজানের প্রথম জুম্মা পড়ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স

বিশ্লেষকদের মতে, এবার আরও কড়া ভাষায় হুশিয়ার ইসরায়েলকে হুশিয়ারি দিয়েছে ওয়াশিংটন।

বাইডেন প্রশাসন রাফা অভিযানের বিকল্প হিসেবে মিশর-গাজা সীমান্তে নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও সুনির্দিষ্টভাবে হামাসের নেতাদের বিরুদ্ধে হামলার প্রস্তাব দিয়েছে।

কিন্তু নেতানিয়াহু রাফা অভিযানকে অত্যাবশ্যক বলে দাবি করেছেন। তার মতে, হামাসকে নির্মূল করতে এই অভিযান জরুরি, কারণ রাফায় হামাসের অনেক যোদ্ধা লুকিয়ে আছেন।

নেতানিয়াহু আরও দাবি করেছেন, রাফাহ শহরে হামাসের চারটি ব্যাটেলিয়ন রয়েছে, যাদেরকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত বিজয় অর্জন হবে না।

জন কার্বি আরও জানান, ফোনকলে বাইডেন রাফাহ অভিযান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, গাজায় আটকে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের জীবনকে সুরক্ষিত করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে সম্মতি দেওয়া।

'আমরা জিম্মিদের মুক্ত করতে চাই। আমরা ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি চাই এবং মানবিক সহায়তা বাড়াতে চাই', যোগ করেন কার্বি।

রাফায় ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি গাড়ির ওপর থেকে পাথর সরাচ্ছে এক শিশু। ছবি: রয়টার্স
রাফায় ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি গাড়ির ওপর থেকে পাথর সরাচ্ছে এক শিশু। ছবি: রয়টার্স

তিনি বাইডেনের বরাত দিয়ে বলেন, চুক্তিতে সব পক্ষ সম্মত হলে তা হবে 'সবচেয়ে ভালো ফলাফল'।

গতকাল সোমবার হামাস চুক্তিতে সম্মতি দেওয়ার পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) রাফাহ পূর্ব মহল্লাগুলো থেকে সবাইকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এরপর বেশ কয়েক দফা বিমানহামলা চালায় আইডিএফ।

কার্বি জানান, সোমবার নেতানিয়াহুকে কল করার মূল কারণ হল সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি, রাফাহ অভিযান ও গাজায় প্রবেশের কেরেম শালোম ক্রসিং বন্ধ নিয়ে আলোচনা করা।

গত সপ্তাহান্তে এই ক্রসিং এর কাছে অবস্থিত সামরিক চৌকিতে হামাসের রকেট হামলায় চার আইডিএফ সেনা নিহত হয়। গাজায় মানবিক ত্রাণ প্রবেশের মূল পথ হল এই কেরেম শালোম ক্রসিং।

কার্বি জানান, বাইডেন-নেতানিয়াহু ৩০ মিনিট কথা বলেন। এ সময় নেতানিয়াহু অবিলম্বে কেরেম শালোম ক্রসিং আবারও খুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

রাফাহর একটি দাতব্য লঙ্গরখানা থেকে খাবার সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স
রাফাহর একটি দাতব্য লঙ্গরখানা থেকে খাবার সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স

নাম না প্রকাশের শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার অনুমোদিত একটি ৯০ দিনের আগ্রাসন পরিকল্পনা নিয়ে রাফায় হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। ওয়াশিংটন এই হামলা বন্ধের অঙ্গীকার করেছে।

তিনি রয়টার্সকে বলেন, 'হামাসের সঙ্গে সর্বশেষ আলোচনার বিষয়গুলো নেতানিয়াহু এবং যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা ভাল চোখে দেখছেন না।'

Comments

The Daily Star  | English

Can't afford another lost decade for education

Whenever the issue of education surfaces in Bangladesh, policymakers across the political spectrum tend to strike a familiar chord. "Education is our top priority," they harp

2h ago