পাকিস্তানে ‘সৌর বিপ্লব’

সৌরবিদ্যুৎ
পাকিস্তানে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার এতই বেড়েছে যে অনেক বিশ্লেষকের দৃষ্টিতে তা পৃথিবীর দ্রুত বর্ধনশীল ‘সৌর বিপ্লবের’ অন্যতম। ছবি: ডয়েচে ভেলে

প্রচণ্ড গরমে টানা ২৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় তীব্র তাপপ্রবাহে অসুস্থ হয়ে পড়েন শাফকাত হোসেনের মা। নিজের ঘরে মাকে মৃত্যুশয্যায় দেখে শাফকাত সিদ্ধান্ত নেন—আর দেরি করার সুযোগ নেই। সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করা এখনই দরকার।

গত ২৭ নভেম্বর জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলেকে শাফকাত জানান, পাকিস্তানে সৌরবিদ্যুতের বিকল্প নেই। বলেন, 'যখন বিদ্যুৎই নেই তখন আবার কিসের এসি? পাখা ঘুরছে না। ফ্রিজ থেকে একটু ঠান্ডা পানি নিয়ে খাবো, সেই সুযোগও নেই।'

মা-বাবা, স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে ইসলামাবাদে থাকেন শাফকাত। অসহনীয় গরমে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় মায়ের অসুস্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি ছোটেন সোলার প্যানেলের দোকানে। এক সহকর্মীর পরামর্শে কিনে নেন চীন থেকে আসা কম দামের সোলার প্যানেল।

এখন শাফকাতকে বিদ্যুৎ নিয়ে ভাবতে হয় না। বিদ্যুৎ বিল কমেছে ৮০ শতাংশ। এখন নিজেকে অনেকটা নিরাপদ ভাবছেন তিনি।

সংবাদ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পাকিস্তান খুবই অল্প সময়ে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারে এত দ্রুত এগিয়েছে যে তা অনেকের কাছে বিস্ময়কর। তবে উল্টো চিত্রও আছে। গ্রিড লাইনের বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর আর্থিক ক্ষতি আরও বাড়ছে।

সৌরবিদ্যুৎ
গত চার দশকে পাকিস্তানে সবচেয়ে দামি সোলার প্যানেল এখন সবচেয়ে সস্তা হয়ে উঠেছে। ছবি: ডয়েচে ভেলে

পাকিস্তানে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার এতই বেড়েছে যে অনেক বিশ্লেষকের দৃষ্টিতে তা পৃথিবীর দ্রুত বর্ধনশীল 'সৌর বিপ্লবের' অন্যতম।

মূলত চীনের সস্তা প্রযুক্তির কল্যাণে এমনটি সম্ভব হয়েছে। চলতি বছর পাকিস্তান সৌরবিদ্যুৎ পেতে যাচ্ছে প্রায় ১৭ গিগাওয়াট। এটি দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের তিনভাগের একভাগের বেশি।

যুক্তরাজ্যের জ্বালানি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এমবারের বিশেষজ্ঞ ডেভ জোসন গণমাধ্যমটিকে বলেন, 'সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে এমন প্রবৃদ্ধি এত অল্প সময়ে পৃথিবীর আর কোথাও ঘটেনি।'

নিজের অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে তিনি জানান, সৌরবিদ্যুতের এই জয়জয়কার পাকিস্তানকে বিশ্বমঞ্চে এক নতুন উচ্চতায় তুলে এনেছে। এমনকি, এই খাতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও জার্মানির মতো উন্নত অর্থনীতির দেশকেও ছাড়িয়ে গেছে দক্ষিণ এশিয়ার ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশটি।

এখন পাকিস্তানজুড়ে ঘরবাড়ি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও কারখানার ছাদে সৌর প্যানেলের সমারোহ। জীবাশ্ম জ্বালানির দাম ও অপ্রতুলতার কারণে সবাই সৌরবিদ্যুতের দিকে ঝুঁকছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো একদিকে যেমন জনগণের চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, অন্যদিকে, সেই বিদ্যুতের দামও আকাশ ছোঁয়া। এ ছাড়াও, আছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা।

পাকিস্তানের পাওয়ার গ্রিডের অবস্থাও খুবই ভঙ্গুর। কোটি মানুষের বিদ্যুৎ পাওয়া অনিশ্চিত। বছর বছর বিদ্যুতের দাম বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের কারণে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ পেতে পাকিস্তানকে মানতে হচ্ছে বিদ্যুতে সরকারি ভর্তুকি কমানোর শর্ত।

সৌরবিদ্যুৎ
পাকিস্তান খুবই অল্প সময়ে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারে এত দ্রুত এগিয়েছে যে তা অনেকের কাছে বিস্ময়কর। ছবি: ডয়েচে ভেলে

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া?

পাকিস্তান ২০৩০ সালের মধ্যে সারাদেশে ৬০ শতাংশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা ভাবছে। তবে এর জন্য কম মূল্য দিতে হচ্ছে না।

দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ অন্তত দিনের বেলায় বিদ্যুৎ পেতে সোলার প্যানেলের দিকে ঝুঁকে পড়ায় জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুতের চাহিদা হঠাৎ কমে গেছে। ক্ষতি পোষাতে বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুতের দাম। উৎপাদনকেন্দ্রগুলো ঠিকঠাক বুঝতে পারছে না যে কখন কী পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন।

এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পাকিস্তান সরকার সোলার প্যানেল বিক্রির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দেবে সেই সুযোগও নেই বলে মনে করেন ডেভ জোসন।

'সৌর বিপ্লব'

পাকিস্তানে 'সৌর বিপ্লব' সম্ভব হয়েছে চীনের সহজলভ্য প্রযুক্তির কল্যাণে। গত ১৫ বছরে ইসলামাবাদ সোলার প্যানেলের দাম কমিয়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ। বিশ্বের শীর্ষ সোলার প্যানেল উৎপাদক চীন প্রতিবেশী দেশটিতে বেশ সস্তায় প্যানেল রপ্তানি করছে।

গত চার দশকে পাকিস্তানে সবচেয়ে দামি সোলার প্যানেল এখন সবচেয়ে সস্তা হয়ে উঠেছে।

তবে চীনের সস্তা প্রযুক্তির কারণে সৌর বিপ্লবের দেশের তালিকায় পাকিস্তানই একমাত্র দেশ নয়। চলতি বছর এই তালিকায় উঠে এসেছে সৌদি আরব, ফিলিপাইন, আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওমান।

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

6h ago