আর কত ধুঁকবে শেয়ারবাজার?

‘বড় মূলধনের ব্লু-চিপ কোম্পানিগুলোর আয় আশাব্যঞ্জক না হওয়ায় অনেক বিনিয়োগকারী ভয় পেয়ে গেছেন।’
শেয়ারবাজার
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

টানা আট দিন পর আজ বুধবার সকালে ঢাকার শেয়ারবাজারে দরপতন থামতে দেখা গেল। তবে তা কতটাই বা আশা জাগাতে পারবে?

চলমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও করপোরেট আয় হতাশাজনকভাবে কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ায় গত আট দিন বাজারে দরপতন দেখতে হয়েছে।

গতকাল দেশের প্রধান পুঁজিবাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮৪ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৪২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছিল পাঁচ হাজার ৮১৪ পয়েন্টে। এই পতন ছিল ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

আজ সকাল পৌনে ১১টায় ২৭২ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছিল এবং কমেছিল ৭১টির।

সেই সময়ের মধ্যে লেনদেন হয়েছিল ১১৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

অথচ গত আট দিনে সূচকটি কমে ৩৫২ পয়েন্ট বা পাঁচ দশমিক সাত শতাংশ। গত ২৫ কার্যদিবসে শেয়ারের দাম কমে ৬১০ পয়েন্ট বা নয় দশমিক চার শতাংশ।

অনেকের মতে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক শেয়ারের দাম ৬৪ হাজার ২০১ কোটি টাকা বা আট দশমিক ৫৩ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে।

ইউসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বড় মূলধনের ব্লু-চিপ কোম্পানিগুলোর আয় আশাব্যঞ্জক না হওয়ায় অনেক বিনিয়োগকারী ভয় পেয়ে গেছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মুনাফা তাদের প্রত্যাশার তুলনায় খারাপ ছিল। এ পরিস্থিতি নাও থাকতে পারে। কারণ তাদের যে পরিমাণ নগদ টাকা আছে তা থেকে তারা ভালো সুদ আয় পাবেন। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো আগামীতে ভালো করবে।'

ব্যাংকে আমানতের সুদের হার বাড়ায় মানুষ ব্যাংকে টাকা জমানোর পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়াচ্ছে। ট্রেজারি বন্ডের বিপরীতে বেশি সুদ যাওয়ায় অনেকে সেখানে বিনিয়োগ করছেন। ফলে শেয়ারবাজারে মানুষের আগ্রহ কমছে।

ফ্লোর প্রাইসের কারণে ১৮ মাসেরও বেশি সময় বেশিরভাগ শেয়ারের কেনাবেচা বন্ধ ছিল। গত জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া শুরু করলে শেয়ার বিক্রির সুযোগ হয়। এতে অনেক দিন ধরে যারা টাকার জন্য শেয়ার বিক্রির অপেক্ষায় ছিলেন, তারাও শেয়ার বিক্রি করছেন।

অপর একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অনেকের নগদ টাকার প্রয়োজন। অথচ পুঁজিবাজারে তাদের শেয়ার প্রায় দুই বছর আটকে ছিল। তারা এখন সেসব বিক্রি করতে চাচ্ছেন।'

রপ্তানি ও রেমিট্যান্স থেকে আয় সম্প্রতি কিছুটা বাড়লেও বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিতে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ইতিবাচক নয়। রিজার্ভ এখনো স্বাভাবিক পর্যায়ে আসেনি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

সেই কর্মকর্তা মনে করেন, ডলারের বিপরীতে টাকা আরও দুর্বল হতে পারে এমন আশঙ্কায় বিদেশিরাও শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।

ডলারের বিপরীতে গত দুই বছরে টাকার দাম কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ এবং ২০২১ সালের আগস্ট থেকে রিজার্ভ অর্ধেকে নেমে এসেছে।

'গত দুই বছরে বড় কোম্পানিগুলোর শেয়ার খুব কমই হাত বদল হয়েছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর গত কয়েকদিনে বড় মূলধনের কোম্পানির শেয়ারের ব্যাপক দরপতন হয়েছে।'

তার মতে, 'দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজারে পতনের ফলে বেশিরভাগ শেয়ার লাভজনক হয়ে উঠছে। এখনই বিনিয়োগ করা উচিত।'

গতকাল শরীয়াহভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সূচক ডিএসইএস ১৭ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৪২ শতাংশ কমে এক হাজার ২৬৮ পয়েন্ট হয়। ব্লু-চিপ শেয়ার নিয়ে গঠিত ডিএস৩০ সূচক ২২ পয়েন্ট বা এক দশমিক ১০ শতাংশ কমে দিন শেষে হয় দুই ২০ পয়েন্ট।

লেনদেন ৪৮৬ কোটি টাকা থেকে নেমে আসে ৪৬৫ কোটি টাকায়। লেনদেন হয় ৪১টির, কমে ৩১৯টির ও অপরিবর্তিত থাকে ৩৬ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার।

যদিও ভালো শেয়ারগুলোর সূচক কমেছে এবং নিম্নমানের শেয়ারগুলো লাভের তালিকায় ছিল। সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার সাত শতাংশ বেড়ে তালিকার শীর্ষে ছিল। আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের পাঁচ শতাংশ ও জুট স্পিনার্স সাড়ে চার শতাংশ বেড়েছে।

গতকাল চট্টগ্রাম পুঁজিবাজারের সূচকও কমেছে। বন্দর নগরীর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২৭৫ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৬২ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৬৫৩ পয়েন্টে।

কমিউনিটি ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শিবলী আমরান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বেড়ে যাওয়ায় সামষ্টিক অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক ইতিবাচক।'

ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স ৩৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২১৬ কোটি ডলার। গত আট মাসের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ। সেসময় রপ্তানি ১২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫১৮ কোটি ডলার।

শিবলী আমরান বলেন, 'খোলাবাজারে এখন ডলারের দাম ১২০ টাকার কাছাকাছি। একে স্থিতিশীল বলা যায়। তাই পুঁজিবাজার শিগগির ঘুরে দাঁড়াতে পারে।'

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন জানায়, সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোর উন্নতি হওয়ায় বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।

৩০টি বড় ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভার্চুয়াল বৈঠকের পর এই বিবৃতি দেওয়া হলো।

এতে আরও বলা হয়—যেহেতু ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয়েছে, তাই শেয়ারের দাম কমানো স্বাভাবিক।

এত সব বিশ্লেষণ সত্ত্বেও প্রশ্ন জাগে—আর কত ধুঁকবে শেয়ারবাজার।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi-Americans eager to help build new Bangladesh

July uprising and some thoughts of Bangladeshi-Americans

NRBs gathered in New Jersey showed eagerness to assist in the journey of the new Bangladesh forward.

3h ago