গাজার এক চতুর্থাংশ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে: জাতিসংঘ

দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা খাবারের জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়েছেন। ছবি: রয়টার্স (২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪)
দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা খাবারের জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়েছেন। ছবি: রয়টার্স (২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪)

জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে সংস্থাটির এক জ্যেষ্ঠ ত্রাণ কর্মকর্তা জানান, গাজার অন্তত পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার বা মোট জনগোষ্ঠীর এক চতুর্থাংশ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন। এই কর্মকর্তা হুশিয়ারি দেন, জরুরি উদ্যোগ না নেওয়া হলে গাজার সব এলাকায় বড় আকারে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়বে।

গতকাল মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

জাতিসংঘের মানবিক উদ্যোগ সমন্বয় কার্যালয়ের সমন্বয় পরিচালক রমেশ রাজাসিংঘাম আরও বলেন, 'সহিংসতা অব্যাহত থাকলে (এই সমস্যার সমাধানে) তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দক্ষিণ গাজার জনবহুল এলাকাগুলোতে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ কারণে আমরা আবারও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছি।'

দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শিশুরা  একটি দাতব্য লঙ্গরখানা থেকে খাবার সংগ্রহ করছে। ফাইল ছবি: রয়টার্স
দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শিশুরা একটি দাতব্য লঙ্গরখানা থেকে খাবার সংগ্রহ করছে। ফাইল ছবি: রয়টার্স

তিনি নিরাপত্তা কাউন্সিলকে আরও জানান, গাজার দুই বছরের কমবয়সী প্রতি ছয় শিশুর একজন অপুষ্টিতে ভুগছে এবং মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সার্বিকভাবে, গাজার ২৩ লাখ ফিলিস্তিনিদের সবাই প্রয়োজনের তুলনায় 'খুবই সামান্য' খাবার খেয়ে বেঁচে আছেন, যা তারা ত্রাণ হিসেবে পান।

রাজাসিংঘাম জানান, জাতিসংঘ ও অন্যান্য ত্রাণ সংস্থাদের 'গাজায় ন্যুনতম ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতেও চূড়ান্ত পর্যায়ের বাধাবিপত্তির মুখে পড়তে হয়।' এ ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আছে সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখা, চলাচল ও যোগাযোগের ওপর নিষেধাজ্ঞা, দীর্ঘ ও সময়সাপেক্ষ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, অবিস্ফোরিত মাইন ও অন্যান্য বিস্ফোরক এবং গোলযোগ।

অপরদিকে জাতিসংঘে ইসরায়েলের উপ-রাষ্ট্রদূত জনাথান মিলার আশ্বাস দিয়েছেন, ইসরায়েল গাজার মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি জানান, কী পরিমাণ ত্রাণ কত দ্রুত গাজায় পৌঁছাবে, তা জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার সক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল।

মিলার নিরাপত্তা কাউন্সিলকে বলেন, 'ইসরায়েল বিষয়টি তাদের নীতিমালায় স্পষ্ট করেছে। গাজার বেসামরিক জনগোষ্ঠীর কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কোনো সর্বোচ্চ সীমা নেই।'

রাফাহ অঞ্চলে এয়ারড্রপ করে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
রাফাহ অঞ্চলে এয়ারড্রপ করে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৫৩ জন মানুষ। জিম্মিদের মধ্যে ১৩০ জন এখনো গাজায় আছেন এবং ৩১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

সেদিন থেকে গত প্রায় চার মাসে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক নির্বিচার হামলায় প্রায় ৩০ হাজারের মতো মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শিশুরা জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়েছেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স
দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শিশুরা জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়েছেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স

জাতিসংঘে গায়ানার রাষ্ট্রদূত ক্যারোলিন রড্রিগেস-বারকেট ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা কাউন্সিলে বলেন, 'যুদ্ধ-কৌশল হিসেবে মানুষকে ক্ষুধার্ত রাখা একটি অবৈধ কাজ এবং যারা গাজার জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এই অস্ত্র প্রয়োগ করছে, গায়ানা তাদের প্রতি নিন্দা জানায়।'

জাতিসংঘে আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত আমার বেনজামা বলেন, '(এই যুদ্ধ) ফিলিস্তিনি বেসামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সমষ্টিগত শাস্তি। আমরা চুপ থেকে (ইসরায়েলের হাতে) ফিলিস্তিনি জনগণকে অনাহারে রাখা ও হত্যা করার লাইসেন্স তুলে দিয়েছি।'

Comments

The Daily Star  | English

ICT investigators submit report against Hasina, 2 others

The charges stem from the violent crackdown during the July 2024 mass uprising

58m ago