গ্রাম আলোকিত করা সৌরবিদ্যুতের কদর কমেছে

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, সৌরবিদ্যুৎ, সোলার হোম সিস্টেম, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, ইডকল,
ফাইল ফটো

এক সময় বাংলাদেশের গ্রামের মানুষের ভরসা ছিল সৌরবিদ্যুৎ। কিন্তু জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ায় সৌরবিদ্যুতের জৌলুস হারাচ্ছে। কার্যত সৌর শক্তির প্রবৃদ্ধি একপ্রকার শেষ হয়ে গেছে। গত দুই বছর ধরে সোলার হোম সিস্টেম (এসএইচএস) ব্যবহারের অনুপাত কমছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে জনসংখ্যার প্রায় ২ দশমিক ২৪ শতাংশ সোলার হোম সিস্টেম বা সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করত। তবে, ২০২৩ সালে এই অনুপাত কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৮১ শতাংশে।

এই তথ্যে উঠে এসেছে, ২০০৩ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার ধারাবাহিকভাবে বেড়েছিল, কিন্তু এখন আর বাড়ছে না। বর্তমানে দেশের ৬০ লাখ বাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ আছে, এই সংখ্যা আর বাড়ার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ, দেশের মানুষ ক্রমবর্ধমানভাবে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।

তাই এখন সোলার হোম সিস্টেমের ব্যবহার হয়তো ভৌগলিকভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত এলাকাতে দেখা যাবে, বিশেষ করে চরাঞ্চলে। কারণ এই অঞ্চলগুলোকে গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করা এখনো চ্যালেঞ্জিং।

টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, 'গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সহজলভ্য হওয়ায় সৌরবিদ্যুতের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।'

তিনি মন্তব্য করেন, এক সময় জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ কম ছিল এবং জনসংখ্যার একটি বড় অংশ কেরোসিন বাতির ওপর নির্ভরশীল ছিল। তাই এই সহস্রাব্দের শুরুতে বাংলাদেশ অফ-গ্রিড এলাকায় সোলার হোম সিস্টেম তথা সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার শুরু করে।

২০০৯ সালে মাত্র ৪৭ শতাংশ পরিবার জাতীয় গ্রিডে যুক্ত ছিল।

ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০০৩ সালে সোলার হোম সিস্টেম ব্যবহারের প্রচার শুরু করে। এর ১০ বছর পর ২০১৩ সালে ৮ লাখ ৬১ হাজারের বেশি সোলার হোম সিস্টেম বসানো হয়েছিল। এরপর থেকেই সৌরবিদ্যুৎ গতি হারাতে থাকে।

২০২১ সালের সোলার হোম সিস্টেম বিষয়ক বিশ্বব্যাংকের একটি সমীক্ষা প্রতিবেদনে এর কারণ হিসেবে উল্লেখন করা হয়েছে, ২০১৫ সাল থেকে গ্রিডের দ্রুত সম্প্রসারণ এবং সরকারের সামাজিক সুরক্ষা বলয় প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে সোলার বিতরণ করা।

২০১৫ সালের শুরুতে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) সংযোগ ছিল ৯৪ লাখ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৫৬ লাখে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে আরও দেখা যায়, ২০২৩ সালে জাতীয় গ্রিডের আওতায় থাকা জনসংখ্যার অনুপাত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭ দশমিক ৫৪ শতাংশে, যা দুই বছর আগে ছিল ৯৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এই অগ্রগতিতে সৌর বিদ্যুতের জনপ্রিয়তা কমেছে।

উদাহরণ হিসেবে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ঘুগুমারী গ্রামের বাসিন্দাদের কথাই ধরা যাক।

স্থানীয় বাসিন্দা মহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চার বছর আগেও এই প্রত্যন্ত জনপদের বাসিন্দারা সোলার ব্যবহার করতেন। কিন্তু পরে গ্রামবাসী বিদ্যুতের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে।'

তবে তার বাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে উল্লেখ করে ৩০ বছর বয়সী মহিদুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের এলাকায় এখনো গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ আসেনি। যদি বিদ্যুৎ সংযোগ পাই, তাহলে আমরাও ব্যবহার করব।'

বর্তমানে বাংলাদেশের সোলার হোম সিস্টেমগুলো ২৬৩ দশমিক ৭৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।

স্রেডার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, '১৮-২০ বছর আগে বসানো অনেক সোলার সিস্টেমের জীবনকাল শেষের দিকে এবং নতুন সোলার সিস্টেম খুব ধীর গতিতে বসানো হচ্ছে।'

জানতে চাইলে স্রেডার চেয়ারম্যান মুনিরা সুলতানা বলেন, 'বিদ্যুতায়নের কারণে সৌরবিদ্যুতের প্রতি মানুষের আগ্রহ হারিয়েছে।'

ইডকলের ডেপুটি চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ও চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার এস এম মনিরুল ইসলাম বলেন, ২০১৭ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সৌরবিদ্যুৎ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।

সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার সম্প্রসারণে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ইডকল। কিন্তু জাতীয় গ্রিড সম্প্রসারণের পর অনেক গ্রাহকের কিস্তি বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৫৫০ কোটি টাকা ছাড়া বাকি টাকা আদায় করা সম্ভব হয়েছে।

ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারে উৎসাহিত করতে সহযোগী সংস্থা, বিশেষ করে এনজিওগুলোর মাধ্যমে ভর্তুকিযুক্ত ঋণ প্রদান করে।

এস এম মনিরুল ইসলাম বলেন, 'তবে আমরা যদি সৌর বিদ্যুৎ প্রোগ্রাম থেকে আমাদের সুদ আয় ও সামগ্রিক সুবিধা বিবেচনা করি, তাহলে এটি একটি বিরাট সাফল্য।'

(সংক্ষেপিত: পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন Solar power that once lit up rural homes is dimming লিংকে)

Comments

The Daily Star  | English
explanations sought from banks for unusual USD rates

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

3h ago