মিল্টন সমাদ্দার ‘ভয়ংকর সাইকোপ্যাথ’—জানতে লাগল ১০ বছর!

মিল্টন সমাদ্দার। ছবি: সংগৃহীত

গত কয়েকদিন ধরে টক অব দ্য কান্ট্রি মিল্টন সমাদ্দার। তার বহু রকমের কাহিনিতে সয়লাব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, এমনকি গণমাধ্যমও। গত দুইদিনের গণমাধ্যমের নিউজের সূত্র গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

দৈনিক কালবেলা মিল্টন সমাদ্দারকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ডিবি তাকে গ্রেপ্তার করেছে। ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে মিল্টন সমাদ্দারের লোমহর্ষক কর্মকাণ্ডের তথ্য সরবরাহ করছেন। মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রীকেও ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

মিল্টন সমাদ্দার ২০১৪ সালে মিরপুরের পাইকপাড়ায় গড়ে তোলেন 'চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার'। সাভারেও তার আরেকটি আশ্রয়কেন্দ্র আছে। ভবঘুরে, পঙ্গু, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে আশ্রয় দিতেন।

গণমাধ্যমের সংবাদে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মোটাদাগে যে অভিযোগগুলো এসেছে:

ক. আর্থিক হিসাবে অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি। মানুষের থেকে পাওয়া অনুদানের অর্থ তিনি আত্মসাৎ করেছেন। 'বিপুল পরিমাণ' টাকা 'কোটি কোটি' টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন—সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এভাবে।

খ. তার সেন্টারে গত ১০ বছরে প্রায় ৯০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮৩৫ জনের দাফন কোথায় করা হয়েছে, কীভাবে দাফন হয়েছে তার হিসাব নেই। নিজে মৃত্যু সনদ ইস্যু করতেন।

গ. এসব মানুষের কিডনি ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিত্তবানদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।

ঘ. তার গড়া আশ্রয়কেন্দ্রে অপারেশন থিয়েটার আছে।

ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ প্রেস কনফারেন্স করে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো 'ভয়ংকর' উল্লেখ করে বলেছেন:

ঙ. মিল্টন সমাদ্দার ভয়ংকর সাইকোপ্যাথ। অসুস্থ আশ্রিতদের ছুরি-ব্লেড দিয়ে নিজেই হাত-পা, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে ফেলতেন। রক্ত দেখে উল্লাস করতেন। ডাক্তারের কাছে নিতেন না।

চ. তার আশ্রয়কেন্দ্রে ৫০০-৭০০ মানুষ আছে বলে দাবি করলেও বাস্তবে আছে ৩০-৪০ জন।

ছ. এত সংখ্যক আশ্রিতের তথ্য দিয়ে ভিডিও তৈরি করে অর্থ সংগ্রহ করতেন। তার ফেসবুক পেজে ফলোয়ারের সংখ্যা এক কোটি ৬০ লাখ। তার ব্যাংক হিসাব ১০-১২টি। তার নিজের অ্যাকাউন্টে এখনো এক কোটি ৮৫ লাখ টাকা আছে।

ঝ. লাশ দাফনের হিসাবে গড়মিল আছে। লাশ দাফন করতেন রাতের অন্ধকারে। ডাক্তারের নাম জালিয়াতি করে নিজেই মৃত্যু সনদ তৈরি করতেন।

ঞ. অসুস্থ মানসিক ভারসাম্যহীনদের রাতে নিজেই লাঠি দিয়ে পেটাতেন। তার টর্চার সেল ছিল। আশেপাশের মানুষ প্রতিরাতে চিৎকার শুনতে পেতেন।

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলোর মধ্যে 'কিডনি ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ' বিক্রি বাণিজ্যের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক ডাক্তার। কিডনি ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য অত্যন্ত দক্ষ ডাক্তার-নার্স-টেকনিশিয়ান এবং আধুনিক অপারেশন থিয়েটার অপরিহার্য, যা মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রয়কেন্দ্রে নেই। ফলে এটা ছাড়াও মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে আসা অন্যান্য অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি প্রশ্ন:

১. মিল্টন সমাদ্দার 'ভয়ংকর সাইকোপ্যাথ' এই তথ্য জানতে ১০ বছর সময় লাগল কেন? রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, কোনো গোয়েন্দা সংস্থা ১০ বছরেও কিছু জানতে পারল না?

২. তার আশ্রয়কেন্দ্র থেকে, টর্চার সেল থেকে প্রতি রাতে আসা কান্নার আওয়াজ এলাকার কোনো মানুষকে বিচলিত করল না? তারা কেউ পুলিশকে জানালেন না? কোনো পুলিশের কানে কোনোদিন সেই কান্নার আওয়াজ পৌঁছাল না?

৩. মিল্টন সমাদ্দার ডোনেশনের অনেক টাকা নিশ্চয়ই নগদে পেয়েছেন। কিন্তু তারচেয়েও বেশি পেয়েছেন বিকাশে, ব্যাংকিং চ্যানেলে। বিশেষ করে বিদেশ থেকে বহু টাকা এসেছে। ফেসবুকে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালিয়ে টাকা সংগ্রহ করেছেন? ১০ বছরেও রাষ্ট্রের কোনো সংস্থার সন্দেহ হলো না? ফেসবুক-ইউটিউব কত সংস্থা না মনিটর করেন বলে শোনা যায়। আর্থিক খাত নাকি প্রতিনিয়ত মনিটরিং হয়। তাদের কেউ কিছু জানল না?

৪. এই যে না জানা, সেটা কি মিল্টন সমাদ্দারের দক্ষতা-চতুরতা, না যাদের জানার কথা তাদের অক্ষমতা-অদক্ষতা?

Comments

The Daily Star  | English
Vehicle sales decline Bangladesh

Vehicle sales plunged in 2024

This marked the steepest decline since the Covid-19 pandemic, when roughly 3.8 lakh vehicles were registered with the BRTA

13h ago