মানুষের হাত-আঙুল কেটে মিল্টন সমাদ্দার পৈশাচিক আনন্দ পেত: ডিবি

মিল্টন সমাদ্দারকে আজ আরও ৪ দিনে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। ছবি: সংগৃহীত

চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার আশ্রয়কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দার মানুষের হাত-আঙুল কেটে ফেলে মিল্টন সমাদ্দার পৈশাচিক আনন্দ পেত বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

প্রতারণা ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে গ্রেপ্তার মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদের পর আজ রোববার দুপুরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ কথা জানান।

তিনি বলেন, 'মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রীর সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, তার স্বামীর অ্যাকাউন্টে এখনো এক কোটি ৮৫ লাখ টাকা আছে, এই টাকাগুলো তিনি কোথা থেকে পেতেন? তিনি বললেন যে, তিনি সরকারি চাকরি করেন। মিল্টনের কোথায় অ্যাকাউন্ট আছে কত টাকা আছে, ফাউন্ডেশন আছে, কোথাও তাকে সম্পৃক্ত করেনি।'

তিনি বলেন, 'তাকে আরও বলেছি যে, এতগুলো মানুষ, রোগী, বৃদ্ধ, প্যারালাইজড ওই আশ্রমে আছে, তাদের তো ডাক্তারের প্রয়োজন হয়। মিল্টন তো কোনোদিন তাদের ডাক্তারের কাছে নিত না। আপনি তো একজন নার্স, তাকে তো বলতে পারতেন। তিনি বলেছেন, তাকে বলেও কোনো কাজ হয়নি।'   

ডিবি প্রধান বলেন, 'মিল্টন সমাদ্দারকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। জিজ্ঞাসাবাদে ভয়াবহ সব তথ্য বের হয়ে আসছে। উজিরপুরে বাবাকে পিটিয়ে ঢাকায় এসে ওষুধের দোকান থেকে চুরি করে হঠাৎ করে বৃদ্ধাশ্রম দেয়। অসহায়, গরিব, শিশু, বৃদ্ধ, প্যারালাইজড, মানসিক প্রতিবন্ধীদের এক জায়গায় করে, তাদের দেখিয়ে ফেসবুকের ফলোয়ারদের কাছ থেকে টাকা আয় করে। ওই টাকা খরচ করতেন না।'

'অসহায় মানুষরা অসুস্থ হলে, তাদের চিকিৎসার প্রয়োজন হতো। হয়ত পচন ধরেছে, অপারেশন প্রয়োজন, সে হাত কেটে ফেলত, আঙুল কেটে ফেলত। ব্লেড দিয়েই কেটে ফেলত। এই কাটাছেঁড়ায় ওই লোকগুলো যে কষ্ট পেত, এতে মিল্টন সমাদ্দারের পৈশাচিক আনন্দ পেত। সে একরকম সাইকোপ্যাথ। সে কীভাবে মানবতার কথা বলে, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়,' যোগ করেন তিনি।

ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ আরও বলেন, 'মিল্টন স্বীকার করেছেন যে, তার অপারেশন থিয়েটারে ব্লেড আছে, ছুরি আছে। এগুলো দিয়েই তিনি এসব করেন। আমরা সেগুলো উদ্ধার করেছি। টর্চার সেলে তিনি অসহায় মানুষদের পেটাতেন, তাদের পিটিয়ে নিস্তেজ করে ফেলতেন। এই মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষগুলো হইচই করলেই, তিনি তাদের পেটাতেন।'

'যে মানুষগুলো কোনো অসহায় বা কোনো শিশুকে তার কাছে রেখে আসতেন, পরে যদি আবার জানতে চাইতেন যে তারা কেমন আছে, তাদের উল্টো টর্চার সেলে নিয়ে পেটানো হতো,' বলেন তিনি। 

আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনায় অনিয়ম ও বিভিন্ন অপরাধ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত বুধবার রাজধানীর মিরপুর থেকে মিল্টনকে আটক করে ডিবি পুলিশ।

সিটি করপোরেশনের ভুয়া সিল দিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি করে অননুমোদিতভাবে লাশ দাফনের অভিযোগ এনে মিল্টনসহ দুইজনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার মিরপুর মডেল থানায় মামলাটি করেন ডিবির উপপরিদর্শক কামাল পাশা।

এছাড়া, তার বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা হয়েছে। মানবপাচারের অভিযোগে এম রাকিব ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে মতিউর রহমান মল্লিক মামলা দুটি করেন।

প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় মিল্টনকে তিন দিনের রিমান্ড শেষে আজ আদালতে হাজির করা হয়।

আদালত মানবপাচারের অভিযোগে করা মামলায় তাকে আজ ৪ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন। 

Comments

The Daily Star  | English

India, Pakistan agree to ceasefire

Announces Trump after rivals launch multiple attacks on key military installations; Islamabad, New Delhi confirm truce

3h ago